যুক্তরাজ্যে এক মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় ১০ বছর বয়সী এক স্কুলছাত্রীর মৃত্যু হয়েছে। গত ২২শে মে, ২০২৪ তারিখে ইয়র্কশায়ারের কার্লটন অ্যাডভেঞ্চার সেন্টারে স্কুলের শিক্ষাসফরে থাকাকালীন ভূমিধসে তলিয়ে যায় লিয়া হ্যারিসন নামের ওই ছাত্রী।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, কাদায় আটকে শ্বাসরুদ্ধ হয়ে তার মৃত্যু হয়।
ঘটনার দিন, লিয়া তার সহপাঠীদের সাথে একটি ঝর্ণা পার হওয়ার সময় আকস্মিকভাবে এই ভূমিধসের কবলে পরে। মুহূর্তের মধ্যে ২০ ফুট দূরে কাদায় তলিয়ে যায় সে।
পরে উদ্ধারকর্মীরা এসে তাকে কাদা থেকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এই ঘটনার তদন্তে জানা যায়, লিয়ার মৃত্যু ছিলো একটি দুর্ঘটনা। তেসাইড ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে শুনানিতে জানানো হয়, ভূমিধসের কারণে লিয়া “ট্রমাটিক অ্যাস্ফিক্সিয়া” বা শ্বাসকষ্টে ভুগে মারা যায়।
ঘটনার সময় কার্লটন ব্যাংকের কাছে নর্থ ইয়র্ক মুরস ন্যাশনাল পার্কের প্রান্তে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের তত্ত্বাবধানে একটি হাঁটা পথের অভিজ্ঞতা নিচ্ছিলো লিয়া ও তার সহপাঠীরা।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী এবং উদ্ধারকর্মীরা জানান, ভূমিধসটি এতটাই আকস্মিকভাবে ঘটেছিল যে, তা আগে থেকে বোঝার কোনো উপায় ছিল না। এমনকি এই ধরনের ঘটনার পূর্বাভাস দেওয়াও সম্ভব ছিল না।
স্থানীয় কর্মকর্তারা জানান, এমন পরিস্থিতিতে ঝুঁকি মূল্যায়ন করা হলে, তা হয়তো আগে থেকে চিহ্নিত করা যেত না।
লিয়ার শিক্ষক এবং স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা জানিয়েছেন, ওই দিনের আগে তারা বহুবার ওই স্থানে শিক্ষাসফরে গিয়েছেন, কিন্তু এমন ঘটনা আগে কখনো ঘটেনি।
লিয়ার সহপাঠীরা জানায়, সে সবসময় হাসিখুশি থাকতো এবং নতুন কিছু করতে পছন্দ করতো।
ঘটনার পর, জরুরি বিভাগের কর্মীরা দ্রুত ঘটনাস্থলে ছুটে আসে এবং লিয়াকে উদ্ধারের চেষ্টা করে। প্রায় ৩০ জন উদ্ধারকর্মী তাকে বাঁচাতে প্রাণপণ চেষ্টা চালান।
কাদা থেকে তোলার পর, জরুরি ভিত্তিতে তাকে জেমস কুক ইউনিভার্সিটি হাসপাতালে নেওয়া হয়।
স্থানীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা যায়, ঘটনার সময় লিয়ার কোট তার মুখ ও নাকের সাথে লেগে যাওয়ায়, তার শ্বাস নিতে সমস্যা হচ্ছিলো। তদন্তে আরও জানা যায়, লিয়া কাদার গভীরে সম্পূর্ণভাবে ডুবে গিয়েছিল।
এদিকে, ঘটনার দু’মাস পর স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা বিষয়ক নির্বাহী সংস্থা (Health and Safety Executive – HSE) জানায়, এই ঘটনায় কারো কোনো গাফিলতি ছিল না।
লিয়ার মা জানান, তার মেয়ে খুব মিশুক এবং ভালো মনের একজন মানুষ ছিলো। ঘটনার দিন সকালে হালকা অসুস্থতা সত্ত্বেও সে শিক্ষাসফরে যেতে চেয়েছিলো।
মায়ের দেওয়া শেষ চুমু আর ভালোবাসার মাঝে, হাসিখুশি লিয়া চিরদিনের জন্য হারিয়ে যায়।
তথ্যসূত্র: পিপলস