৯১১-এ ভুল: মেয়ের জীবন গেল, আজও অপেক্ষায় মা!

শিরোনাম: জরুরি পরিষেবা: উন্নত বিশ্বে ৯১১-এর দুর্বলতা, বাংলাদেশের জন্য শিক্ষণীয়?

প্রতি বছর, সারা বিশ্বে জরুরি অবস্থার জন্য কোটি কোটি মানুষ একটি নম্বরে ফোন করে – সেটি হলো ৯১১। উন্নত দেশগুলোতেও এই জরুরি পরিষেবা ব্যবস্থা দুর্বলতার শিকার, বিশেষ করে প্রযুক্তি, কর্মী এবং অর্থায়নের অভাবে। সম্প্রতি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ঘটা কিছু ঘটনা সেই দুর্বলতাগুলোকেই আবার সামনে নিয়ে এসেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে (DC) ঘটে যাওয়া একটি ঘটনা এখনো অনেককে ব্যথিত করে। ২০২০ সালের জুন মাসে, শীলা শেপার্ড নামের একজন নারীর ৬০তম জন্মদিনের প্রস্তুতি চলছিল। এরই মধ্যে তার নাতনী মারিয়া ৯১১-এ ফোন করে তার মায়ের অসুস্থতার খবর জানায়। মারিয়া তার মায়ের শ্বাসকষ্ট শুরু হওয়ায় প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু সাহায্য আসার আগেই সব শেষ হয়ে যায়।

সমস্যাটা হলো, জরুরি সাহায্য চেয়ে ফোন করার পরেও, অ্যাম্বুলেন্স ভুল ঠিকানায় পাঠানো হয়। পরে জানা যায়, কর্মীদের ভুলের কারণে সাহায্য আসতে দেরি হয় এবং এর ফলস্বরূপ শীলার মৃত্যু হয়। ডি.সি.-র অফিস অফ ইউনিফায়েড কমিউনিকেশনস (OUC) এই ঘটনার জন্য সরাসরি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি। তবে তারা জানিয়েছে, জরুরি পরিষেবা উন্নত করতে তারা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে জরুরি পরিষেবাগুলোর দুর্বলতা শুধু একটি শহরের সমস্যা নয়। সারা দেশেই কর্মীর অভাব, পুরোনো প্রযুক্তি এবং পর্যাপ্ত অর্থের অভাবে অনেক ত্রুটি দেখা যায়। এই পরিস্থিতিতে জরুরি অবস্থার সময় ফোন করলে সঠিক সময়ে সাহায্য পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে।

৯১১ মূলত একটি কেন্দ্রীয় হেল্পলাইন, যেখানে জরুরি অবস্থার জন্য ফোন করা হয়। এই পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত কর্মীরা – যাদের বাংলায় হয়তো ‘জরুরি কল অপারেটর’ বলা যেতে পারে – তারা ঘটনার গুরুত্ব বিচার করে দ্রুত ব্যবস্থা নেন। জরুরি কর্মীদের প্রাথমিক প্রশিক্ষণ এবং উপযুক্ত পরিকাঠামো না থাকার কারণে প্রায়ই ভুল হয়। অনেক সময় জরুরি কল সেন্টারে ফোন আসে, কিন্তু কর্মীর অভাবে দ্রুত সাড়া দেওয়া সম্ভব হয় না।

যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইমার্জেন্সি নাম্বার অ্যাসোসিয়েশন (NENA)-এর মতে, জরুরি পরিষেবার উন্নতির জন্য ফেডারেল সরকারের সুস্পষ্ট নির্দেশিকা এবং পর্যাপ্ত অর্থ প্রয়োজন। উন্নত প্রযুক্তির অভাবে অনেক সময় জরুরি কলকারীদের কাজ করতে সমস্যা হয়। উদাহরণস্বরূপ, কিছু অঞ্চলে এখনো পুরনো পদ্ধতির ম্যাপ ব্যবহার করা হয়, যেখানে ফোনকারীর সঠিক অবস্থান শনাক্ত করা কঠিন।

এই সমস্যার সমাধানে কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে কলকারীদের অবস্থান শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে। এছাড়া, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (AI) ব্যবহারের মাধ্যমে জরুরি কলগুলি আরও দ্রুততার সঙ্গে পরিচালনা করার পরিকল্পনা করা হচ্ছে।

তবে, এই ধরনের উন্নয়ন সব জায়গায় সম্ভব হচ্ছে না, কারণ পর্যাপ্ত অর্থের অভাব রয়েছে। বর্তমানে, উন্নত দেশগুলোতেও জরুরি পরিষেবার মান উন্নত করার জন্য জাতীয় পর্যায়ে একটি সমন্বিত পরিকল্পনা প্রয়োজন।

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে যদি বিষয়টি বিবেচনা করি, তাহলে জরুরি পরিষেবা উন্নত করার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের অভিজ্ঞতা থেকে অনেক কিছু শেখার আছে। আমাদের দেশেও জরুরি অবস্থার জন্য একটি সমন্বিত ব্যবস্থা তৈরি করা জরুরি, যেখানে উন্নত প্রযুক্তি, প্রশিক্ষিত কর্মী এবং পর্যাপ্ত অর্থ থাকবে। উন্নত বিশ্বের এই দুর্বলতাগুলো আমাদের জরুরি পরিষেবা ব্যবস্থা আরো শক্তিশালী করতে সাহায্য করতে পারে।

তথ্য সূত্র: CNN

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *