মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র: রুয়ান্ডায় বিতাড়িত করার পরিকল্পনা?

যুক্তরাষ্ট্র কি রুয়ান্ডায় মানুষ পাঠাবে? উদ্বাস্তু সমস্যা সমাধানে নতুন আলোচনা

যুক্তরাষ্ট্র সরকার কি তাদের দেশ থেকে বিতাড়িত হওয়া ব্যক্তিদের রুয়ান্ডায় পাঠাতে পারে? এমন একটি সম্ভাবনা নিয়ে এখন আলোচনা চলছে। যুক্তরাজ্য সরকার এর আগে একই ধরনের একটি পরিকল্পনা করেছিল, যেখানে উদ্বাস্তু ও আশ্রয়প্রার্থীদের রুয়ান্ডায় পাঠানোর কথা ছিল। তবে মানবাধিকার সংগঠনগুলো এই ধরনের পদক্ষেপের তীব্র বিরোধিতা করছে।

তাদের মতে, এটি উদ্বাস্তুদের জন্য মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে।

রুয়ান্ডার পররাষ্ট্রমন্ত্রী অলিভার দুহাঙ্গিরেহে সম্প্রতি নিশ্চিত করেছেন যে, তাঁর দেশ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি অভিবাসন চুক্তি নিয়ে আলোচনা করছে। তবে চুক্তির বিস্তারিত এখনো জানা যায়নি। বিশ্লেষকদের মতে, এবার রুয়ান্ডার জন্য পরিস্থিতি হয়তো ভিন্ন হতে পারে।

কারণ, ডোনাল্ড ট্রাম্পের সরকার এর আগেও এল সালভাদরের মতো তৃতীয় কোনো দেশে উদ্বাস্তুদের বিতাড়িত করেছে। এছাড়া, দেশটি লিবিয়ার সঙ্গেও আলোচনা চালাচ্ছে, যেখানে বর্তমানে হাজার হাজার উদ্বাস্তু রয়েছে এবং দেশটি রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে।

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বলেছেন, সরকার বিতাড়িত হওয়া ব্যক্তিদের, বিশেষ করে সাজাপ্রাপ্ত অপরাধীদের গ্রহণ করার জন্য অন্যান্য দেশ খুঁজছে। রুবিও আরও বলেন, “আমরা অন্যান্য দেশগুলোর সঙ্গে আলোচনা করছি, যেন আমরা কিছু ঘৃণ্য মানুষকে তাদের দেশে পাঠাতে পারি।”

তিনি আরও যোগ করেন, দূরবর্তী স্থানে বিতাড়িত করা হলে তারা সহজে আর ফিরতে পারবে না।

তবে মানবাধিকার সংস্থাগুলো এই ধরনের চুক্তির বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। তাদের আশঙ্কা, এর ফলে অনিরাপদ দেশ থেকে আসা উদ্বাস্তুদের অন্য কোনো অনিরাপদ দেশে, এমনকি যেখান থেকে তারা পালিয়ে এসেছে, সেখানেও পাঠানো হতে পারে।

জানা গেছে, রুয়ান্ডার সরকার সম্ভবত উদ্বাস্তুদের পুনর্বাসন ও তাদের সমাজে একীভূত করার জন্য একটি কর্মসূচির খরচ বহন করার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে অর্থ পেতে পারে। এর আগে, যুক্তরাজ্য রুয়ান্ডাকে একটি অনুরূপ চুক্তির জন্য অর্থ দিতে রাজি হয়েছিল।

২০২২ সালে যুক্তরাজ্য সরকার রুয়ান্ডার সঙ্গে একটি চুক্তি করে, যেখানে যুক্তরাজ্যে আশ্রয়প্রার্থীদের আবেদন গ্রহণ ও তাদের রুয়ান্ডায় পুনর্বাসন করার কথা ছিল। এই চুক্তির অংশ হিসেবে, যুক্তরাজ্য রুয়ান্ডাকে আর্থিক সহায়তা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়।

এছাড়া, প্রত্যেক ব্যক্তির পুনর্বাসন ও তাদের দেখাশোনার জন্য যুক্তরাজ্য অর্থ পরিশোধ করতে রাজি হয়। কিন্তু বিভিন্ন আইনি জটিলতার কারণে সেই চুক্তিটি বাতিল হয়ে যায়।

জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা (ইউএনএইচসিআর) জানিয়েছে, তারা রুয়ান্ডার এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানালেও, আশ্রয় দেওয়ার ক্ষেত্রে দেশটির ওপর দায়িত্ব চাপানোর বিরোধিতা করে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, রুয়ান্ডা এই চুক্তির মাধ্যমে একদিকে যেমন আর্থিক সুবিধা পেতে চাইছে, তেমনি পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক আরও ভালো করতে চায়। কারণ, রুয়ান্ডা বর্তমানে বিদেশি সাহায্যের ওপর নির্ভরশীল।

বিশেষ করে, তারা তাদের প্রতিবেশী দেশ কঙ্গোতে চলমান সংঘাতের কারণে পশ্চিমা দেশগুলোর সমালোচনার শিকার হচ্ছে।

আফ্রিকা মহাদেশের এই দেশটি ১৯৯৪ সালের গণহত্যা থেকে দ্রুত উন্নতি লাভ করেছে। কিন্তু বর্তমানে রুয়ান্ডা অভ্যন্তরীণ ও আঞ্চলিক বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন। মানবাধিকার সংস্থাগুলো প্রায়ই রুয়ান্ডায় গণমাধ্যমের স্বাধীনতা এবং মত প্রকাশের স্বাধীনতার অভাব নিয়ে সমালোচনা করে থাকে।

তথ্য সূত্র: আল জাজিরা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *