রক্তের ফোটা থেকে দৈত্যাকার বুট: এমএসসিএইচএফ-এর কীর্তি!

বিশ্বজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টিকারী একটি শিল্পগোষ্ঠী: এমএসসিএইচএফ (MSCHF)-এর কীর্তি। শিল্পকলার জগৎকে নতুন এক উচ্চতায় নিয়ে গেছে এমএসসিএইচএফ নামক একটি আমেরিকান শিল্পগোষ্ঠী।

তাদের তৈরি করা ব্যতিক্রমী সব সৃষ্টি, যা একইসঙ্গে বিতর্কিত এবং আকর্ষণীয়। ২০১৯ সালে যাত্রা শুরু করে তারা ইতোমধ্যে বিশ্বজুড়ে পরিচিতি লাভ করেছে।

সম্প্রতি তাদের কাজের ওপর ভিত্তি করে প্রকাশিত হয়েছে একটি বই, যেখানে তাদের ভেতরের নানা দিক তুলে ধরা হয়েছে।

এমএসসিএইচএফ-এর সবচেয়ে আলোচিত কাজগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো ‘শয়তানের জুতো’ (Satan Shoes)। নাইকির এয়ার ম্যাক্স ৯৭ (Nike Air Max 97) স্নিকারকে পরিবর্তন করে তৈরি করা এই জুতোয় ছিল মানুষের রক্তের ফোঁটা।

২০২১ সালে বাজারে আসার পর ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দিয়েছিল এই জুতো। বিতর্ক এতটাই বেড়েছিল যে, নাইকি তাদের বিরুদ্ধে মামলা করে এবং এমএসসিএইচএফকে জুতোটি বাজার থেকে তুলে নিতে হয়।

তবে বিতর্ক তাদের কাছে নতুন কিছু নয়। এর আগে তারা তৈরি করেছিল ‘যিশুর জুতো’ (Jesus Shoes)। এই জুতোতেও ছিল নাইকির ডিজাইন, তবে এতে পবিত্র জল ব্যবহার করা হয়েছিল।

তাদের কাজের তালিকায় আরও আছে বিশাল আকৃতির লাল বুট, যা জাপানি কার্টুন চরিত্র অ্যাস্ট্রো বয়ের (Astro Boy) আদলে তৈরি করা হয়েছে। এছাড়া, তারা তৈরি করেছে অতি ক্ষুদ্র আকারের একটি লুই ভিতোঁর (Louis Vuitton) ব্যাগ, যা খালি চোখে দেখাই কঠিন।

এই ব্যাগটি অনলাইনে প্রায় ৬৩ হাজার ডলারে বিক্রি হয়েছিল, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৬৮ লাখ টাকার সমান।

এমএসসিএইচএফ-এর সহ-প্রধান ক্রিয়েটিভ অফিসার কেভিন উইজনার (Kevin Wiesner) বলেন, তাদের প্রধান পরিচয় হলো তারা শিল্পী। তাদের কাজগুলোর মাধ্যমে তারা সমাজের বিভিন্ন দিক নিয়ে প্রশ্ন তোলে এবং প্রচলিত ধারণাকে চ্যালেঞ্জ করে।

তাদের অন্য সহ-প্রধান ক্রিয়েটিভ অফিসার লুকাস বেনটেল (Lukas Bentel) মনে করেন, তারা একটি পরিস্থিতি তৈরি করেন এবং এরপর সেই পরিস্থিতির সঙ্গে মানুষের প্রতিক্রিয়া পর্যবেক্ষণ করেন।

তাদের নতুন বই ‘মেড বাই এমএসসিএইচএফ’ (Made by MSCHF) -এ তাদের তৈরি করা বিভিন্ন প্রকল্পের ভেতরের গল্পগুলো তুলে ধরা হয়েছে। কীভাবে তারা একটি ধারণা তৈরি করে, সেই ধারণা বাস্তবায়নে কী ধরনের চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয় এবং সেই চ্যালেঞ্জগুলো তারা কীভাবে মোকাবেলা করে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য রয়েছে বইটিতে।

বইটিতে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, কীভাবে তারা আধুনিক ইন্টারনেটের যুগে ভোক্তাবাদকে (consumerism) ব্যঙ্গ করে।

এমএসসিএইচএফ-এর কাজগুলো শুধু শিল্পী এবং শিল্পবোদ্ধাদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। সাধারণ মানুষও তাদের কাজের সঙ্গে পরিচিত। তাদের তৈরি করা প্রতিটি পণ্য অনলাইনে উন্মোচন করার সঙ্গে সঙ্গেই তা ভাইরাল হয়ে যায়।

তাদের ‘বিশাল লাল বুট’ তৈরির ধারণা এতটাই জনপ্রিয়তা পেয়েছিল যে, প্রথম দফায় তৈরি করা ২০০ জোড়া বুট কয়েক মিনিটের মধ্যেই বিক্রি হয়ে যায়।

তাদের কাজের ধরন অন্যদের থেকে আলাদা। তারা প্রচলিত ফ্যাশন বা শিল্পের ধারণাকে ভেঙে নতুন কিছু তৈরি করতে চায়। তাদের কাজগুলো একদিকে যেমন আকর্ষণীয়, তেমনই সমাজের বিভিন্ন অসঙ্গতি নিয়ে প্রশ্ন তোলে।

তাদের তৈরি করা পণ্যগুলো সাধারণত সীমিত সংখ্যক থাকে, যে কারণে সেগুলোর চাহিদা অনেক বেশি থাকে।

এমএসসিএইচএফ-এর ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে এখনো বিস্তারিত কিছু জানা যায়নি। তবে তাদের নতুন বই প্রকাশের মাধ্যমে তারা অন্যদের অনুপ্রাণিত করতে চাইছে।

তারা চায়, মানুষ যেন তাদের কাজ থেকে নতুন কিছু তৈরি করতে উৎসাহিত হয়।

তথ্য সূত্র: সিএনএন (CNN)।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *