বিগত ২০০০ দশকে, আমেরিকার বিজ্ঞাপন জগতের চালচিত্র কেমন ছিল? সেই সময়ের সংস্কৃতি, রাজনীতি, এবং প্রযুক্তির প্রভাব বিজ্ঞাপনগুলোতে কিভাবে ফুটে উঠেছিল? এই বিষয়গুলো নিয়ে সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে একটি নতুন বই – ‘অল-আমেরিকান অ্যাডস ২০০০’। বইটির লেখক, জিম হাইম্যান, এই দশকে বিজ্ঞাপনের নানা দিক নিয়ে আলোচনা করেছেন।
৯/১১ এর সন্ত্রাসী হামলার পরে, দেশপ্রেমের বিষয়টি কিভাবে বিজ্ঞাপনে স্থান করে নিয়েছিল, তা বিশেষভাবে লক্ষণীয়। বুডওয়াইজার-এর একটি বিজ্ঞাপনে ঘোড়ার গাড়ি নিউ ইয়র্কের দিকে এগিয়ে যেতে দেখা যায়, যা ঐ সময়কার মানুষের মধ্যে একতা এবং শোকের আবহ ফুটিয়ে তুলেছিল।
বিলাসবহুল পণ্যের বিজ্ঞাপনগুলো মানুষকে বিলাসিতার দিকে আকৃষ্ট করতে চেয়েছিল। হাইম্যানের মতে, এই দশকটি ছিল পরিবর্তনের একটি সন্ধিক্ষণ।
বিজ্ঞাপনের জগতে প্রযুক্তি কোম্পানিগুলো এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করে। অ্যাপলের আইপড-এর বিজ্ঞাপনগুলো এক্ষেত্রে একটি দারুণ উদাহরণ। সাদা ব্যাকগ্রাউন্ডে কালো রঙের বিভিন্ন আকৃতির ছবি ব্যবহার করে তারা পণ্যের বিশেষত্ব না দেখিয়ে, নতুন জীবনধারার ধারণা বিক্রি করতে চেয়েছিল। হাইম্যান এই পদ্ধতির সঙ্গে ১৯৮৪ সালে অ্যাপলের বিখ্যাত বিজ্ঞাপনটির তুলনা করেছেন, যা টেলিভিশনে দেখানো হয়েছিল এবং ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছিল।
তবে, প্রযুক্তির অগ্রগতির মধ্যেও কিছু বিষয় ছিল যা সবসময়ই বিদ্যমান ছিল। হাইম্যানের মতে, “যৌনতা” ছিল এমনই একটি বিষয়। নারীদের ব্যবহার করে পণ্য বিক্রি করার প্রবণতা তখনও ছিল, যা বিভিন্ন বিতর্কিত বিজ্ঞাপনে দেখা গেছে।
ক্যালভিন ক্লেইন-এর বিজ্ঞাপন এবং স্কাই ব্লু ভদকার মতো কিছু পণ্যের বিজ্ঞাপন এক্ষেত্রে উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করা যেতে পারে।
এই দশকে সেলিব্রিটিদের ব্যবহারও বেড়ে যায়। ডেভিড বেকহ্যাম, প্যারিস হিলটন সহ আরও অনেকে বিভিন্ন পণ্যের বিজ্ঞাপনে অংশ নেন। এমনকি ডোনাল্ড ট্রাম্পও তার নিজস্ব সুগন্ধীর বিজ্ঞাপনে স্ত্রী মেলানিয়াকে নিয়ে হাজির হয়েছিলেন।
পরিবেশ সচেতনতা বাড়ার সাথে সাথে বিজ্ঞাপনেও এর প্রভাব দেখা যায়। টয়োটা প্রিয়াস-এর মতো পরিবেশ-বান্ধব গাড়ির বিজ্ঞাপন তৈরি হলেও, হামারের মতো বেশি জ্বালানি খরচ করা গাড়ির বিজ্ঞাপনও ছিল। হাইম্যান মনে করেন, এই বৈপরীত্যগুলো সেই সময়ের বিজ্ঞাপনগুলোর বৈশিষ্ট্য ছিল।
হাইম্যান মনে করেন, ২০০০ দশকের বিজ্ঞাপন ছিল এক ধরনের শেষযাত্রা। কারণ, এরপর থেকে সামাজিক মাধ্যম এবং ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের উত্থান বিজ্ঞাপন জগতে বড় পরিবর্তন নিয়ে আসে। এখন বিজ্ঞাপন তৈরির ক্ষেত্রে মানুষের বদলে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স-এর (AI) ব্যবহারও বাড়ছে, যা ভবিষ্যতে বিজ্ঞাপনের ধরন কেমন হবে, সে বিষয়ে নতুন প্রশ্ন তৈরি করেছে।
বইটিতে কিছু ব্যতিক্রমী বিজ্ঞাপনও স্থান পেয়েছে, যা হয়তো অনেকের কাছে হাস্যকর মনে হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, অ্যাক্স ড্রাই ডিওডোরেন্ট-এর একটি বিজ্ঞাপন, যেখানে একজন মডেলকে ওয়াইন হাতে এবং তার পাশে একটি অদ্ভুত পায়ের ছবি দেখা যায়। হাইম্যান প্রশ্ন করেন, এমন বিজ্ঞাপন তৈরির পেছনে কার মস্তিষ্ক ছিল?
সব মিলিয়ে, ‘অল-আমেরিকান অ্যাডস ২০০০’ বইটি সেই সময়ের বিজ্ঞাপনগুলোর একটি দলিল, যা আমাদের সেই সময়ের সংস্কৃতি, প্রযুক্তি এবং সমাজের পরিবর্তনের চিত্র দেখায়।
তথ্যসূত্র: দ্য গার্ডিয়ান