বর্তমান বিশ্বে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার বিষয়টি এক গুরুত্বপূর্ণ উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রতিদিনের জীবনে ব্যবহৃত অনেক জিনিস পরিবেশের উপর মারাত্মক প্রভাব ফেলে, বিশেষ করে যখন সেগুলোর পুনর্ব্যবহার করা যায় না।
এই কারণে, বর্জ্য ব্যবস্থাপনার সঠিক ধারণা এবং আমাদের চারপাশের জিনিসপত্রের পুনর্ব্যবহারযোগ্যতা সম্পর্কে সচেতনতা অত্যন্ত জরুরি। আজকের প্রতিবেদনে আমরা এমন কিছু সাধারণ জিনিসের কথা আলোচনা করব, যা পুনর্ব্যবহার করা কঠিন অথবা একেবারেই সম্ভব নয়।
প্রথমেই আসা যাক, বহুল ব্যবহৃত ফোম বা থার্মোকলের (Styrofoam) প্রসঙ্গে। খাবার প্যাকেট, ডিমের কার্টন বা ইলেক্ট্রনিক গ্যাজেটের প্যাকেজিং-এর কাজে এর ব্যবহার ব্যাপক।
সমস্যা হলো, এটি তৈরি হয় পলিস্টাইরিন (Polystyrene) নামক একটি উপাদান দিয়ে, যা সহজে ভাঙে না এবং পরিবেশে মিশে যেতে বহু বছর সময় নেয়। এছাড়াও, এর ৯৫ শতাংশই বাতাস, ফলে এটি পরিবহনেও বেশি জায়গা নেয়।
বাংলাদেশে এর রিসাইক্লিংয়ের তেমন ব্যবস্থা নেই। তাই, থার্মোকলের পরিবর্তে কাগজের তৈরি প্যাকেট ব্যবহারের চেষ্টা করা উচিত।
টুথপেস্টের টিউব (Toothpaste tubes) আরেকটি সমস্যা। সাধারণত, টুথপেস্টের টিউব তৈরি হয় বিভিন্ন প্লাস্টিকের স্তর দিয়ে, যা পুনর্ব্যবহার করা কঠিন করে তোলে।
এই টিউবগুলো রিসাইকেল করার জন্য আলাদা করা সময়সাপেক্ষ এবং ব্যয়বহুল। বাজারে এখন কিছু ব্র্যান্ড পুনর্ব্যবহারযোগ্য টুথপেস্ট টিউব তৈরি করছে।
কেনার সময় প্যাকেজের উপাদানগুলো দেখে নেওয়া ভালো।
শিশুদের খেলনা (Children’s toys) সাধারণত কঠিন প্লাস্টিক দিয়ে তৈরি হয়, যা সহজে ভাঙে না।
এছাড়াও, খেলনা তৈরিতে ব্যবহৃত রং এবং অন্যান্য রাসায়নিক উপাদান পুনর্ব্যবহারের প্রক্রিয়াকে জটিল করে তোলে।
ভাঙা খেলনাগুলো পুনর্ব্যবহারের পরিবর্তে অন্য কাউকে দান করা অথবা পুনরায় ব্যবহারের কথা বিবেচনা করা যেতে পারে।
পাইরেক্স গ্লাস (Pyrex glass) উচ্চ তাপমাত্রা সহনশীল হওয়ায় রান্নার জন্য খুবই উপযোগী।
কিন্তু এই বিশেষ গুণাগুণের কারণে এটি সাধারণ কাঁচের মতো পুনর্ব্যবহার করা যায় না। ভাঙা বা ক্ষতিগ্রস্ত পাইরেক্স গ্লাস রিসাইকেল বিন-এ না ফেলে, তা ভালোভাবে মুড়িয়ে ডাস্টবিনে ফেলতে হবে।
কাগজের চালান বা রসিদ (Paper shopping receipts) -এ যে কাগজ ব্যবহার করা হয়, তাতে ‘বিসফেনল-এ’ (Bisphenol-A) বা ‘বিসফেনল-এস’ (Bisphenol-S) নামক রাসায়নিকের প্রলেপ থাকে।
এই কারণে, এগুলো পুনর্ব্যবহার করা যায় না। এছাড়াও, এই ধরনের কাগজ সহজে নষ্ট হয়ে যায়।
তাই, রসিদ নেওয়ার পরিবর্তে ডিজিটাল কপি নেওয়ার চেষ্টা করা যেতে পারে।
প্লাস্টিকের নরম মোড়ক ও ব্যাগ (Soft plastic packaging and plastic bags), যেমন— মুদি দোকানের পলি ব্যাগ বা খাদ্যদ্রব্যের মোড়ক— রিসাইক্লিংয়ের জন্য উপযুক্ত নয়।
কারণ, এগুলো খুবই পাতলা এবং রিসাইক্লিং মেশিনে জট পাকিয়ে যন্ত্রের ক্ষতি করতে পারে। এই ধরনের প্লাস্টিকের ব্যবহার কমানো এবং পুনরায় ব্যবহারের চেষ্টা করা উচিত।
জুস ও দুধের কার্টন (Juice boxes and milk cartons) তৈরি হয় কাগজ, প্লাস্টিক এবং অ্যালুমিনিয়ামের মিশ্রণে।
এই কারণে, এগুলো পুনর্ব্যবহার করা কঠিন। বিশেষ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এই উপাদানগুলো আলাদা করা সম্ভব, তবে বাংলাদেশে সেই সুবিধা খুব একটা নেই।
কাপড়ের হ্যাঙ্গার (Clothes hangers)-এর ক্ষেত্রেও একই সমস্যা।
প্লাস্টিকের হ্যাঙ্গার বিভিন্ন ধরনের প্লাস্টিকের মিশ্রণে তৈরি হয়। কাঠের হ্যাঙ্গারে বার্নিশ ও অন্যান্য রাসায়নিক ব্যবহার করা হয় বলে, সেগুলিরও পুনর্ব্যবহার সম্ভব নয়।
আয়না (Mirrors)-এর পেছনের প্রতিফলিত স্তরটি আলাদা করা কঠিন। তাই, এটিও পুনর্ব্যবহারের উপযুক্ত নয়।
এছাড়া, আয়নার কাঁচ বিশেষ প্রক্রিয়ায় তৈরি হওয়ায়, একে সাধারণ কাঁচের সাথে মেশানো যায় না।
পিৎজা বক্স (Pizza boxes) -এর কথা ধরুন। এগুলি কাগজ দিয়ে তৈরি হলেও, তেল এবং খাবারের কারণে দূষিত হয়ে যায়, ফলে পুনর্ব্যবহার করা কঠিন হয়ে পড়ে।
অতএব, বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে আমাদের সচেতন হতে হবে।
যেসব জিনিস পুনর্ব্যবহার করা যায় না, সেগুলোর ব্যবহার কমানো এবং পুনরায় ব্যবহারের দিকে জোর দিতে হবে।
আমাদের সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টাই পারে পরিবেশকে রক্ষা করতে।
তথ্য সূত্র: