১০০-বছরের বন্যা: ভয়ঙ্কর বন্যার কারণ কী? আতঙ্কের আসল চিত্র!

বর্ষাকালে বাংলাদেশে বন্যা একটি পরিচিত দৃশ্য। প্রতি বছরই দেশের বিভিন্ন অঞ্চল প্লাবিত হয়, যা জনজীবনকে বিপর্যস্ত করে তোলে।

আবহাওয়াবিদরা মাঝে মাঝে ‘১০০ বছরের বন্যা’ বা ‘৫০০ বছরের বন্যা’-র মতো শব্দ ব্যবহার করেন। এর মানে কী? আসুন, জেনে নেওয়া যাক।

আসলে, ‘১০০ বছরের বন্যা’ বা ‘৫০০ বছরের বন্যা’ – এই শব্দগুলো বন্যার তীব্রতা এবং তা ঘটার সম্ভাবনা বোঝাতে ব্যবহৃত হয়। সহজ ভাষায়, ‘১০০ বছরের বন্যা’ মানে হলো, কোনো একটি নির্দিষ্ট বছরে এমন একটি বন্যার দেখা পাওয়ার সম্ভাবনা ১ শতাংশ।

অর্থাৎ, ১০০ বছরে এমন একটি বন্যা একবার আসার সম্ভাবনা থাকে। আর ‘৫০০ বছরের বন্যা’-র ক্ষেত্রে, কোনো বছরে সেই ধরনের বন্যা আসার সম্ভাবনা ০.২ শতাংশ।

গণিত ব্যবহার করে বিজ্ঞানীরা একটি নির্দিষ্ট মাত্রার বন্যার অস্বাভাবিকতা এবং অন্য বন্যার সঙ্গে এর তুলনা করার চেষ্টা করেন। তারা হিসাব করেন, কোনো একটি নির্দিষ্ট বন্যা কত বছরে একবার আসতে পারে।

আবহাওয়াবিদরা একে ‘পুনরাবৃত্তির ব্যবধান’ (Recurrence Interval) নামেও চিহ্নিত করেন। ধরা যাক, কোনো একটি বন্যা ২৫ বছর পর পর আসার সম্ভাবনা রয়েছে।

তবে বিজ্ঞানীরা এই ‘পুনরাবৃত্তির ব্যবধান’-এর পরিবর্তে বন্যার ‘শতকরা সম্ভাবনা’-র ওপর বেশি জোর দেন। কারণ, বিরল বন্যাও কয়েক বছরের ব্যবধানে পরপর আসতে পারে।

জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বন্যার ধরন বদলে যাচ্ছে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, মানুষের কার্যকলাপের ফলে কার্বন ডাই অক্সাইড ও মিথেনের মতো গ্যাস নির্গত হচ্ছে, যা পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধি করছে।

এর ফলে বায়ুমণ্ডলে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ বাড়ছে। উত্তর আটলান্টিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ভিক্টর জেনসিনি’র মতে, তাপমাত্রা ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়লে বায়ুমণ্ডলে প্রায় ৭ শতাংশ বেশি জলীয় বাষ্প ধরে রাখতে পারে।

এই জলীয় বাষ্প বৃষ্টি বা তুষার আকারে ভূপৃষ্ঠে ফিরে আসে।

যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ওশেনিক অ্যান্ড অ্যাটমোস্ফিয়ারিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (NOAA) -এর তথ্য অনুযায়ী, উনিশ শতকের শুরু থেকে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বেড়েছে এবং ঘন ঘন বন্যা হচ্ছে। এমনকি কোনো কোনো অঞ্চলে দেখা যাচ্ছে খরা।

নাসা (NASA) জানাচ্ছে, অতিরিক্ত বৃষ্টি এবং খরা—উভয় ঘটনাই এখন অনেক বেশি ঘটছে। এর মূল কারণ হলো বৈশ্বিক উষ্ণতা।

বাংলাদেশ একটি দুর্যোগপ্রবণ দেশ। ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে এখানে প্রায়ই বন্যা হয়। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এই ঝুঁকি আরও বাড়ছে।

সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি এবং অতিবৃষ্টির ফলে ভবিষ্যতে বন্যার প্রকোপ আরও বাড়তে পারে। তাই, ‘১০০ বছরের বন্যা’ বা ‘৫০০ বছরের বন্যা’-র ধারণা আমাদের কাছে শুধু একটি পরিসংখ্যান নয়, বরং ভবিষ্যতের জন্য একটি সতর্কবার্তা।

তথ্য সূত্র: Associated Press

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *