গ্রিসের দ্বীপগুলোর বাইরেও যে ঐতিহাসিক স্থানগুলো আজও পর্যটকদের কাছে জনপ্রিয়, সেই বিষয়ে একটি নতুন নিবন্ধ লিখুন।
গ্রিক সংস্কৃতি আর ইতিহাসের আকর্ষণ সারা বিশ্বজুড়ে। শুধু সমুদ্র আর দ্বীপের দেশ হিসেবেই নয়, প্রাচীন স্থাপত্য আর ঐতিহাসিক নিদর্শনের জন্যও গ্রিস বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। দেশটির আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে আছে এমন সব স্থান, যা আজও পর্যটকদের মনে বিস্ময় জাগায়।
আজকের লেখায় আমরা গ্রিসের কয়েকটি অসাধারণ ঐতিহাসিক স্থানের কথা তুলে ধরব, যা দ্বীপগুলোর বাইরে অবস্থিত এবং ইতিহাস প্রেমীদের জন্য এক ভিন্ন জগৎ।
প্রথমেই আসা যাক এথেন্সের অ্যাক্রোপলিসের দিকে। পাহাড়ের উপরে অবস্থিত পার্থেনন মন্দিরটি প্রাচীন গ্রিসের স্থাপত্যশৈলীর এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। খ্রিস্টপূর্ব ৪৪৭ অব্দে দেবী এথেনার উদ্দেশ্যে এটি নির্মাণ করা হয়েছিল।
সাদা মার্বেল পাথরের তৈরি এই মন্দিরটি শুধু গ্রিসের নয়, বিশ্ব ঐতিহ্যের এক অমূল্য সম্পদ। অ্যাক্রোপলিস মিউজিয়ামে মন্দিরের কারুকার্যখচিত বিশাল আকারের একটি অংশ এখনো দেখা যায়, যা দর্শকদের মুগ্ধ করে তোলে।
এরপর আসা যাক উত্তর গ্রিসের মেটিওরার কথা। এখানকার সুবিশাল পাথরের স্তম্ভের উপরে তৈরি হওয়া মঠগুলো এককথায় অসাধারণ। ১৪ থেকে ১৬ শতকের মধ্যে নির্মিত এই মঠগুলো যেন ‘শূন্যে ঝুলন্ত’। এখানকার প্রতিটি মঠ নিজস্ব স্থাপত্যশৈলীর জন্য বিখ্যাত।
ট্রেকিং-এর মাধ্যমে এখানকার আশেপাশে ঘুরে প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করা যেতে পারে।
ঐতিহাসিক শহর কাভালাও গ্রিসের এক গুরুত্বপূর্ণ স্থান। এজিয়ান সাগরের তীরে অবস্থিত এই শহরে বাইজানটাইন এবং অটোমান সাম্রাজ্যের প্রভাব দেখা যায়। এখানকার পুরনো শহরে তুরস্কের সংস্কৃতির নিদর্শন আজও বিদ্যমান।
এখানকার মোহাম্মেদ আলীর বাড়ি এবং হ্যালিল বে মসজিদের স্থাপত্যশৈলী পর্যটকদের বিশেষভাবে আকর্ষণ করে।
রেশম শিল্পের জন্য পরিচিত সুফলির কথা না বললেই নয়। একসময় এই অঞ্চলের লোকেরা রেশম তৈরি করে প্রচুর অর্থ উপার্জন করত। এখানকার ‘কোকুন হাউস’ বা গুটিপোকা রাখার ঘরগুলো আজও সেই ঐতিহ্যের সাক্ষ্য বহন করে।
এখানকার আর্ট অফ সিল্ক মিউজিয়াম এবং ১৯১০ সালে মিলান থেকে আসা সেরিয়ানো ফ্রাতেল্লি কোম্পানির তৈরি করা টিভরি সিল্ক ফ্যাক্টরি, শহরটির সমৃদ্ধ অতীতের কথা বলে।
কোরিন্থের খাল প্রকৌশলবিদ্যার এক দারুণ উদাহরণ। প্রায় চার মাইল দীর্ঘ এই খালটি, ইওনিয়ান সাগর এবং এজিয়ান সাগরকে যুক্ত করেছে। প্রাচীনকালে এই খাল তৈরির স্বপ্ন দেখেছিলেন পেরিয়ান্ডা।
পরে, ফরাসিরা এটি নির্মাণ করে। খালের দুপাশের উঁচু দেওয়াল এর সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে।
পেলোপোনেসে অবস্থিত প্রাচীন মেসিনিতে যাওয়াটাও একটা বিশেষ অভিজ্ঞতা। এখানে তেমন ভিড় হয় না, কিন্তু এখানকার ধ্বংসাবশেষগুলো খুবই সুন্দরভাবে সংরক্ষিত আছে।
প্রাচীন এই শহরটি খ্রিস্টপূর্বাব্দে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল এবং এখানকার মন্দির, বাথহাউস ও বিশাল আকারের অ্যাগোরা বা বাজার আজও ইতিহাসের সাক্ষী।
মনেমভাসিয়া দ্বীপটি পেলোপোনেসের পূর্ব উপকূলে অবস্থিত। ষষ্ঠ শতকে বাইজানটাইনরা এটি তৈরি করে। এখানকার পাথরের তৈরি দুর্গ “কাস্ত্রো” মধ্যযুগীয় স্থাপত্যের এক উজ্জ্বল উদাহরণ।
এখানকার সংকীর্ণ রাস্তাগুলো ঘুরে বাইজেন্টাইন যুগের নানা নিদর্শন দেখা যায়।
প্রাচীন অলিম্পিয়া, যেখানে আধুনিক অলিম্পিক গেমসের জন্ম, সেটিও গ্রিসের একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান। খ্রিস্টপূর্ব ৭৭৬ অব্দ থেকে ৩৯৩ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত এখানে অলিম্পিক অনুষ্ঠিত হতো।
এখানকার ধ্বংসাবশেষগুলোর মধ্যে জিমনেসিয়াম, প্যালেস্ট্রা এবং ফিডিয়াসের কর্মশালা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
মাইসেনি হলো প্রাচীন গ্রিসের সবচেয়ে শক্তিশালী শহরগুলোর একটি। ট্রয়ের রাজা আগামেমন-এর কথা আজও লোকমুখে ফেরে।
এখানকার সিংহ গেট এবং সাইক্লোপিয়ান দেয়ালগুলো আজও পর্যটকদের আকর্ষণ করে।
নফপ্লিও শহরটি গ্রিসের অন্যতম সুন্দর উপকূলীয় শহর। ব্রোঞ্জ যুগ থেকে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বন্দর ছিল।
এখানকার পুরনো শহরটি ভেনিসীয় স্থাপত্যশৈলীর এক দারুণ উদাহরণ। এখানকার পালামিদি দুর্গ থেকে সমুদ্র আর শহরের মনোরম দৃশ্য দেখা যায়।
গ্রিসের এই ঐতিহাসিক স্থানগুলো, দ্বীপগুলোর বাইরেও, পর্যটকদের জন্য এক ভিন্ন জগৎ উন্মোচন করে। প্রতিটি স্থানের নিজস্ব ইতিহাস, সংস্কৃতি এবং স্থাপত্যশৈলী রয়েছে, যা গ্রিসকে করে তুলেছে আরও আকর্ষণীয়।
তথ্য সূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক