ভাষার ভুল ব্যাখ্যা: প্রাক্তন এফবিআই প্রধানের একটি পোস্ট ঘিরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বিতর্ক।
আজকাল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশিত কোনো বার্তা বা শব্দ নিয়ে বিতর্ক হওয়াটা নতুন কিছু নয়। অনেক সময় সামান্য একটি শব্দ বা বাক্যের ভুল ব্যাখ্যা ভয়ানক পরিস্থিতির সৃষ্টি করতে পারে।
সম্প্রতি, যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন এফবিআই প্রধান জেমস কোমির একটি সামাজিক মাধ্যম পোস্ট ঘিরে তেমনই একটি বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। সেই পোস্টের বিষয়বস্তু এবং এর সম্ভাব্য অর্থ নিয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্প সহ অনেকে ভিন্নমত পোষণ করেছেন।
ঘটনার সূত্রপাত হয় কোমির একটি ইনস্টাগ্রাম পোস্টের মাধ্যমে। তিনি সমুদ্র সৈকতে কুড়িয়ে পাওয়া কিছু ঝিনুকের ছবি পোস্ট করেন এবং সেগুলোর বিন্যাস “৮৬ ৪৭” (86 47) আকৃতিতে সাজানো ছিল।
কোমি জানান, তিনি এটিকে নিছক রাজনৈতিক ইঙ্গিত হিসেবে ধরেছিলেন, কারণ ডোনাল্ড ট্রাম্প আমেরিকার ৪৭তম প্রেসিডেন্ট।
তাঁর মতে, “৮৬” শব্দটির অর্থ হলো কোনো কিছু থেকে মুক্তি পাওয়া বা সরিয়ে দেওয়া। যেমন, কোনো রেস্টুরেন্টে অবাঞ্ছিত কাউকে বের করে দেওয়া।
কিন্তু প্রাক্তন এফবিআই প্রধানের এই পোস্টটিকে ভিন্নভাবে ব্যাখ্যা করেছেন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং তাঁর সমর্থকেরা।
তাঁদের মতে, কোমি এই সাংকেতিক ভাষায় ট্রাম্পকে ‘সরিয়ে দেওয়ার’ কথা বলতে চেয়েছেন, যা কার্যত তাঁর হত্যার ইঙ্গিত দেয়।
এই বিতর্কের জেরে বিষয়টি এখন ফেডারেল তদন্তের আওতায় রয়েছে।
আসলে, “৮৬” (86) শব্দটির উৎপত্তির সঙ্গে জড়িয়ে আছে যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য পরিবেশন শিল্পের একটি পুরোনো রীতি।
ধারণা করা হয়, ১৯৩০-এর দশকে রেস্টুরেন্ট কর্মীদের মধ্যে কোনো মেনু আইটেম শেষ হয়ে গেলে সেটি বোঝানোর জন্য “৮৬” কোড ব্যবহার করা হতো।
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এর অর্থ বিস্তৃত হয়। কোনো অপ্রত্যাশিত বা অপ্রয়োজনীয় বিষয় অথবা ব্যক্তিকে বোঝাতেও শব্দটি ব্যবহৃত হতে শুরু করে।
এমনকি, কোনো ব্যক্তিকে সরিয়ে দেওয়া বা বিতাড়িত করার অর্থেও এর ব্যবহার দেখা যায়। তবে, কাউকে হত্যা করার অর্থে এর ব্যবহার খুব বেশি প্রচলিত নয়।
ভাষা এবং তার অর্থ সবসময়ই পরিবর্তনশীল। কোনো একটি শব্দ বা বাক্যের একাধিক অর্থ থাকতে পারে, যা নির্ভর করে প্রেক্ষাপট, সংস্কৃতি এবং ব্যবহারকারীর ওপর।
ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষাবিজ্ঞানের সহযোগী অধ্যাপক ড. নিকোল হলিডে মনে করেন, বর্তমানের মেরুকৃত সমাজে সবকিছুকেই যেন একটি ‘রোরশাচ টেস্ট’-এর মতো করে দেখা হয়।
আমাদের সমাজে ভাষার এই ভিন্নতা এবং এর সম্ভাব্য ভুল ব্যাখ্যা প্রায়ই বিভ্রান্তি তৈরি করে।
বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের যুগে, যেখানে সরাসরি আলোচনার সুযোগ কম থাকে, সেখানে ভুল বোঝাবুঝির সম্ভাবনা অনেক বেশি।
জেমস কোমির পোস্ট ঘিরে সৃষ্ট বিতর্কটি ভাষার এই জটিলতাকেই সামনে নিয়ে আসে। এটি বুঝিয়ে দেয়, কীভাবে একটি সাধারণ শব্দ বা প্রতীকও ভিন্ন ভিন্ন মানুষের কাছে ভিন্ন অর্থ বহন করতে পারে এবং এর ফলস্বরূপ তৈরি হতে পারে গুরুতর রাজনৈতিক বিতর্ক।
তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস