ঐতিহাসিক সৌন্দর্যে মোড়া: পৃথিবীর সেরা দুর্গগুলি!

বিশ্বের সেরা কিছু সুন্দর দুর্গ, যা আজও আকর্ষণ করে পর্যটকদের

দুর্গ! এই শব্দটা শুনলেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে এক বিশাল পাথরের কাঠামো, যা অতীতের গৌরবময় ইতিহাসকে ধারণ করে আছে।

যুদ্ধের গল্প, রাজার শাসন, আর নানারকম রহস্য – দুর্গ যেন এক একটি জীবন্ত ক্যানভাস, যেখানে সময়ের নানা রঙ মিশে আছে।

সারা বিশ্বজুড়ে এমন অনেক দুর্গ রয়েছে, যা আজও পর্যটকদের কাছে এক বিশেষ আকর্ষণ।

আজকের লেখায় আমরা তেমনই কিছু মনোমুগ্ধকর দুর্গের গল্প শোনাবো, যেগুলি শুধু স্থাপত্যের দিক থেকেই অসাধারণ নয়, বরং ইতিহাসের সাক্ষী হিসেবেও গুরুত্বপূর্ণ।

জাপানের “হিমেজি ক্যাসেল”:

জাপানের ওসাকা ও কোবের কাছে অবস্থিত হিমেজি দুর্গ, যা “হোয়াইট হেরন ক্যাসেল” নামেও পরিচিত।

সাদা রঙের এই দুর্গটি দেখলে যেন মনে হয় আকাশে উড়তে থাকা কোনো পাখির দল।

সপ্তদশ শতকে নির্মিত এই দুর্গটি জাপানের জাতীয় সম্পদ এবং বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে স্বীকৃত।

গ্রিসের “প্যালেস অফ দ্য গ্র্যান্ড মাস্টার অফ দ্য নাইটস অফ রোডস”:

এই দুর্গটি রোডস দ্বীপে অবস্থিত।

মধ্যযুগীয় স্থাপত্যের এক দারুণ উদাহরণ এটি।

একসময় এটি সেন্ট জন-এর নাইটদের প্রধান কার্যালয় ছিল।

পরে ইতালীয়রা যখন এই দ্বীপটি দখল করে, তখন মুসোলিনি এটিকে অবকাশ যাপনের জন্য ব্যবহার করতেন।

বর্তমানে এখানে প্রাচীন গ্রিক এবং খ্রিস্টীয় যুগের বিভিন্ন প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন দেখা যায়।

জার্মানির “নিউশভ্যানস্টাইন ক্যাসেল”:

জার্মানীর এই দুর্গটি দেখতে এতটাই সুন্দর যে, অনেকেই একে জার্মান দুর্গগুলোর মধ্যে সেরা মনে করেন।

এটি তৈরি হয়েছে উনবিংশ শতকে, দ্বিতীয় লুইয়ের নির্দেশে।

বাভারিয়ার এই রাজার স্বপ্ন ছিল, রিচার্ড ওয়াগনারের অপেরা এবং মধ্যযুগের রোমান্টিক ভাবনার প্রতিফলন ঘটানো।

এই দুর্গটি “চিটি চিটি ব্যঙ্গ ব্যঙ্গ” এর মত বহু সিনেমায় ব্যবহৃত হয়েছে।

স্পেনের “আলকাজর অফ সেগোভিয়া”:

স্পেনের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত সেগোভিয়া দুর্গ ইউরোপের অন্যতম আকর্ষণীয় দুর্গ।

একসময় এটি ছিল রোমানদের দুর্গ, যা ধীরে ধীরে মধ্যযুগীয় দুর্গে পরিণত হয়।

রানী ইসাবেলা এবং দ্বিতীয় ফিলিপের রাজত্বকালে এই দুর্গ রাজপরিবারের বাসস্থান ছিল।

ভারতের “আম্বার ফোর্ট”:

ভারতের জয়পুরের কাছে পাহাড়ের উপরে অবস্থিত আম্বার ফোর্ট সপ্তদশ শতকে তৈরি করা হয়।

রাজপুত স্থাপত্যের এক দারুণ উদাহরণ এই দুর্গ।

দুর্গের ভেতরে রয়েছে মহারাজার অ্যাপার্টমেন্ট, সুখ নিবাস এবং দিওয়ান-ই-আমের মতো আকর্ষণীয় স্থান।

মরক্কোর “কসার অফ আইত-বেন-হাদদু”:

সাহারা মরুভূমির প্রান্তে অবস্থিত এই দুর্গটি “গেম অফ থ্রোনস” এবং “গ্ল্যাডিয়েটর”-এর মতো সিনেমা ও টিভি শো-এর শুটিং লোকেশন হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে।

একসময় এটি ছিল মারাক্কেশ ও সুদানের মধ্যে ব্যবসার জন্য আসা ব্যবসায়ীদের বিশ্রামস্থল।

অন্যান্য উল্লেখযোগ্য দুর্গ:

উপরে উল্লেখিত দুর্গগুলো ছাড়াও আরও অনেক সুন্দর দুর্গ রয়েছে, যেমন – সুইডেনের কালমার ক্যাসেল, তুরস্কের টপকাপি সারায়ি, স্কটল্যান্ডের এডিনবরা ক্যাসেল, ফ্রান্সের শাতো ডি শামোবোর্ড, চেক রিপাবলিকের প্রাগ ক্যাসেল, এবং আরও অনেক কিছু।

প্রতিটি দুর্গের নিজস্ব ইতিহাস, স্থাপত্যশৈলী এবং আকর্ষণ রয়েছে।

দুর্গগুলো শুধু অতীতের স্মৃতিচিহ্ন নয়, বরং বর্তমানের জীবন্ত ইতিহাস।

এগুলি আমাদের সংস্কৃতি, ঐতিহ্য এবং ইতিহাসের সঙ্গে পরিচয় করায়।

যারা ভ্রমণ ভালোবাসেন, তাদের জন্য এই দুর্গগুলো হতে পারে এক অসাধারণ অভিজ্ঞতা।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *