হাঙ্গেরি সরকার সমকামীদের অধিকার খর্ব করতে নতুন একটি বিল সংসদে উত্থাপন করেছে, যা নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। বিলটি পাশ হলে বুদাপেস্ট প্রাইড উৎসব নিষিদ্ধ হবে এবং অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারীদের শনাক্ত করতে ফেসিয়াল রিকগনিশন প্রযুক্তি ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া হবে।
খবরটি জানিয়েছে সিএনএন। হাঙ্গেরির ক্ষমতাসীন জোটের পার্লামেন্টে দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকায় বিলটি সহজেই পাস হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
প্রস্তাবিত এই বিলে বলা হয়েছে, যে সকল অনুষ্ঠানে বিতর্কিত “শিশু সুরক্ষা” আইনের লঙ্ঘন হবে, সেই সব অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়া বা আয়োজন করা অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। এই আইন অনুযায়ী, ১৮ বছরের কম বয়সী শিশুদের সামনে সমকামিতা “তুলে ধরা” বা “প্রচার” করা যাবে না।
যদি কোনো ব্যক্তি এই ধরনের নিষিদ্ধ কোনো অনুষ্ঠানে যোগ দেন, তবে তাকে ২ লক্ষ হাঙ্গেরীয় ফরিন্ট (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৬২ হাজার টাকা) পর্যন্ত জরিমানা করা হতে পারে। জরিমানার অর্থ “শিশু সুরক্ষার” জন্য সরকারের কাছে জমা করা হবে।
প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর অরবানের নেতৃত্বাধীন সরকার এর আগেও এলজিবিটিকিউ+ সম্প্রদায়ের অধিকার খর্ব করার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। মানবাধিকার সংস্থা এবং ইউরোপীয় রাজনীতিবিদরা এই পদক্ষেপগুলোর তীব্র নিন্দা করেছেন।
তাদের মতে, এই আইনগুলো যৌন সংখ্যালঘুদের ওপর নিপীড়নমূলক। সরকার নিজেদের ঐতিহ্যবাহী পারিবারিক মূল্যবোধের রক্ষক এবং “লিঙ্গ উন্মাদনা” থেকে খ্রিস্টান সভ্যতাকে রক্ষার দাবি করে আসছে।
সরকারের ভাষ্যমতে, তাদের নীতিগুলি শিশুদের “যৌন প্রচারণা” থেকে রক্ষা করার জন্য প্রণীত হয়েছে। ২০২১ সালে হাঙ্গেরিতে “শিশু সুরক্ষা” আইন পাস হয়।
এই আইনে টেলিভিশন, চলচ্চিত্র, বিজ্ঞাপন এবং সাহিত্যের মতো বিষয়গুলোতে শিশুদের জন্য সমকামিতার “চিত্র বা প্রচার” নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এছাড়াও, বিদ্যালয়ের পাঠ্যক্রমে এলজিবিটিকিউ+ বিষয়ক কোনো আলোচনা বা বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা যাবে না এবং জন্মগত লিঙ্গ পরিচয় থেকে ভিন্ন কোনো লিঙ্গ পরিচয়ের প্রকাশ্যে প্রদর্শনেও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।
ফেব্রুয়ারি মাসে দেওয়া এক ভাষণে প্রধানমন্ত্রী অরবান বুদাপেস্ট প্রাইড উৎসব নিষিদ্ধ করার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। প্রতি বছর এই উৎসবে হাজার হাজার মানুষ সমবেত হন, যা এলজিবিটিকিউ+ আন্দোলনের ইতিহাস উদযাপন করে এবং সমকামী, উভকামী, রূপান্তরকামী ও কুইয়ার সম্প্রদায়ের সমান অধিকারের দাবি জানায়।
উল্লেখ্য, বুদাপেস্ট প্রাইড এবার ৩০ বছর পূর্তি উদযাপন করতে যাচ্ছে। আয়োজকরা বলছেন, এই উৎসব বন্ধ করার চেষ্টা বাক ও সমাবেশের মৌলিক অধিকারের উপর হস্তক্ষেপের শামিল।
তথ্য সূত্র: সিএনএন