বরফের গভীরে লুকানো, ১৪,০০০ বছরের পুরনো ‘কুকুরছানা’ রহস্য! আসল পরিচয় দিল বিজ্ঞান

বরফের রাজ্যে লুকানো, ১৪,০০০ বছরের পুরনো “কুকুরছানা” আসলে কি ছিল? নতুন গবেষণায় চাঞ্চল্যকর তথ্য!

উত্তর সাইবেরিয়ার বরফের গভীরে সংরক্ষিত দুটি “কুকুরছানা”-র দেহাবশেষ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে চলা গবেষণা অবশেষে নতুন মোড় নিয়েছে। প্রথমে এদেরকে আদিম কালের পোষা কুকুর হিসেবে ধারণা করা হলেও, আধুনিক বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ বলছে, এরা আসলে ছিল নেকড়ে শাবক। এই আবিষ্কার প্রাণী জগৎ এবং মানব সভ্যতার সম্পর্ক নিয়ে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে।

প্রায় ১৪,০০০ বছর আগের, তুষার যুগের এই “টুমাত” কুকুরছানা দুটি – যাদের একটি ২০১১ সালে এবং অন্যটি ২০১৫ সালে আবিষ্কৃত হয়েছিল – বরফের মধ্যে ভালোভাবে সংরক্ষিত ছিল। এদের শরীরে লোম, চামড়া এবং পেটের ভেতরের খাদ্যকণা—সবই অক্ষত ছিল। বিজ্ঞানীরা এই দেহাবশেষ থেকে তাদের জীবনযাত্রা সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সংগ্রহ করেছেন।

জানা গেছে, তারা উলেরMammoth-এর মাংস এবং ছোট পাখির পালক খেত। এই তথ্য থেকে বোঝা যায়, তারা শিকার করত এবং খাদ্য সংগ্রহের জন্য বন্য পরিবেশে ঘুরে বেড়াত।

গবেষকরা কুকুরছানা দুটির হাড়, দাঁত এবং অন্যান্য টিস্যু পরীক্ষা করে জেনেছেন, তারা নেকড়ে প্রজাতির অন্তর্ভুক্ত ছিল। সম্ভবত এরা ছিল দুই বোন। এদের শরীরে কোনো আঘাতের চিহ্ন ছিল না, যা ইঙ্গিত করে যে একটি ভূমিধসের কারণে তাদের গুহা ধসে পড়েছিল এবং তাতেই তাদের মৃত্যু হয়। এই আবিষ্কারের ফলে বিজ্ঞানীরা সেই সময়ের পরিবেশ এবং প্রাণীদের জীবনযাত্রা সম্পর্কে আরও বিস্তারিত জানতে পারছেন।

গবেষণায় আরও দেখা গেছে, কুকুরছানাগুলো যে পরিবেশে বাস করত, সেখানে ঘাস, উইলো এবং ঝোপঝাড় ছিল। তারা সম্ভবত তাদের মায়ের দুধও পান করত। বিজ্ঞানীরা আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় খুঁজে পেয়েছেন: ঐ অঞ্চলে মানুষের বসবাস ছিল এবং তারা Mammoth শিকার করত, কিন্তু কুকুরছানাগুলোর খাদ্যের সঙ্গে মানুষের কোনো সম্পর্ক ছিল না।

এই গবেষণা আমাদের আদিম কুকুর এবং নেকড়েদের মধ্যেকার সম্পর্ক বুঝতে সাহায্য করে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, কুকুর কখন মানুষের বন্ধু হয়েছিল, তা সঠিকভাবে বলা কঠিন। সম্ভবত নেকড়েরা মানুষের কাছাকাছি থাকত এবং তাদের ফেলে যাওয়া খাবার খেত। কালের বিবর্তনে তাদের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে, যা আজকের পোষা কুকুরের জন্ম দিয়েছে।

এই আবিষ্কারের ফলে, বরফ যুগের প্রাণীদের সম্পর্কে আমাদের ধারণা আরও স্পষ্ট হচ্ছে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, এই ধরনের গবেষণা ভবিষ্যতে আমাদের অতীতের অনেক অজানা প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবে। এই নেকড়ে শাবকদের আবিষ্কার, প্রাচীন প্রাণীদের জীবনযাত্রা এবং বিবর্তন সম্পর্কে আরও গভীর অনুসন্ধানের একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।

তথ্য সূত্র: CNN

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *