মার্কিন বাজার ধ্বসের চক্রান্ত? ট্রাম্প সমর্থকদের দাবিতে তোলপাড়!

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শেয়ার বাজারে অস্থিরতা চলছে। প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কিছু সমর্থক মনে করেন, তিনি নাকি ইচ্ছাকৃতভাবে এই বাজারের পতন ঘটাতে চাইছেন। তাদের মতে, এর মাধ্যমে তিনি হয়তো দেশের বিশাল ঋণের বোঝা কমানোর চেষ্টা করছেন, অথবা তার ব্যবসায়িক মিত্রদের সুবিধা পাইয়ে দিতে চাচ্ছেন।

তবে এর স্বপক্ষে সুস্পষ্ট কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। ট্রাম্পের নীতিমালার কারণে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে এক ধরনের অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে, যা বাজারের জন্য ভালো নয়।

গত ফেব্রুয়ারিতে, যুক্তরাষ্ট্রের ৫০০টি বৃহৎ কোম্পানির শেয়ারের সূচক এস অ্যান্ড পি ৫০০ প্রায় ৫ ট্রিলিয়ন ডলারের মতো মূল্য হারিয়েছে। এমনকি প্রযুক্তি নির্ভর নাসডাক সূচকও ১০ই মার্চ তারিখে ৪ শতাংশ পর্যন্ত পড়ে গিয়েছিল, যা ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরের পর একদিনের সবচেয়ে বড় পতন ছিল।

যদিও ট্রাম্প এই অস্থিরতাকে অর্থনীতির উন্নতির পথে “অস্থায়ী পরিবর্তন” হিসেবে উল্লেখ করেছেন, অনেকের মনে সন্দেহ রয়েছে। তাদের মতে, ট্রাম্প সম্ভবত ইচ্ছাকৃতভাবে শেয়ার বাজারকে দুর্বল করে দিচ্ছেন।

এর কারণ হিসেবে তারা বলছেন, এতে ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক সুদের হার কমাতে বাধ্য হবে, যা দেশের প্রায় ৩৬ ট্রিলিয়ন ডলারের ঋণ পরিশোধের খরচ কমাতে সাহায্য করবে।

অন্যদিকে, কেউ কেউ বলছেন, ট্রাম্প হয়তো তার বন্ধু এবং সমর্থকদের, বিশেষ করে রক্ষণশীল ওয়াল স্ট্রিট বিনিয়োগকারী এবং সিলিকন ভ্যালির কিছু নির্বাহীর সুবিধা পাইয়ে দিতে চাচ্ছেন। তাদের তত্ত্ব অনুযায়ী, ট্রাম্প বাজারের এই পতনের সুযোগে তার মিত্রদের “শেয়ার কেনার” সুযোগ করে দিচ্ছেন, যাতে বাজার স্থিতিশীল হলে তারা লাভবান হতে পারে।

তবে, ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক, হোয়াইট হাউস বা কংগ্রেসের প্রভাব থেকে মুক্ত হয়ে কাজ করে। অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দিলে সাধারণত তারা সুদের হার কমিয়ে অর্থনীতিকে চাঙা করার চেষ্টা করে।

সুদের হার কমলে, সরকার ট্রেজারি বন্ডের মাধ্যমে কম সুদে ঋণ নিতে পারে, যা তাদের ঋণের সুদ পরিশোধের খরচ কমায়।

অর্থনীতিবিদ এবং বিশ্লেষকদের মধ্যে ভিন্ন মতও রয়েছে। কেউ কেউ মনে করেন, বাজারের এই অবস্থা স্বাভাবিক। বাজারের এই দুর্বলতা সম্ভবত অতিরিক্ত মূল্যায়নের ফল, এবং এটি একটি সংশোধনীর (correction) অংশ।

বিখ্যাত বিনিয়োগকারী ওয়ারেন বাফেটের শেয়ার বিক্রিও এই ধারণাকে সমর্থন করে। বাফেট ২০২৪ সালে অন্তত ১৩৪ বিলিয়ন ডলারের শেয়ার বিক্রি করেছেন, যা বাজারের অস্থিরতা নির্দেশ করে।

বর্তমানে, ১০ বছর মেয়াদী ট্রেজারি বন্ডের সুদ ৪.৩ শতাংশ এবং ৫ বছর মেয়াদী বন্ডের সুদ ৪ শতাংশের কাছাকাছি রয়েছে। এই হারগুলো অতীতে অনেক কম ছিল।

উদাহরণস্বরূপ, এক দশক আগেও সুদের হার এত বেশি ছিল না, যা সরকারকে কম সুদে ঋণ নিতে সাহায্য করত। শেয়ার বাজারের এই উত্থান-পতন বিভিন্ন কারণের ফল হতে পারে।

তবে, ট্রাম্পের অর্থনৈতিক নীতির কারণে সৃষ্ট অনিশ্চয়তা বিনিয়োগকারীদের মধ্যে একটা উদ্বেগের কারণ, যা বাজারের ওপর প্রভাব ফেলছে। তথ্য সূত্র: আল জাজিরা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *