ফিলিস্তিনে সহিংসতার মাত্রা বাড়ছে, আন্তর্জাতিক মহলের নীরবতা গভীর উদ্বেগের।
পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি দখলদারিত্বের কারণে ফিলিস্তিনিদের জীবনযাত্রা চরম দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। সেখানকার পরিস্থিতি দিন দিন আরও খারাপ হচ্ছে, যা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের জন্য গভীর উদ্বেগের বিষয়।
সম্প্রতি, আল-জাজিরার একটি প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, কীভাবে ইসরায়েলি বাহিনী ও বসতি স্থাপনকারীদের দ্বারা ফিলিস্তিনিদের উপর আক্রমণ, নিপীড়ন ও মানবাধিকার লঙ্ঘন বাড়ছে, কিন্তু বিশ্ব সম্প্রদায় কার্যত নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছে।
প্রতিবেদনে জানা যায়, অধিকৃত পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারীরা প্রায়ই ফিলিস্তিনিদের জমি ও সম্পত্তির উপর হামলা চালাচ্ছে।
অনেক সময় তারা ফিলিস্তিনিদের জলপাই বাগানসহ ফসলের ক্ষেতে আগুন ধরিয়ে দেয়, যা তাদের জীবন জীবিকার উপর মারাত্মক আঘাত হানে।
ইসরায়েলি সেনারা সশস্ত্র বসতি স্থাপনকারীদের রক্ষা করে এবং ফিলিস্তিনিদের তাদের সম্পত্তি রক্ষার কোনও সুযোগ দেয় না।
এমনকি আগুন নেভানোর জন্য পর্যাপ্ত জলও পাওয়া যায় না, কারণ তা অবৈধ বসতিগুলোতে সরিয়ে নেওয়া হয়।
গত কয়েক বছরে পশ্চিম তীরের পরিস্থিতি ক্রমাগত খারাপের দিকে গেলেও, ২০২৩ সালের ৭ই অক্টোবরের পর থেকে সহিংসতা আরও বেড়েছে।
ইসরায়েলি বাহিনীর হাতে নিহত ফিলিস্তিনি শিশুদের প্রায় অর্ধেক গত দুই বছরে নিহত হয়েছে।
চলতি বছরেও, ইসরায়েলি স্নাইপারের গুলিতে এক ফিলিস্তিনি শিশুর নিহত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে।
এছাড়া, ইসরায়েলি বাহিনীর গুলিতে এক গর্ভবতী নারীর মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে।
এগুলো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, বরং ফিলিস্তিনিদের উপর নজিরবিহীন সহিংসতার অংশ।
ফিলিস্তিনিদের বাড়িঘরে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর অভিযান ও নির্বিচারে আটকের ঘটনা এখন নিত্যদিনের ঘটনা।
বর্তমানে ইসরায়েলি কারাগারে বন্দী ১০,০০০ ফিলিস্তিনির মধ্যে ৩০০ জনের বেশি শিশু রয়েছে, যাদের অধিকাংশই কোনো অভিযোগ ছাড়াই বন্দী জীবন যাপন করছে।
তাদের পরিবার কবে তাদের কাছে ফিরতে পারবে, সে সম্পর্কেও তাদের কোনো ধারণা নেই।
গ্রামগুলোতে হামলা, ঘরবাড়ি ধ্বংস এবং সম্পত্তি কেড়ে নেওয়ার ঘটনাও বেড়েছে।
চেকপোস্ট, বেড়া এবং অনুমতির মতো বিষয়গুলো ফিলিস্তিনিদের জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলেছে।
৭ই অক্টোবরের পর থেকে প্রায় ৯০০ নতুন সামরিক চেকপোস্ট ও নিরাপত্তা বেষ্টনী তৈরি করা হয়েছে, যার ফলে চলাচলের উপর কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে এবং জরুরি পরিষেবাগুলোতেও ব্যাঘাত ঘটছে।
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নীরবতা এই পরিস্থিতিকে আরও ভয়াবহ করে তুলেছে।
গাজায় শরণার্থী শিবিরগুলোতে ইসরায়েলি বিমান হামলা, হাসপাতালগুলোতে অবরোধ, এমনকি শিশুদের তাদের বাড়ির সামনে গুলি করার মতো ঘটনাগুলো এখন যেন স্বাভাবিক হয়ে দাঁড়িয়েছে।
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের এই নীরবতা এবং কোনো কার্যকর পদক্ষেপ না নেওয়াটা খুবই উদ্বেগের বিষয়।
জাতিসংঘে ‘সেভ দ্য চিলড্রেন’-এর প্রতিনিধি হিসেবে, লেখক উল্লেখ করেছেন যে আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও এই পরিস্থিতি প্রতিফলিত হয়।
ইসরায়েলি বাহিনীর বিরুদ্ধে জবাবদিহিতার অভাবের কারণে, বোমা হামলা, ঘরবাড়ি পোড়ানো, সাংবাদিক ও মানবিক কর্মীদের হত্যার মতো ঘটনাগুলো যেন স্বাভাবিক হয়ে উঠছে।
এমনকি, যখন বিশ্ব মঞ্চে ফিলিস্তিনের বিষয়টি আসে, তখনও তেমন কোনো পরিবর্তন দেখা যায় না।
সম্প্রতি, ‘নো আদার ল্যান্ড’ নামক একটি ফিলিস্তিনি-ইসরায়েলি চলচ্চিত্র সেরা তথ্যচিত্রের পুরস্কার জিতেছে।
পুরস্কার গ্রহণকালে, চলচ্চিত্র নির্মাতা বাসেল আদ্রা আশা প্রকাশ করেছেন যে তার মেয়েকে যেন তার মতো বসতি স্থাপনকারীদের সহিংসতা, ঘরবাড়ি ধ্বংস এবং জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুতির ভয়ে জীবন কাটাতে না হয়।
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে অবশ্যই এই সহিংসতার বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে হবে।
মানবাধিকার লঙ্ঘনকারীদের জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে এবং আন্তর্জাতিক আইনকে সমুন্নত রাখতে হবে।
অস্ত্র সরবরাহ বন্ধ করা এবং আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি।
ফিলিস্তিনের শিশুদের অধিকার রক্ষা করতে এবং তাদের নিরাপদ ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে সম্মিলিত পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা