১০০ বছর বয়সী ডাক্তারের দীর্ঘ জীবনের গোপন রহস্য ফাঁস!

শতবর্ষী চিকিৎসক: দীর্ঘ জীবনের রহস্য!

বিশ্বের সবচেয়ে বয়স্ক কর্মরত চিকিৎসক, ১০২ বছর বয়সী হাওয়ার্ড টাকার, এখনো চিকিৎসা পেশায় সক্রিয়। ক্লিভল্যান্ড, ওহাইও’র এই প্রবীণ নিউরোলজিস্ট (স্নায়ু বিশেষজ্ঞ) তাঁর দীর্ঘ জীবনের রহস্য নিয়ে কথা বলেছেন। সম্প্রতি ন্যাশনাল জিওগ্রাফিকের সাথে এক সাক্ষাৎকারে তিনি জানিয়েছেন, কীভাবে তিনি এত বছর ধরে সুস্থ জীবন যাপন করছেন।

ড. টাকার ১৯৪৬ সালে চিকিৎসাশাস্ত্রে ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেন। কোরিয়ান যুদ্ধের সময় তিনি আটলান্টিক নৌবহরের প্রধান নিউরোলজিস্ট ছিলেন। শুধু তাই নয়, ৬৭ বছর বয়সে তিনি আইন বিষয়ে পড়াশোনা শুরু করেন এবং ওহাইও স্টেট বার পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। কোভিড-১৯ মহামারীর শুরুতে রোগীদের চিকিৎসায় তিনি সরাসরি অংশ নিয়েছিলেন। বর্তমানে তিনি কেইস ওয়েস্টার্ন রিজার্ভ ইউনিভার্সিটিতে (Case Western Reserve University) চিকিৎসা ও আইন বিভাগের শিক্ষার্থীদের পড়ান এবং চিকিৎসা-সংক্রান্ত আইনি পরামর্শও দেন।

ড. টাকার দীর্ঘ জীবনের মূল চাবিকাঠি হিসেবে জ্ঞানচর্চা ও সামাজিক সম্পর্ক বজায় রাখার ওপর জোর দেন। তাঁর মতে, অবসর জীবন দীর্ঘায়ুর পথে বাধা সৃষ্টি করে। তিনি বলেন, “কাজ চালিয়ে যাওয়া, সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং সামাজিক মিথস্ক্রিয়া—এগুলো আমাদের মস্তিষ্কের কার্যকারিতা সচল রাখে, যা জ্ঞানীয় ক্ষমতা হ্রাসকে ধীর করে।”

দীর্ঘ জীবন লাভের জন্য ড. টাকারের কয়েকটি পরামর্শ নিচে তুলে ধরা হলো:

  • মানসিক ও শারীরিক সক্রিয়তা: নিয়মিত শরীরচর্চা করুন এবং মনকে সতেজ রাখুন।
  • ধূমপান পরিহার: ধূমপান স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।
  • মনের শান্তি: ঘৃণা বা বিদ্বেষ থেকে দূরে থাকুন। মনের মধ্যে বিদ্বেষ পুষে রাখলে তা শরীরের ওপর খারাপ প্রভাব ফেলে।

ড. টাকার মনে করেন, অতিরিক্ত কিছু করা ভালো নয়, বরং সব কিছুই পরিমিত পরিমাণে করা উচিত। তিনি তাঁর খাদ্যভ্যাস সম্পর্কে বলেন, “আমি সাধারণত সকালে ফল ও টোস্ট খাই, দুপুরে তেমন ক্ষুধা থাকে না, রাতের খাবারে মাছ, মুরগি অথবা মাঝে মাঝে স্টেক ও সবজি থাকে। সেই সাথে মাঝে মধ্যে একটি মার্টিনি (Martini) পান করি।”

শরীরচর্চার বিষয়ে তিনি বলেন, “বয়স বাড়ার সাথে সাথে তীব্র ব্যায়াম করা কঠিন হয়ে পড়ে। তবে নিয়মিত হাঁটা, জগিং বা অন্য কোনো শারীরিক কার্যকলাপ করা প্রয়োজন। যেমন – সাইকেল চালানো, সিঁড়ি বাইতে পারেন। এতে হৃদযন্ত্র সবল থাকে এবং মস্তিষ্ক সক্রিয় থাকে।”

ড. টাকার আরও যোগ করেন, দীর্ঘ জীবনের জন্য বন্ধু এবং পরিবারের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখা খুবই জরুরি।

ডা. টাকারের মতে, দীর্ঘ জীবনের মূল মন্ত্র হলো—জীবনে সক্রিয় থাকা, ধূমপান ও বিদ্বেষ পরিহার করা এবং পরিমিতিবোধের সঙ্গে জীবন উপভোগ করা।

তথ্যসূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *