বাংলার সংস্কৃতিতে সুপারি, পান এবং এর অনুষঙ্গ এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। অতিথি আপ্যায়ন থেকে শুরু করে সামাজিক অনুষ্ঠানে এর ব্যবহার বহুল প্রচলিত।
এবার থাইল্যান্ডে প্রায় চার হাজার বছর আগের মানুষের দাঁতের ওপর গবেষণা চালিয়ে বিজ্ঞানীরা এই উপমহাদেশের সংস্কৃতির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত সুপারি সেবনের প্রাচীনতম প্রমাণ খুঁজে পেয়েছেন।
সম্প্রতি প্রকাশিত একটি গবেষণা অনুযায়ী, থাইল্যান্ডের একটি প্রত্নতাত্ত্বিক স্থানে পাওয়া মানুষের দাঁতের ওপর অত্যাধুনিক বৈজ্ঞানিক কৌশল প্রয়োগ করে এই প্রমাণ পাওয়া গেছে।
গবেষকরা বলছেন, দাঁতের প্লেকের ওপর লিকুইড ক্রোমাটোগ্রাফি-মাস স্পেকট্রোমেট্রি (LC-MS) ব্যবহার করে সুপারি গাছের মূল উপাদান আরেকোলিন এবং আরেকাডিন-এর সন্ধান পাওয়া গেছে।
এই আবিষ্কারের ফলে ধারণা করা হচ্ছে, মানুষ কত আগে থেকে সুপারি ব্যবহার শুরু করেছিল, সেই বিষয়ে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে।
থাইল্যান্ডের চিয়াং মাই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ববিদ পিয়াউইট মুনখাম এই গবেষণার প্রধান ছিলেন।
তিনি জানান, এই আবিষ্কারের আগে পর্যন্ত সুপারি ব্যবহারের সবচেয়ে পুরনো প্রমাণ ছিল প্রায় ৩ হাজার বছর আগের।
তবে নতুন এই গবেষণায় ৪ হাজার বছর আগের প্রমাণ পাওয়ায় বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
গবেষণায় জানা গেছে, থাইল্যান্ডের নঙ রাচাওয়াট নামক একটি স্থানে পাওয়া মানুষের দাঁতের প্লেক থেকে নমুনা সংগ্রহ করা হয়।
এরপর এলসি-এমএস নামক পদ্ধতিতে সেই নমুনা বিশ্লেষণ করা হয়।
এই পদ্ধতিতে, বিজ্ঞানীরা প্লেকের রাসায়নিক উপাদানগুলো আলাদা করতে সক্ষম হন।
বিশেষভাবে, ‘সমাধি ১১’ নামে পরিচিত প্রায় ২৫ বছর বয়সী এক নারীর দাঁতে সুপারি সেবনের প্রমাণ পাওয়া গেছে।
গবেষকরা বলছেন, এই আবিষ্কার প্রমাণ করে যে, অতীতে মানুষ হয়তো দাঁতের কোনো দাগ ছাড়াই সুপারি খেত।
কারণ, অনেক সময় দাঁতে কোনো দৃশ্যমান দাগ না থাকলেও, প্লেকের মধ্যে সুপারি গাছের উপাদান পাওয়া যেতে পারে।
এই গবেষণার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন ব্যাংককের শিল্পাকর্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক থানিক লেচার্নরিত।
তিনি জানান, এই ধরনের বৈজ্ঞানিক কৌশল ব্যবহার করে অতীতে মানুষের জীবনযাত্রা, সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্য সম্পর্কে জানার সুযোগ তৈরি হয়েছে।
সুপারি চিবাানোর সঙ্গে মুখের ক্যান্সারের মতো স্বাস্থ্য ঝুঁকি জড়িত।
তবে গবেষকরা মনে করেন, এই আবিষ্কারের মাধ্যমে সুপারি ব্যবহারের ইতিহাস এবং এর সামাজিক গুরুত্ব সম্পর্কে আরও বিস্তারিত জানা যেতে পারে।
এই গবেষণা ভবিষ্যতে দক্ষিণ এশিয়ার সংস্কৃতি এবং সুপারি ব্যবহারের ইতিহাস সম্পর্কে নতুন তথ্য সরবরাহ করতে পারে।
তথ্যসূত্র: সিএনএন