বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বাংলাদেশে হৃদরোগের ঝুঁকি মারাত্মকভাবে বেড়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। অস্ট্রেলিয়ার একদল গবেষকের নতুন গবেষণা বলছে, গরম আবহাওয়ার কারণে হৃদরোগের সমস্যা আরও বাড়বে, যা আগামী ২৫ বছরে দ্বিগুণেরও বেশি হতে পারে।
জলবায়ু পরিবর্তনের বর্তমান ধারা অব্যাহত থাকলে এই পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। গবেষণাটি ইউরোপিয়ান হার্ট জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, গরম আবহাওয়ায় মানুষের হৃদযন্ত্রকে অতিরিক্ত পরিশ্রম করতে হয়, যা হৃদরোগীদের জন্য মারাত্মক ঝুঁকি তৈরি করতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে, ২০০৩ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত হৃদরোগের কারণে প্রতি বছর সুস্থ জীবনের প্রায় ৪৯ হাজার ৪’শ ৮৩ বছর নষ্ট হয়েছে।
গবেষকরা সতর্ক করে বলেছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ভবিষ্যতে চরম আবহাওয়ার প্রভাব আরও বাড়বে।
গবেষণায় বলা হয়েছে, হৃদরোগ বা মৃত্যুর জন্য দায়ী মোট ঘটনার ৭.৩ শতাংশ চরম আবহাওয়ার কারণে হয়ে থাকে। গবেষকরা বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দেখেছেন, ২০৫০ সাল নাগাদ এই সংখ্যা দ্বিগুণ বা তিনগুণ পর্যন্ত বাড়তে পারে।
জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক আন্তঃসরকারি প্যানেলের (Intergovernmental Panel on Climate Change – IPCC) বিভিন্ন হিসাবের ওপর ভিত্তি করে এই পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।
অস্ট্রেলিয়ায় এই গবেষণা করা হলেও, এর মূল ধারণা বিশ্বজুড়ে প্রযোজ্য। কারণ, তাপমাত্রা বাড়ার সঙ্গে হৃদরোগের ঝুঁকির সম্পর্ক বিশ্বজুড়েই বিদ্যমান।
গবেষক দলের প্রধান, অ্যাডিলেইড বিশ্ববিদ্যালয়ের জিংওয়েন লিউ বলেছেন, “গবেষণাটি আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলা এবং প্রতিরোধের কৌশল তৈরি করতে সহায়তা করবে।
গবেষকরা আরও বলছেন, মানুষের জীবনযাত্রায় পরিবর্তন এনে এবং বিভিন্ন পদক্ষেপের মাধ্যমে গরমের প্রভাব কমানো সম্ভব। উদাহরণস্বরূপ, শহরগুলোতে তাপমাত্রা কমানোর পরিকল্পনা করা যেতে পারে, জনস্বাস্থ্য বিষয়ক প্রচারণা চালানো যেতে পারে এবং গরম আবহাওয়ার সময় জরুরি অবস্থার জন্য উন্নত প্রস্তুতি নেওয়া যেতে পারে।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশ একটি ঝুঁকিপূর্ণ দেশ। এখানে প্রায়ই বন্যা, ঘূর্ণিঝড় এবং তীব্র গরমের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেখা যায়।
তীব্র গরমে মানুষের হৃদরোগের ঝুঁকি বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। আমাদের দেশের মানুষের জীবনযাত্রার ধরন এবং স্বাস্থ্য ব্যবস্থার দুর্বলতাও পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া দরকার। একইসঙ্গে, জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় গুরুত্ব দিতে হবে।
শহরগুলোতে গাছ লাগানো, জলাধার তৈরি করা এবং মানুষকে গরম থেকে বাঁচানোর জন্য সচেতন করা এখন সময়ের দাবি। হৃদরোগের চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রশিক্ষিত করাও জরুরি।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা