গরমে ত্বকের সুরক্ষা: আপনার জন্য নিরাপদ সানস্ক্রিন বাছবেন কীভাবে?
বাংলাদেশের আবহাওয়ায় সূর্যের তেজ বেশ মারাত্মক। গ্রীষ্মকালে এই তীব্রতা আরও বাড়ে, যা ত্বকের মারাত্মক ক্ষতি করতে পারে। ত্বককে সূর্যের ক্ষতিকারক রশ্মি থেকে বাঁচাতে সানস্ক্রিন ব্যবহারের কোনো বিকল্প নেই।
সম্প্রতি, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে উপলব্ধ ২,২০০টিরও বেশি সানস্ক্রিন বিশ্লেষণ করে একটি গবেষণা চালানো হয়েছে। এই গবেষণায় উঠে এসেছে গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য, যা আমাদের সকলের জানা প্রয়োজন।
যুক্তরাষ্ট্রের ‘এনভায়রনমেন্টাল ওয়ার্কিং গ্রুপ’ (EWG) নামক একটি সংস্থার করা এই গবেষণা অনুযায়ী, বাজারে উপলব্ধ সানস্ক্রিনগুলোর মধ্যে মাত্র এক-চতুর্থাংশ নিরাপদ এবং কার্যকর সুরক্ষা দিতে সক্ষম। তার মানে, সানস্ক্রিন কেনার সময় আমাদের সতর্ক থাকতে হবে, যাতে ত্বকের সুরক্ষার বদলে কোনো ক্ষতি না হয়।
গবেষণায় সানস্ক্রিনের উপাদানগুলোর কার্যকারিতা এবং ক্ষতিকারক রাসায়নিক উপাদানগুলোর উপস্থিতি বিশেষভাবে বিবেচনা করা হয়েছে।
গবেষণায় সানস্ক্রিনগুলোকে কয়েকটি প্রধান ভাগে ভাগ করা হয়েছে: বেবি ও শিশুদের জন্য সানস্ক্রিন, দৈনিক ব্যবহারের সানস্ক্রিন (এসপিএফ যুক্ত ময়েশ্চারাইজারসহ), এসপিএফ যুক্ত লিপ বাম এবং খেলাধুলা বা সমুদ্রের মতো বহিরঙ্গন কার্যক্রমের জন্য উপযুক্ত সানস্ক্রিন।
EWG-এর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, প্রায় ৫০০টির মতো সানস্ক্রিন তারা ব্যবহারের জন্য সুপারিশ করছেন।
তাহলে, কীভাবে সঠিক সানস্ক্রিন বেছে নেবেন? সানস্ক্রিন মূলত দু’ধরণের হয়ে থাকে: রাসায়নিক এবং খনিজ।
রাসায়নিক সানস্ক্রিন ত্বকের গভীরে শোষিত হয়ে সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মিকে শোষণ করে তাপ হিসেবে নির্গত করে। অন্যদিকে, খনিজ সানস্ক্রিন, যেমন – জিঙ্ক অক্সাইড এবং টাইটানিয়াম ডাইঅক্সাইড, সূর্যের রশ্মিকে প্রতিহত করে।
এই ধরনের সানস্ক্রিনগুলো সাধারণত ত্বকের জন্য বেশি নিরাপদ।
তবে, কিছু খনিজ সানস্ক্রিনে কার্যকারিতা বাড়ানোর জন্য রাসায়নিক উপাদান ব্যবহার করা হয়, যা উদ্বেগের কারণ। এই উপাদানগুলো হয়তো এসপিএফ-এর মাত্রা বাড়ায়, কিন্তু একই সাথে তা ত্বকের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
গবেষণায় আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উঠে এসেছে। কিছু রাসায়নিক উপাদান, যেমন অ্যাভোবেনজন, অক্সিবেনজন, অক্টক্রিলিন, ইত্যাদি ত্বকের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করতে পারে।
একবার রক্তে প্রবেশ করলে, এই রাসায়নিকগুলো শরীরের বিভিন্ন অংশে ছড়িয়ে পড়তে পারে এবং স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়াতে পারে। এমনকি, কিছু রাসায়নিক উপাদান হরমোনের ভারসাম্যহীনতা এবং প্রজনন স্বাস্থ্যেও প্রভাব ফেলতে পারে।
বর্তমানে সানস্ক্রিন প্রস্তুতকারক সংস্থাগুলো রাসায়নিক উপাদান ব্যবহারের পরিমাণ কমাচ্ছে, তবে এর নিরাপত্তা নিয়ে এখনও বিতর্ক রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য ও ঔষধ প্রশাসন (এফডিএ) ২০১৯ সালে সানস্ক্রিনের সুরক্ষা বিষয়ক কিছু নিয়মাবলী তৈরি করার প্রস্তাব দেয়, যা এখনো বাস্তবায়িত হয়নি।
তাহলে, আমাদের করণীয় কী?
- ১. সানস্ক্রিন কেনার আগে উপাদানগুলো ভালোভাবে দেখে নিন।
- ২. খনিজ-ভিত্তিক সানস্ক্রিন বেছে নেওয়ার চেষ্টা করুন, যেখানে জিঙ্ক অক্সাইড বা টাইটানিয়াম ডাইঅক্সাইড রয়েছে।
- ৩. এসপিএফ (SPF) মাত্রা নিয়ে বিভ্রান্ত হবেন না। উচ্চ এসপিএফ-এর সানস্ক্রিন বেশি সুরক্ষা দেয়, এমন ধারণা সবসময় সঠিক নয়।
- ৪. আপনার ত্বকের ধরন অনুযায়ী সানস্ক্রিন নির্বাচন করুন।
- ৫. এছাড়াও, সূর্যের তেজ থেকে বাঁচতে ছাতা ব্যবহার করুন, লম্বা হাতাযুক্ত পোশাক পরুন এবং সরাসরি সূর্যের আলোতে বেশিক্ষণ না থাকার চেষ্টা করুন।
মনে রাখবেন, ত্বককে সূর্যের ক্ষতিকারক রশ্মি থেকে বাঁচানো খুবই জরুরি। তাই, সঠিক সানস্ক্রিন ব্যবহার করে আপনার ত্বককে সুস্থ রাখুন।
তথ্যসূত্র: সিএনএন