ব্রিটিশ শিল্পী অ্যালেন জোন্স: বিতর্ক আর শিল্পের সীমানা
অ্যালেন জোন্স, যিনি নিজেকে চিত্রকর এবং ভাস্কর দুটোই মনে করেন, ব্রিটিশ পপ আর্টের জগতে এক উল্লেখযোগ্য নাম।
তাঁর কাজ সবসময়ই শিল্প সমালোচক এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। বিশেষ করে তাঁর তৈরি ‘ফ্যাশন ফার্নিচার’ সিরিজ, যা নারীদের ভিন্ন রূপে উপস্থাপন করে, বহু বছর ধরে বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে।
জোন্সের জন্ম ১৯৩৭ সালে, লন্ডনের ইলিংয়ে। তাঁর বাবার শিল্পকলার প্রতি আগ্রহ ছিল, যদিও তিনি পেশাগতভাবে অন্য কাজ করতেন।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সাউদাম্পটনে কুইন মেরি ও কুইন এলিজাবেথ জাহাজের আলোকসজ্জা দেখে শহরের চাকচিক্যের ধারণা তাঁর মনে গেঁথে যায়। রয়্যাল কলেজ অফ আর্ট থেকে বিতাড়িত হওয়ার পর তিনি শিক্ষকতার প্রশিক্ষণ নেন এবং পরবর্তীতে আমেরিকাতেও শিক্ষকতা করেছেন।
১৯৬০-এর দশকে, জোন্স যখন নিউ ইয়র্কে ছিলেন, তখন সেখানকার শিল্পচর্চায় পরাবাস্তবতার প্রভাব ছিল। তিনি তাঁর কাজের মাধ্যমে প্রচলিত ধারণার বাইরে গিয়ে দর্শকদের নতুন কিছু অনুভব করাতে চেয়েছেন।
তাঁর বিখ্যাত ‘ফ্যাশন ফার্নিচার’-এর মধ্যে ‘হ্যাটাস্ট্যান্ড’, ‘চেয়ার’ এবং ‘টেবিল’ উল্লেখযোগ্য। এই শিল্পকর্মগুলোতে নারীদের এমনভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে, যা অনেকের মতে, নারীত্বের অবমাননা।
জোন্স মনে করেন, তাঁর এই ধরনের শিল্পকর্ম হয়তো তাঁর শিল্পী জীবনের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। তিনি বলেন, “আমি মনে করি, এটা আমার ক্যারিয়ারে বাধা সৃষ্টি করেছে।
এই কাজগুলো নিয়ে সমালোচকদের মধ্যে বিভিন্ন মত রয়েছে। কেউ কেউ মনে করেন, এগুলো পুরুষতান্ত্রিক সমাজের সমালোচনা, আবার কারো কারো মতে, এগুলো আসলে পুরুষতান্ত্রিকতারই প্রতিফলন।
নারীবাদী আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত অনেকে জোন্সের কাজের তীব্র বিরোধিতা করেছেন। জোন্সের মতে, তাঁর আসল উদ্দেশ্য ছিল ভিন্ন।
তিনি চেয়েছিলেন, শিল্পের মাধ্যমে সমাজের প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্ন করতে। তাঁর কাজের মাধ্যমে দর্শক যেন নতুন দৃষ্টিকোণ থেকে সবকিছু দেখতে পারে, সেটাই ছিল তাঁর কাম্য।
২০১৩ সালে তিনি ‘বডি আর্মার’ নামে একটি ভাস্কর্য তৈরি করেন, যেখানে কেট মস-এর চামড়া ও স্টেইনলেস স্টিলের পোশাক পরা একটি প্রতিকৃতি দেখা যায়।
এই কাজটিও সমালোচকদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। অ্যালেন জোন্সের কাজের মূল্যায়ন এখনো চলমান।
তাঁর শিল্পকর্ম একদিকে যেমন বিতর্কিত, তেমনই শিল্পকলার ইতিহাসে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। তাঁর কাজগুলো আমাদের সমাজের বিভিন্ন দিক নিয়ে নতুন করে ভাবতে উৎসাহিত করে।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান