আতঙ্ক! ৯৮৮-এ এলজিবিটিকিউ যুবকদের সহায়তা কি বন্ধ হতে চলেছে?

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে একটি সম্ভাব্য বাজেট প্রস্তাবনা নিয়ে উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে, যেখানে আত্মহত্যা প্রতিরোধে সহায়তাকারী একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের বিশেষ পরিষেবা বন্ধ করার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। প্রস্তাবটি যদি কার্যকর হয়, তবে এর ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে যৌন সংখ্যালঘু (এলজিবিটিকিউ+) সম্প্রদায়ের তরুণ-তরুণীরা।

যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্যখাতে ব্যয় সংকোচনের উদ্দেশ্যে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রশাসন এই পদক্ষেপ নিতে পারে বলে জানা গেছে। সম্প্রতি ফাঁস হওয়া একটি অভ্যন্তরীণ নথিতে এই পরিকল্পনার ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। জানা গেছে, মানসিক স্বাস্থ্যসেবার জন্য বরাদ্দকৃত অর্থের পরিমাণ কমাতে চাইছে সরকার এবং এর অংশ হিসেবে বিদ্যমান কিছু কর্মসূচি হয়তো বাতিল করা হতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রে জরুরি অবস্থার জন্য ৯১১ নম্বরের মতো মানসিক স্বাস্থ্য সহায়তার জন্য ২০১৮ সালে ‘৯৮৮’ নম্বরের একটি হটলাইন চালু করা হয়। এই নম্বরে ফোন করে যে কেউ মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক পরামর্শ এবং সংকটকালীন সহায়তা পেতে পারেন। বিশেষভাবে, এলজিবিটিকিউ+ সম্প্রদায়ের মানুষদের জন্য এখানে আলাদা পরিষেবা চালু করা হয়, যেখানে তাদের প্রয়োজন অনুযায়ী প্রশিক্ষিত পরামর্শদাতারা সহায়তা করেন। এই হটলাইনের মাধ্যমে আত্মহত্যা প্রতিরোধের জন্য কাজ করা হয়। এলজিবিটিকিউ+ যুবকদের জন্য বিশেষ পরিষেবাটি সম্ভবত আগামী অক্টোবর মাস থেকে বন্ধ হয়ে যেতে পারে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এলজিবিটিকিউ+ সম্প্রদায়ের তরুণদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা অন্যদের তুলনায় অনেক বেশি। উদ্বেগের বিষয় হলো, বাজেট প্রস্তাবনায় এলজিবিটিকিউ+ যুবকদের জন্য বিশেষভাবে তৈরি করা পরিষেবাটি বন্ধ করার কথা বলা হয়েছে। এই সিদ্ধান্তের ফলে একটি বিশাল সংখ্যক তরুণ-তরুণী তাদের প্রয়োজনীয় মানসিক স্বাস্থ্য সহায়তা থেকে বঞ্চিত হবে।

সংস্থা ‘দ্য ট্রেভর প্রজেক্ট’-এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) জেমস ব্ল্যাক এক বিবৃতিতে বলেছেন, “আত্মহত্যা প্রতিরোধ ঝুঁকির সঙ্গে সম্পর্কিত, পরিচয়ের সঙ্গে নয়। ৯৮৮ পরিষেবা থেকে এলজিবিটিকিউ+ যুবকদের জন্য বিশেষ পরিষেবা বন্ধ করে দিলে, কেবল তাদের সহায়তার পথ বন্ধ করা হবে না, বরং তাদের জীবন ঝুঁকির মুখে পড়বে।” তিনি আরও উল্লেখ করেন, এই কর্মসূচিগুলো তরুণ প্রজন্মের মানসিক স্বাস্থ্য সংকটের সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সাল থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ১ কোটি ৪৫ লক্ষ মানুষ ৯৮৮ হটলাইনে ফোন, টেক্সট বা চ্যাটের মাধ্যমে মানসিক স্বাস্থ্য সহায়তা চেয়েছেন। এদের মধ্যে প্রায় ১২ লক্ষ মানুষ এলজিবিটিকিউ+ বিশেষ পরিষেবাটি ব্যবহার করেছেন।

প্রাক্তন সরকারি কর্মকর্তা মিরিয়াম ডেলফিন-রিত্তমন এই সিদ্ধান্তের সম্ভাব্য প্রভাব নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি মনে করেন, এই ধরনের পদক্ষেপের ফলে মানসিক স্বাস্থ্য পরিষেবা দুর্বল হয়ে যেতে পারে। এছাড়াও, যারা বর্তমানে মানসিক স্বাস্থ্য সহায়তা পাচ্ছেন, তাদের জন্য উদ্বেগের কারণ হবে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আত্মহত্যা প্রতিরোধের ক্ষেত্রে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। মানসিক স্বাস্থ্যসেবা সকলের জন্য সহজলভ্য করা প্রয়োজন। বিশেষ করে, যারা সমাজের দুর্বল ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত, তাদের জন্য পর্যাপ্ত সহায়তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।

তথ্যসূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *