ভয়ংকর ইঙ্গিত! কেনাকাটায় ভাটা, ডুবতে বসেছে মার্কিন অর্থনীতি?

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে খুচরা বিক্রি কমে যাওয়ায় বিশ্ব অর্থনীতিতে শঙ্কার সৃষ্টি হয়েছে। সম্প্রতি প্রকাশিত তথ্যে দেখা যাচ্ছে, ফেব্রুয়ারি মাসে প্রত্যাশার চেয়ে অনেক কম হারে বেড়েছে এই খাতের বিক্রি। এই দুর্বল চিত্র, বিশেষ করে আমেরিকার অর্থনীতির জন্য একটি খারাপ সংকেত বহন করে।

অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এর কারণ হতে পারে বাণিজ্য নিয়ে অনিশ্চয়তা এবং ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতি।

যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য দপ্তর সূত্রে জানা যায়, জানুয়ারিতে খুচরা বিক্রি ১.২ শতাংশ কমার পরে, ফেব্রুয়ারিতে সামান্য ০.২ শতাংশ বৃদ্ধি হয়েছে। যদিও অনেক অর্থনীতিবিদ আশা করেছিলেন এই বৃদ্ধি ০.৭ শতাংশ পর্যন্ত হতে পারে।

সাধারণত, খুচরা বিক্রি দেশের সামগ্রিক ব্যয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ, যা প্রায় এক-তৃতীয়াংশ। তাই এই খাতের দুর্বলতা অর্থনীতির জন্য উদ্বেগের কারণ।

ডলার জেনারেল-এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) টড ভ্যাসোস জানিয়েছেন, তাদের গ্রাহকরা ক্রমাগতভাবে জানাচ্ছেন যে গত এক বছরে তাদের আর্থিক পরিস্থিতি খারাপ হয়েছে, যা চলমান মূল্যস্ফীতির কারণে হয়েছে।

অনেক গ্রাহক কেবল প্রয়োজনীয় জিনিসগুলোর জন্য অর্থ রাখতে পারছেন এবং কিছু ক্ষেত্রে তাদের প্রয়োজনীয়তাগুলোও ত্যাগ করতে হচ্ছে।

এদিকে, বিশ্বের বৃহত্তম খুচরা বিক্রেতা ওয়ালমার্টও চলতি বছরে তাদের বিক্রি এবং মুনাফা কমে যাওয়ার আশঙ্কা করছে। ওয়ালমার্টের প্রধান অর্থনৈতিক কর্মকর্তা জন ডেভিড রেইনির মতে, ভোক্তাদের আচরণ এবং বৈশ্বিক অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সময়ে বিভিন্ন দেশের ওপর শুল্ক আরোপের কারণে অনেক পণ্যের দাম বেড়েছে, যা ভোক্তাদের মধ্যে এক ধরনের দ্বিধা তৈরি করেছে।

অনেক ব্যবসায়ী জানিয়েছেন, শুল্কের কারণে তাদের ব্যবসা পরিচালনা করা কঠিন হয়ে পড়েছে এবং পণ্যের দাম বাড়াতে হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, সেরা ইলেক্ট্রনিক্স পণ্য বিক্রেতা বেস্ট বাই-এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা করি ব্যারি বলেছেন, তারা আশা করছেন তাদের সরবরাহকারীরা শুল্কের কিছু খরচ বহন করবে, যার ফলে আমেরিকান ভোক্তাদের জন্য পণ্যের দাম বাড়ানো হতে পারে।

তবে, বিক্রি কমে যাওয়ার পেছনে শুধুমাত্র শুল্কই একমাত্র কারণ নয়। অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করেন, কোভিড-১৯ পরিস্থিতি কাটিয়ে ওঠার পর মানুষের মধ্যে কেনাকাটার ধরন পরিবর্তিত হয়েছে।

অনলাইন কেনাকাটার প্রবণতা বাড়ায় কিছু ক্ষেত্রে সরাসরি দোকানে বিক্রি কমেছে। ফেব্রুয়ারিতে অনলাইন বিক্রি ২.৪ শতাংশ এবং স্বাস্থ্য বিষয়ক পণ্যের বিক্রি ১.৭ শতাংশ বেড়েছে।

এই পরিবর্তনের ফলে, ঐতিহ্যবাহী খুচরা বিক্রেতাদের নতুন করে তাদের ব্যবসার কৌশল সাজাতে হচ্ছে।

মার্কিন অর্থনীতির এই দুর্বলতা বিশ্ব অর্থনীতি, বিশেষ করে বাংলাদেশের জন্য উদ্বেগের কারণ হতে পারে। কারণ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দিলে, তা বিশ্ব বাণিজ্য এবং বিনিয়োগের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে।

এর ফলে, বাংলাদেশের রপ্তানি আয় কমে যেতে পারে এবং রেমিট্যান্স প্রবাহেও নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *