সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘ জীবনের ৭টি বিজ্ঞানসম্মত উপায় বর্তমানে মানুষের গড় আয়ু বাড়ানোর জন্য গবেষণা চলছে, এবং স্বাস্থ্য সচেতন মানুষের মধ্যে দীর্ঘকাল বাঁচার আগ্রহ বাড়ছে।
মানুষের গড় আয়ু বাড়ানোর জন্য বিজ্ঞানীরা বিভিন্ন চেষ্টা করছেন। স্বাস্থ্যকর জীবন যাপনের জন্য দরকার সঠিক খাদ্যাভ্যাস, নিয়মিত শরীরচর্চা এবং পর্যাপ্ত ঘুম।
একটি সুস্থ জীবনের জন্য বিজ্ঞানসম্মত কিছু উপায় নিয়ে আলোচনা করা হলো:
১. জেনেটিক্স (Genetics) সবসময় আপনার ভাগ্য নির্ধারণ করে না:
যদি আপনার পরিবারের কারো ক্যান্সার, হৃদরোগ অথবা আলঝেইমারের মতো রোগ থাকে, তবে আপনি হয়তো ভাবতে পারেন আপনারও সেই রোগ হওয়ার সম্ভবনা বেশি।
তবে বিজ্ঞানীদের মতে, মানুষের দীর্ঘায়ুর ক্ষেত্রে জেনেটিক্সের প্রভাব মাত্র ২০ শতাংশ। বাকি ৮০ শতাংশ নির্ভর করে জীবনযাত্রা, পরিবেশ এবং আমাদের চারপাশের পরিস্থিতির ওপর।
২. শরীরচর্চা : সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ‘বায়োহ্যাক’ (biohack):
সোশ্যাল মিডিয়া বা স্বাস্থ্য বিষয়ক বইগুলোতে বিভিন্ন ‘বায়োহ্যাক’-এর কথা বলা হয়। যেমন সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ, ক্রায়োথেরাপি অথবা স্টেম সেল চিকিৎসা ইত্যাদি।
তবে স্বাস্থ্যকর জীবন যাপনের জন্য খুব বেশি খরচ করার প্রয়োজন নেই। বিজ্ঞানীরা বলছেন, নিয়মিত শরীরচর্চা করাটাই এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি জরুরি।
গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত ব্যায়াম করলে হৃদরোগের ঝুঁকি কমে এবং জীবনের অতিরিক্ত সাড়ে চার বছর যোগ হয়।
সপ্তাহে ১৫০ মিনিট মাঝারি ব্যায়াম (যেমন নাচ বা যোগা) অথবা ৭৫ মিনিট কঠোর ব্যায়াম (যেমন সাঁতার) করা যেতে পারে।
এছাড়াও, ওজন তোলার ব্যায়াম সপ্তাহে অন্তত দু’বার করা উচিত। যারা জিমে যেতে পারেন না, তারা দিনের বিভিন্ন সময়ে কিছু সাধারণ ব্যায়াম করতে পারেন, যেমন: push-up, wall-sit অথবা lunges।
৩. স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস গড়ে তুলুন:
দীর্ঘ জীবন লাভের জন্য সবচেয়ে উপযোগী খাদ্যাভ্যাস হলো মেডিটেরিয়ান ডায়েট (Mediterranean diet)। এই ডায়েটে প্রচুর ফল, সবজি, শস্য, শিম ও বাদাম জাতীয় খাবার এবং স্বাস্থ্যকর ফ্যাট (healthy fat) খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়।
এই ধরনের খাবার গ্রহণ করলে শরীরের প্রদাহ কমে, কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে থাকে, ব্লাড প্রেশার ও ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে।
এর ফলে হৃদরোগ, ক্যান্সার, ডায়াবেটিস এবং আলঝেইমারের মতো রোগ হওয়ার ঝুঁকিও কমে।
চিকিৎসকদের মতে, প্রতি কেজি ওজনের জন্য ১.২ গ্রাম প্রোটিন গ্রহণ করা যেতে পারে।
অতিরিক্ত প্রসেস করা খাবার (ultra-processed foods) ত্যাগ করা উচিত। কারণ এতে হৃদরোগ, টাইপ-২ ডায়াবেটিস এবং মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক সমস্যা হওয়ার সম্ভবনা থাকে।
৪. পর্যাপ্ত ঘুম প্রয়োজন:
ঘুম আমাদের শরীরের জন্য খুব জরুরি।
ঘুমের সময় মস্তিষ্ক ও শরীরের ক্ষয় পূরণ হয়।
পর্যাপ্ত ঘুমের অভাবে শরীরের স্বাভাবিক কার্যকারিতা কমে যায়, যা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে শরীরের ওপর খারাপ প্রভাব ফেলে।
পর্যাপ্ত ঘুম না হলে হৃদরোগ, ক্যান্সার, ডায়াবেটিস, স্মৃতিভ্রংশ, উচ্চ রক্তচাপের মতো সমস্যা হতে পারে।
তাই প্রতিদিন ৭ ঘণ্টা ঘুমানো প্রয়োজন।
ঘুমের সময় শরীরকে বিশ্রাম দিতে হবে এবং ঘুমের আগে ভারী খাবার খাওয়া এড়িয়ে যাওয়া উচিত।
৫. সামাজিক সম্পর্ক বজায় রাখুন:
একাকীত্ব শুধু মানসিক স্বাস্থ্যের ওপরই প্রভাব ফেলে না, এটি আমাদের জীবনকেও কমিয়ে দিতে পারে।
সামাজিক সম্পর্ক আমাদের মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে।
এছাড়াও, এটি আত্মবিশ্বাস ও ভালো অভ্যাস তৈরি করতে সহায়তা করে।
সামাজিক সম্পর্ক বজায় রাখতে বন্ধু ও পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানো, খেলাধুলা করা, অথবা কোনো শখের প্রতি মনোযোগ দেওয়া যেতে পারে।
৬. ক্ষতিকর উপাদানগুলো এড়িয়ে চলুন:
ধূমপান ও মদ্যপান স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।
এছাড়া, পরিবেশ দূষণ, কীটনাশক, মাইক্রোপ্লাস্টিকস (microplastics) এবং রাসায়নিক দ্রব্য থেকেও দূরে থাকতে হবে।
রান্নার জন্য প্লাস্টিকের বদলে কাঁচ অথবা কাঠের জিনিস ব্যবহার করুন।
এছাড়া, বায়ু পরিশোধক ব্যবহার করা যেতে পারে।
৭. প্রযুক্তির ব্যবহার:
বিজ্ঞানীরা দীর্ঘদিন ধরে স্বাস্থ্য এবং দীর্ঘ জীবন নিয়ে গবেষণা করছেন।
তারা নতুন নতুন প্রযুক্তি তৈরি করছেন, যা আমাদের স্বাস্থ্যকে উন্নত করতে সাহায্য করতে পারে।
যেমন- শরীরের রোগ নির্ণয়ের জন্য নতুন পদ্ধতি, ক্যান্সার ও বার্ধক্য প্রতিরোধের জন্য নতুন ওষুধ তৈরি ইত্যাদি।
দীর্ঘ ও সুস্থ জীবন পাওয়ার জন্য এখনই পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।
স্বাস্থ্যকর জীবন যাপন শুরু করার জন্য কোনো নির্দিষ্ট সময়ের অপেক্ষা করার প্রয়োজন নেই।
তথ্য সূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক