শুক্রবার: কেমন হবে মার্কিন চাকরির বাজার?

যুক্তরাষ্ট্রের শ্রমবাজার: উদ্বেগের ঢেউ, বাংলাদেশের জন্য কী বার্তা?

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি নিয়ে নিয়মিত প্রকাশিত চাকরির হিসাব বা ‘জবস রিপোর্ট’ এখন বিশ্বজুড়ে আলোচনার বিষয়। এই হিসাব শুধু একটি দেশের অভ্যন্তরীণ চিত্র নয়, বরং বিশ্ব অর্থনীতির গতিপ্রকৃতি কেমন, তারও একটা ইঙ্গিত দেয়।

সম্প্রতি প্রকাশিত তথ্যে দেখা যাচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রের শ্রমবাজারে কিছুটা হলেও অস্থিরতা দেখা যাচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের জন্য এর তাৎপর্য কী, আসুন, জেনে নেওয়া যাক।

প্রতি মাসের শুরুতে, যুক্তরাষ্ট্রের শ্রম পরিসংখ্যান ব্যুরো (Bureau of Labor Statistics – BLS) একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে, যেখানে আগের মাসের কর্মসংস্থান এবং বেকারত্বের হার সম্পর্কিত তথ্য থাকে। এই হিসাব অর্থনীতির বিভিন্ন সূচকের ওপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়।

সম্প্রতি প্রকাশিত তথ্যে দেখা গেছে এপ্রিল মাসে যুক্তরাষ্ট্রে ১ লক্ষ ৩৫ হাজার নতুন চাকরি যুক্ত হয়েছে। যেখানে বেকারত্বের হার ৪.২ শতাংশে স্থিতিশীল রয়েছে।

তবে, বাজারের অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করছেন, এই চিত্র সবটা পরিষ্কার নয়। কারণ, বাণিজ্য যুদ্ধ এবং শুল্ক নীতি নিয়ে অনিশ্চয়তা বাড়ছে, যা অর্থনীতির জন্য উদ্বেগের কারণ। একটি সাক্ষাৎকারে, নেভি ফেডারেল ক্রেডিট ইউনিয়নের কর্পোরেট অর্থনীতিবিদ রবার্ট ফ্রিক সিএনএনকে জানান, “আসন্ন গ্রীষ্মকালে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি হলো তাদের ভোক্তারা। তাঁদের ব্যয়ের ওপর দেশটির অর্থনীতির দুই-তৃতীয়াংশ নির্ভরশীল। আর এই ব্যয়ের প্রধান উৎস হলো শ্রমবাজার। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে, সেই বাজারের ওপর চাপ বাড়ছে।

অর্থনীতিবিদ এলিজাবেথ রেন্টার সিএনএনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, “পরিসংখ্যান দেখে মনে হচ্ছে অর্থনীতি শক্তিশালী। কর্মসংস্থান বাড়ছে, বেকারত্বের হারও ভালো পর্যায়ে আছে। কিন্তু এর পেছনের ঝুঁকিগুলো বাড়ছে।

মার্চ মাসের হিসাবের দিকে যদি তাকাই, তবে দেখা যায়, শুরুতে ধারণা করা হয়েছিল ২ লক্ষ ২৮ হাজার কর্মসংস্থান হয়েছে, তবে পরবর্তীতে সেই সংখ্যা সংশোধন করে কমিয়ে আনা হয়েছিল। সাধারণত দেখা যায়, কোনো একটি মাসের হিসাবের প্রাথমিক তথ্যের চেয়ে চূড়ান্ত তথ্যে পরিবর্তন আসে।

যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য নীতি এবং শুল্কের কারণে অনেক ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান এখন ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। বিশেষ করে চীন থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর শুল্ক বৃদ্ধি করা হয়েছে। এছাড়া, সরকারি পর্যায়ে কর্মীদের ছাঁটাই এবং বিভিন্ন প্রকল্পের কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ব্যবসার ক্ষেত্রে অনিশ্চয়তা বেড়েছে।

এপ্রিল মাসে এই শুল্কের হার আরও বাড়ানো হয়। বাণিজ্যনীতির পাশাপাশি সরকারি ব্যয় কমানো এবং অভিবাসন নীতিতেও পরিবর্তন আসায় অনেক ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান কর্মী ছাঁটাই করতে বাধ্য হচ্ছে।

এই পরিস্থিতিতে কিছু বিশেষজ্ঞ মনে করেন, এপ্রিল মাসের হিসাব আরও খারাপ হতে পারে। ইওয়াই-পারথেনন এর একজন অর্থনীতিবিদ, লিডিয়া বুসোর এর মতে, এপ্রিল মাসে নতুন কর্মসংস্থান হতে পারে মাত্র ৬৫ হাজার।

বিভিন্ন খাতে কর্মী ছাঁটাইয়ের প্রবণতা বাড়ছে। বিশেষ করে, ইউপিএস (UPS) এবং ইন্টেল (Intel) তাদের কর্মী ছাঁটাইয়ের ঘোষণা দিয়েছে। এই ধরনের ঘটনাগুলো বাজারের জন্য ভালো লক্ষণ নয়।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শ্রমবাজারের এই অস্থিরতা বিভিন্ন খাতে প্রভাব ফেলবে। স্বাস্থ্যসেবা, স্থানীয় সরকার এবং বিনোদন খাতে কর্মী নিয়োগের হার কমে যেতে পারে। নির্মাণ ও উৎপাদন খাতেও শুল্ক বৃদ্ধির কারণে মন্দা দেখা দিতে পারে।

এছাড়া, কর্মীদের কাজের ঘণ্টার পরিমাণ কমে গেলে বা মজুরি বৃদ্ধি কমে গেলে তা উদ্বেগের কারণ হবে।

এখন প্রশ্ন হলো, যুক্তরাষ্ট্রের এই অর্থনৈতিক অস্থিরতা বাংলাদেশের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ?

যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিতে যেকোনো পরিবর্তন বিশ্ব অর্থনীতিতে প্রভাব ফেলে। বাংলাদেশ একটি উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ওপর অনেকখানি নির্ভরশীল। যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকসহ বিভিন্ন পণ্যের চাহিদা কমে গেলে দেশের অর্থনীতিতে তার নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।

এছাড়া, প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স কমে গেলে দেশের অর্থনীতিতে আরও চাপ সৃষ্টি হতে পারে।

সুতরাং, যুক্তরাষ্ট্রের শ্রমবাজারের এই পরিস্থিতি বাংলাদেশের জন্য একটি সতর্কবার্তা। আমাদের দেশের নীতিনির্ধারকদের আন্তর্জাতিক বাজার পরিস্থিতি এবং অর্থনৈতিক সূচকগুলোর দিকে তীক্ষ্ণ নজর রাখতে হবে। বাণিজ্য নীতি নির্ধারণ এবং অর্থনৈতিক সম্পর্ক বজায় রাখার ক্ষেত্রে আরও সচেতন হতে হবে।

তথ্যসূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *