৯ বছরের মেয়ের কঠিন রোগ! খেলার ইচ্ছে থাকলেও, কেন খেলতে পারে না?

৯ বছর বয়সী তায়মা, ফুলের ছবি আঁকতে ভালোবাসে, তার ভাই আরসানের সাথে খেলতে পছন্দ করে, আর গোলাপী রঙ তার খুব প্রিয়।

কিন্তু অন্য শিশুদের মতো গ্রীষ্মকালে তার খেলাধুলা বা সাঁতার কাটার সুযোগ নেই। কারণটা শুনলে হয়তো কষ্ট হবে। তায়মার চামড়ার একটি বিরল রোগ রয়েছে, যার নাম এপিডার্মোলাইসিস বুলোসা বা ইবি (EB)।

এই রোগে আক্রান্ত শিশুদের চামড়া খুব সহজেই ফেটে যায় এবং সেখানে ক্ষত সৃষ্টি হয়।

যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস অঙ্গরাজ্যের বাসিন্দা তায়মার মা, জিনেব লালেজ জানান, গরম আবহাওয়া তার মেয়ের জন্য খুবই কষ্টকর। সামান্য রোদ বা পোকামাকড়ের কামড়ও তার শরীরে মারাত্মক যন্ত্রণা সৃষ্টি করতে পারে।

তাই গ্রীষ্মের বেশিরভাগ সময়টা তাকে ঘরের ভেতরেই কাটাতে হয়।

ইবি-র সবচেয়ে মারাত্মক রূপ হলো ডিস্ট্রফিক ইবি। এই রোগে আক্রান্ত হলে চামড়ার ক্ষত সারতে অনেক বেশি সময় লাগে।

তায়মার পিঠের ক্ষতটি সাত বছর ধরে ভালো হয়নি। এই রোগের কারণে তায়মাকে বিশেষ ব্যান্ডেজ এবং পুরো শরীর ঢাকা পোশাক পরতে হয়, যা তার চামড়াকে রক্ষা করে।

ডা. ডায়ানা রুশ, যিনি ম্যাসাচুসেটস অঙ্গরাজ্যের উম্যাস মেমোরিয়াল মেডিকেল সেন্টারে ইবি ক্লিনিকের পরিচালক এবং তায়মার চিকিৎসক, তিনি বলেন, “প্রতিবার ড্রেসিং পরিবর্তন করা বা ইনজেকশন দেওয়া তায়মার জন্য যন্ত্রণাদায়ক।

তবে সে সবসময় হাসিমুখে সবকিছু সহ্য করে। মাত্র ৯ বছর বয়সেও তার এই মনোবল দেখে আমি বিস্মিত।”

জন্মের পরপরই তায়মার শরীরে এই রোগের লক্ষণ দেখা যায়। ডাক্তাররা জানান, জন্মের সময় তার মুখের ভেতরে ফোস্কা ছিল এবং চামড়া উঠে আসছিল।

এরপর তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। মা জিনেব জানান, তখন তিনি খুবই ভেঙে পড়েছিলেন।

চিকিৎসকরা জানান, এই রোগের কোনো নিরাময় নেই। যা কিছু করার, তা হলো তার চামড়াকে রক্ষা করা।

তায়মার মা-বাবা, জিনেব এবং তার স্বামী তারিক, তাদের মেয়ের সেরা জীবন নিশ্চিত করতে দিনরাত কাজ করেন। তারা সব কঠিন সময়ে তায়মার পাশে থাকেন।

ইবি-র কারণে ব্যথার পাশাপাশি আরও কিছু সমস্যা দেখা দেয়, যেমন – সংক্রমণ, অপুষ্টি এবং ত্বকের ক্যান্সার।

কারো কারো ক্ষেত্রে আঙুলগুলোও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। রোগের তীব্রতার ভিন্নতার কারণে একেকজনের ক্ষেত্রে একেক রকম সমস্যা দেখা যায়।

চিকিৎসকরা জানান, ইবি-র কারণে রোগীদের জীবনকাল বিভিন্ন হতে পারে। তবে গুরুতর অসুস্থতাক্রান্ত রোগীদের ক্ষেত্রে সাধারণত ৩০ বছর বয়সের মধ্যে মৃত্যুর ঝুঁকি থাকে।

তায়মার ব্যথার জন্য মরফিন এবং আইবুপ্রোফেন দিতে হয়। গোসলের সময়টাতেও তার খুব কষ্ট হয়।

তায়মা জানে, “আমি খেলার মাঠে খেলতে পারি না।” কারণ সেখানে আঘাত পাওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি।

তায়মার মা বলেন, “কিছু শিশুর শরীর বাইরে থেকে ভিন্ন হতে পারে। তবে প্রত্যেক শিশুই সুন্দর।”

তিনি আরও বলেন, “প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠেই তায়মা আমাকে জড়িয়ে ধরে, চুমু খায়।”

“আমি প্রতিদিন তায়মাকে বলি, তুমি শক্তিশালী, তুমি সাহসী।

তুমি আমার সুন্দর মেয়ে।”

তথ্য সূত্র: পিপল

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *