আমেরিকার এক অসাধারণ স্থান, যা আজও অনেকের কাছে অজানা!

এভারগ্রেডস: আমেরিকার এক বিস্ময়কর জলাভূমি, যা প্রকৃতির এক অপূর্ব লীলাভূমি।

যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার দক্ষিণে অবস্থিত এভারগ্রেডস ন্যাশনাল পার্ক, যা প্রকৃতির এক অসাধারণ সৃষ্টি। বিশাল জলাভূমি, ঘাসবন আর বনের এক মিশ্রণ, যা জীববৈচিত্র্যের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।

এককালে একে “অকেজো জলাভূমি” হিসেবে বিবেচনা করা হলেও, বর্তমানে এটি আমেরিকার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় উদ্যান হিসেবে পরিচিত।

এই অঞ্চলের জলধারা কিসিম্মি নদী থেকে উৎপন্ন হয়ে ওকিচোবি হ্রদের দিকে প্রবাহিত হয়। হ্রদটি বিশাল, অগভীর এবং এর কোনো স্বাভাবিক নির্গমন পথ নেই।

অতীতে হ্রদের জল উপচে দক্ষিণ ফ্লোরিডার নিচু ভূমি প্লাবিত করত, যা এখানকার অনন্য বাস্তুতন্ত্র তৈরি করেছে। বিশাল এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই পার্কটি যেন প্রকৃতির এক অপরূপ চিত্র।

এখানকার জলজ পরিবেশে রয়েছে নানা ধরনের উদ্ভিদ ও প্রাণী, যা দর্শকদের আকৃষ্ট করে। নানা প্রজাতির পাখি, কুমির, এবং অন্যান্য সরীসৃপ ছাড়াও এখানে দেখা মেলে বিরল কিছু প্রাণীর।

একসময় এই এলাকার আদিবাসী ক্যালুসা সম্প্রদায়ের মানুষের বসবাস ছিল। পরবর্তীতে ইউরোপীয়দের আগ্রাসনে তাদের সংখ্যা কমে আসে।

উনিশ শতকে এই এলাকাটিকে “ভয়ংকর” এবং “ক্ষতিকর” হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছিল। এমনকি এটিকে “জলাভূমি পরিষ্কার করে উন্নয়নের” প্রস্তাবও করা হয়েছিল।

কিন্তু ১৯47 সালে প্রেসিডেন্ট হ্যারি ট্রুম্যান এভারগ্রেডসকে জাতীয় উদ্যান ঘোষণা করেন, যা এর গুরুত্ব আরও বাড়িয়ে তোলে। বর্তমানে এটি একটি ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্য স্থান, আন্তর্জাতিক জীবমণ্ডল সংরক্ষণ এলাকা এবং আন্তর্জাতিক গুরুত্বসম্পন্ন জলাভূমি হিসেবে স্বীকৃত।

প্রতি বছর প্রায় ১০ লক্ষ মানুষ এই পার্কটি ভ্রমণ করে।

এভারগ্রেডসের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করার সেরা সময় হলো ডিসেম্বর থেকে এপ্রিল মাসের মধ্যে, যখন আবহাওয়া বেশ মনোরম থাকে।

পর্যটকদের জন্য এখানে রয়েছে আকর্ষণীয় সব ব্যবস্থা। এখানকার আকর্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে কুমির খামার, জলাভূমির ভ্রমণ, এবং এয়ারবোটের মতো নৌকায় চড়ে ঘুরে বেড়ানো।

পর্যটকদের জন্য এখানে হাইকিং ট্রেইল, ক্যানো ট্রেইল এবং হাউজবোট ভাড়ার ব্যবস্থাও রয়েছে। এখানকার সবচেয়ে আকর্ষণীয় স্থানগুলোর মধ্যে রয়েছে শার্ক ভ্যালি, এভারগ্রেডস সিটি, এবং ফ্লামিঙ্গো।

বর্তমানে, এই অঞ্চলের পরিবেশ পুনরুদ্ধারের জন্য একটি সমন্বিত পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে, যা এভারগ্রেডসের প্রাকৃতিক পরিবেশকে আগের রূপে ফিরিয়ে আনতে সহায়তা করছে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে ফ্লোরিডার প্রায় ৯০ লক্ষ মানুষের জন্য খাবার পানির ব্যবস্থা করা হবে।

এভারগ্রেডস যেন প্রকৃতির এক জীবন্ত পাঠশালা। এটি শুধু একটি জাতীয় উদ্যানই নয়, বরং প্রকৃতির বিস্ময়কর রূপের প্রতিচ্ছবি।

বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং জীববৈচিত্র্যের কথা মনে করিয়ে দেয় এই এভারগ্রেডস।

তথ্যসূত্র: ট্রাভেল অ্যান্ড লিজার

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *