সমুদ্রে শিলার ফাঁদে: ৯ বছরের ছেলের মৃত্যুতে ভেঙে গেল পরিবারের হৃদয়!

অস্ট্রেলিয়ার সমুদ্র সৈকতে পাথরের ফাঁদে আটকে নয় বছর বয়সী এক শিশুর মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। ইস্টার সানডে’র দিনে নিউ সাউথ ওয়েলসের (NSW) সাউথ ওয়েস্ট রক্স-এ ঘটে যাওয়া এই হৃদয়বিদারক ঘটনায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।

কাইসন গ্রিভস নামের ওই শিশুটি পরিবারের সঙ্গে ছুটি কাটাতে গিয়েছিল।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত ২০শে এপ্রিল, রবিবার স্থানীয় সময় বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে জরুরি বিভাগে ফোন যায়। খবর পাওয়া যায়, সাউথ ওয়েস্ট রক্সের সৈকতে পাথরের মধ্যে একটি শিশু আটকা পড়েছে।

দ্রুত ঘটনাস্থলে ছুটে আসে পুলিশ, দমকল বাহিনী এবং সার্ফ লাইফ সেভার্স NSW-এর উদ্ধারকারী দল। অনেক চেষ্টার পরও শিশুটিকে জীবিত উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। সেখানেই তার মৃত্যু হয়।

পুলিশ জানিয়েছে, কিভাবে এই ঘটনা ঘটল, তা জানতে তদন্ত চলছে।

কাইসন কুইন্সল্যান্ডের বাসিন্দা ছিল এবং পরিবারের সঙ্গে ছুটি কাটাতে এসেছিল।

কাইসনের পরিবার এক বিবৃতিতে জানায়, “কাই ছিল প্রাণবন্ত একটি ছেলে। সে ছিল দুঃসাহসী, জেদী এবং হাসিখুশি। সবসময় তার মুখে একটা দুষ্টু হাসি লেগে থাকত।

সে ছিল অসাধারণ এক বড় ভাই। তার ভাইয়ের মতে, যেন দেবদূতেরা কাইসনের জন্য কাঁদছে, তাই বৃষ্টি হচ্ছে। আমাদের হৃদয় ভেঙে গেছে।”

স্থানীয় সংবাদ মাধ্যম সূত্রে জানা যায়, ২২শে এপ্রিল, মঙ্গলবার সাউথ ওয়েস্ট রক্সের মেইন সৈকতে শত শত মানুষ কাইসনকে শ্রদ্ধা জানাতে সমবেত হয়।

কাইসনের মা, ব্রুক, ফেসবুকে এক আবেগপূর্ণ পোস্টে যারা উপস্থিত ছিলেন, তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তিনি লেখেন, “যারা আমার ছেলেকে বাঁচানোর চেষ্টা করেছেন, তাদের প্রতি আমরা চির কৃতজ্ঞ।

আমরা জানি, আপনারা আপনাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করেছেন। কাই আমার জীবনে রং এনেছিল, আমি সবসময় তাকে আমার সূর্য এবং তার ভাইকে আমার চাঁদ বলতাম।

কাই ছিল একজন অভিযাত্রী। সে যা করতে চাইত, তাকে কেউ আটকাতে পারত না। সে ছিল ভালোবাসার এক ঘূর্ণিঝড়। সবসময় আমাদের চেয়ে এক কদম এগিয়ে থাকত।”

কাইসনের মা আরও জানান, কাই বড় হয়ে রেস কার ড্রাইভার হতে চেয়েছিল এবং তার প্রিয় রং ছিল কমলা ও হলুদ। কারণ, সে সনিক দ্য হেজহগ-কে ভালোবাসত।

ব্রুক আরও লেখেন, “আমরা যখন তাকে ছাড়া জীবন কাটাচ্ছি, আপনারা দয়া করে জানবেন, আপনারা আমাদের দুঃখের স্থানটিকে ভালোবাসার স্থানে পরিণত করেছেন। আমরা আপনাদের ভুলব না। আমরা যখন শক্তি ফিরে পাব, তখন আবার আসব।

এখন, আপনারা আপনাদের প্রিয়জনদের কাছাকাছি থাকুন এবং তাদের ভালোবাসার কথা জানান।”

পুলিশ জানিয়েছে, তারা এই ঘটনার তদন্ত প্রতিবেদন তৈরি করছে।

মিড নর্থ কোস্ট পুলিশ জেলার পরিদর্শক পিটার ওয়ালটন জানান, “আমি কল্পনা করতে পারি, পরিবারটি কতটা শোকের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। সেখানে উপস্থিত সকলের জন্য পরিস্থিতিটা খুবই কঠিন ছিল।

প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, সে সম্ভবত পাথরগুলোর উপর খেলছিল এবং ঢেউয়ের কারণে পাথরের মধ্যে আটকা পড়ে যায়।”

এই ঘটনার পর কাইসনের পরিবারের জন্য একটি GoFundMe ক্যাম্পেইন খোলা হয়েছে।

এতে এখন পর্যন্ত প্রায় ৫৭,১০০ অস্ট্রেলীয় ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৪২ লাখ টাকার বেশি) উঠেছে।

তথ্য সূত্র: পিপল

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *