বৈশ্বিক অঙ্গনে গুরুত্বপূর্ণ কিছু ঘটনা: চীনের প্রভাব বৃদ্ধি, মাদকবিরোধী যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপ, এবং আরও অনেক কিছু।
সাম্প্রতিক সময়ে আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। চীন একদিকে যেমন নিজেদের প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করছে, তেমনই যুক্তরাষ্ট্র তাদের মাদকবিরোধী যুদ্ধের অংশ হিসেবে সামরিক পদক্ষেপ নিয়েছে।
এছাড়াও, কুখ্যাত জেফরি এপস্টিনের সঙ্গে জড়িত নথি প্রকাশ এবং গুগলের বিরুদ্ধে অ্যান্টিট্রাস্ট মামলার রায়সহ বিভিন্ন ঘটনা বিশ্বজুড়ে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব:
চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উনের সঙ্গে এক বৈঠকে মিলিত হয়েছেন।
এই বৈঠকের মূল উদ্দেশ্য ছিল ঐক্যের বার্তা দেওয়া এবং পশ্চিমা প্রভাবমুক্ত একটি নতুন বিশ্ব ব্যবস্থা গড়ে তোলার ইঙ্গিত দেওয়া।
সাংহাই সহযোগিতা সংস্থার শীর্ষ সম্মেলনে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নেতারা যোগ দেন, যা চীনের নেতৃত্বকে আরও সুসংহত করতে সহায়ক হবে।
পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে চীনের বাণিজ্য যুদ্ধ, আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বেরিয়ে যাওয়া এবং সামাজিক মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের হুমকির প্রেক্ষাপটে শি জিনপিং ‘হেজেমনি’ এবং ‘গুণ্ডামি’র বিরুদ্ধে লড়াইয়ের ঘোষণা দিয়েছেন।
যুক্তরাষ্ট্রকে শীর্ষস্থানীয় ক্ষমতাধর দেশ হিসেবে চ্যালেঞ্জ জানাতে চীন উত্তর কোরিয়া, রাশিয়া ও ইরানের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করছে।
তিয়ানানমেন স্কয়ারে এক সামরিক কুচকাওয়াজে ১০,০০০ এর বেশি সেনা অংশ নেয়, যেখানে অত্যাধুনিক অস্ত্রশস্ত্রের প্রদর্শনী করা হয়।
এই কুচকাওয়াজে চীনের উত্থানকে ‘অনিবার্য’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়।
মাদকবিরোধী যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক পদক্ষেপ:
যুক্তরাষ্ট্র সরকার মাদক কারবারিদের বিরুদ্ধে তাদের অভিযান জোরদার করেছে।
সম্প্রতি, যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনী ক্যারিবীয় সাগরে ‘ট्रेन দে আরাগওয়া’ নামক একটি মাদক কার্টেলের সঙ্গে জড়িত একটি নৌকায় হামলা চালায়, যাতে ১১ জন নিহত হয়।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও এই ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
মাদক কার্টেলের বিরুদ্ধে সামরিক শক্তি প্রয়োগ মাদকবিরোধী যুদ্ধের একটি উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ।
ডোনাল্ড ট্রাম্প এক বিবৃতিতে এই কার্টেলটিকে ‘বৈদেশিক সন্ত্রাসী সংগঠন’ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন এবং তাদের বিরুদ্ধে ব্যাপক হত্যাকাণ্ডের, মাদক পাচার, নারী পাচার ও সহিংসতার অভিযোগ করেছেন।
জেফরি এপস্টিন সংক্রান্ত নথিপত্র প্রকাশ:
যুক্তরাষ্ট্রের হাউস ওভারসাইট কমিটি প্রয়াত যৌন পাচারকারী জেফরি এপস্টিনের সঙ্গে জড়িত থাকা বিভিন্ন নথিপত্র প্রকাশ করেছে।
বিচার বিভাগ থেকে প্রাপ্ত এই নথিপত্রে ফ্লাইট লগ, আদালতের নথি, কারাগারের ভিডিও ফুটেজ, এবং বিভিন্ন স্মারক অন্তর্ভুক্ত ছিল।
তবে, ডেমোক্র্যাটদের মতে, প্রকাশিত নথিগুলোর বেশিরভাগই আগে থেকেই জানা ছিল এবং এতে ভুক্তভোগীদের জন্য স্বচ্ছতা বা সুবিচারের কোনো ইঙ্গিত নেই।
রিপাবলিকান প্রতিনিধি থমাস ম্যাসি এপস্টিনের সঙ্গে জড়িত সমস্ত ফাইল প্রকাশের জন্য একটি বিল পেশ করেছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি:
যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্য ও মানব পরিষেবা বিভাগের (Department of Health and Human Services) ১,০০০ এর বেশি বর্তমান ও প্রাক্তন কর্মচারী দেশটির স্বাস্থ্যমন্ত্রী রবার্ট এফ. কেনেডি জুনিয়রের পদত্যাগ দাবি করেছেন।
তাদের অভিযোগ, কেনেডির নেতৃত্ব ‘সকল আমেরিকানের স্বাস্থ্যকে ঝুঁকির মুখে ফেলেছে’।
তারা ভ্যাকসিন নীতিতে ‘রাজনৈতিক আদর্শবাদীদের’ নিয়োগ এবং কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনের জরুরি ব্যবহারের অনুমোদন বাতিলের মতো পদক্ষেপের উদাহরণ দিয়েছেন।
এই কর্মীরা প্রেসিডেন্ট ও কংগ্রেসের প্রতি একজন নতুন স্বাস্থ্যমন্ত্রী নিয়োগের আহ্বান জানিয়েছেন, যিনি বিজ্ঞানভিত্তিক ও নিরপেক্ষ নীতি তৈরি করতে পারবেন।
বিভিন্ন জনস্বাস্থ্য সংস্থা ও আইনপ্রণেতারাও কেনেডির পদত্যাগের দাবি জানিয়েছেন।
গুগলের বিরুদ্ধে অ্যান্টিট্রাস্ট মামলার রায়:
যুক্তরাষ্ট্রের একটি আদালত গুগলকে তার অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেম বা ক্রোম ব্রাউজার বিক্রি করতে বাধ্য করতে রাজি হয়নি।
বিচারক অমিত মেহতা গুগলের কিছু প্রস্তাবিত প্রতিকার গ্রহণ করেছেন।
এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, গুগলকে তার কিছু সার্চ ডেটা প্রতিযোগীদের জন্য উন্মুক্ত করতে হবে।
গুগলকে ক্রোম, সার্চ, গুগল অ্যাসিস্ট্যান্ট এবং জেমিনি অ্যাপের মতো পরিষেবা বিতরণের সঙ্গে সম্পর্কিত কোনো একচেটিয়া চুক্তি করতেও নিষেধ করা হয়েছে।
বিচার বিভাগের মতে, এই রায় সাধারণ সার্চ পরিষেবার বাজারকে আরও উন্মুক্ত করার প্রয়োজনীয়তা স্বীকার করে।
অন্যান্য খবর:
এছাড়াও, সম্প্রতি অন্তত ১৫টি রাজ্যে ৯৫ জনের বেশি মানুষ অসুস্থ হয়েছেন।
ফ্যাশন জগতে ভোগের শীর্ষ সম্পাদকের দায়িত্বে আসছেন ক্লো ম্যাল।
কমেডি অনুষ্ঠান ‘স্যাটারডে নাইট লাইভ’ তাদের শিল্পী দলে নতুন পাঁচজনকে যুক্ত করেছে।
প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বৈদেশিক সাহায্য কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত তথ্য সংরক্ষণেও কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
তথ্যসূত্র: CNN