মেক্সিকোর ল্যান্ডস্কেপ শিল্পী হোসে মারিয়া ভেলasco-র শিল্পকর্ম: দেশের চেতনার প্রতিচ্ছবি
শিল্পকলার জগতে এমন কিছু শিল্পী আছেন, যারা শুধু ছবি আঁকেননি, বরং একটি জাতির আত্মপরিচয় ফুটিয়ে তুলেছেন তাঁদের তুলির আঁচড়ে। হোসে মারিয়া ভেলasco ছিলেন তাঁদেরই একজন।
উনিশ শতকের এই মেক্সিকান শিল্পী তাঁর ল্যান্ডস্কেপ চিত্রের মাধ্যমে মেক্সিকোর প্রকৃতি, সংস্কৃতি ও ইতিহাসের এক অসাধারণ চিত্ররূপ দিয়েছেন। তাঁর কাজগুলো শুধু নান্দনিকতাই যোগ করেনি, বরং মেক্সিকোর জাতীয়তাবোধ গঠনেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।
বর্তমানে লন্ডনের ন্যাশনাল গ্যালারিতে ভেলasco-র কাজের একটি বিশেষ প্রদর্শনী চলছে, যা বিশ্বজুড়ে তাঁর শিল্পকর্মের নতুন করে মূল্যায়ন করার সুযোগ এনে দিয়েছে।
ভেলasco ১৮৪০ সালে জন্ম গ্রহণ করেন। শৈশবে পিতৃহারা হওয়ার পর দারিদ্র্যের মধ্যে তাঁর বেড়ে ওঠা।
পরে তিনি দেশের প্রথম আর্ট স্কুলে ভর্তি হন এবং সেখানে ইতালীয় এক শিক্ষকের সান্নিধ্যে আসেন। তাঁর প্রাথমিক কাজগুলোতে ইউরোপীয় রোমান্টিক ধারার প্রভাব দেখা গেলেও, পরবর্তীতে তিনি নিজস্ব একটি শৈলী তৈরি করেন।
ভেলasco-র ছবিতে প্রকৃতির গভীরতা ও সূক্ষ্মতা বিশেষভাবে ফুটে উঠেছে। তিনি ভূ-প্রকৃতি, উদ্ভিদ ও প্রাণীকুলের বৈজ্ঞানিক অধ্যয়নকে তাঁর শিল্পকর্মে যুক্ত করেছেন।
তাঁর ক্যানভাসে একদিকে যেমন দেখা যায় বিশাল প্রকৃতির বিস্তার, তেমনই রয়েছে মানুষের তৈরি নানা স্থাপনা – যা পুরনো ও নতুনের এক চমৎকার সহাবস্থান তৈরি করে।
তাঁর বিখ্যাত চিত্রকর্মগুলির মধ্যে অন্যতম হলো ‘ভ্যালি অফ মেক্সিকো ফ্রম দ্য হিল অফ সান্তা ইসাবেল’। এই ছবিতে মেক্সিকোর জাতীয় পতাকার প্রতীক – একটি ক্যাকটাসের উপর ঈগল পাখির ছবি ফুটিয়ে তোলা হয়েছে, যা মেক্সিকোর সংস্কৃতির গভীরতা ও ঐতিহ্যের প্রতীক।
এছাড়াও ‘কার্ডন, স্টেট অফ ওআক্সাকা’, ‘দ্য গোয়াডার্ড অফ সান অ্যাঞ্জেল’, ‘দ্য টেক্সটাইল মিল অফ লা ক্যারোলিনা, পুয়েবলা’, এবং ‘দ্য গ্রেট কমেট অফ ১৮৮২’ এর মতো ছবিগুলোও তাঁর শিল্প প্রতিভার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
ভেলasco-র কাজের খ্যাতি শুধু মেক্সিকোর মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল না। তৎকালীন সময়ে, দেশটির সরকার তাঁর চিত্রকর্মগুলো আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও পাঠিয়েছিল।
এমনকি, তিনি নিজে মেক্সিকো ত্যাগ না করলেও, তাঁর ছবিগুলো বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধান এবং পোপের কাছে উপহার হিসেবে পাঠানো হয়েছিল। তাঁর মৃত্যুর পর, শিল্পী হিসেবে ভেলasco-র খ্যাতি কিছুটা কমে গেলেও, পরবর্তীতে দিয়েগো রিভেরার মতো শিল্পীর আগ্রহের কারণে তিনি আবার মেক্সিকোর সংস্কৃতিতে গুরুত্বপূর্ণ স্থান লাভ করেন।
লন্ডনের ন্যাশনাল গ্যালারিতে অনুষ্ঠিত এই প্রদর্শনীতে ভেলasco-র ৩০টিরও বেশি চিত্রকর্ম ও ড্রয়িং স্থান পেয়েছে। যেখানে তাঁর শিল্পকর্মের পাশাপাশি বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধিৎসার দিকটিও তুলে ধরা হয়েছে।
এই প্রদর্শনীতে ভেলasco-র কাজের মাধ্যমে দর্শকদের মেক্সিকোর ইতিহাস, সংস্কৃতি এবং প্রকৃতির সঙ্গে পরিচিত হওয়ার সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে।
এই প্রদর্শনী প্রমাণ করে, ভেলasco-র শিল্পকর্ম শুধুমাত্র একটি দেশের ভৌগোলিক চিত্র নয়, বরং একটি জাতির আত্মপরিচয় এবং সংস্কৃতির প্রতিচ্ছবি।
তাঁর কাজ মেক্সিকোর মানুষের মনে গভীর দেশপ্রেমের অনুভূতি জাগিয়ে তোলে, যা বাংলাদেশের মানুষের কাছেও অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক।
আমাদের দেশের খ্যাতিমান শিল্পী জয়নুল আবেদীন যেমন তাঁর ছবি দিয়ে বাংলাদেশের মানুষের মন জয় করেছেন, তেমনই ভেলasco মেক্সিকোর মানুষের কাছে শ্রদ্ধার পাত্র।
তথ্যসূত্র: আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা।