মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ফেডারেল সরকারের কাঠামো পরিবর্তন করার লক্ষ্যে রক্ষণশীলদের একটি পরিকল্পনা, প্রজেক্ট ২০২৫ (Project 2025) নিয়ে বেশ আলোচনা চলছে। এই প্রকল্পের প্রধান ছিলেন পল ডান্স।
তিনি সম্প্রতি বলেছেন যে ডোনাল্ড ট্রাম্পের ক্ষমতা গ্রহণের পরে নেওয়া পদক্ষেপগুলো তার “স্বপ্নের থেকেও অনেক বেশি কিছু”। খবর অনুযায়ী, ট্রাম্প এবং টেসলা ও স্পেসএক্সের মালিক এলন মাস্কের নেতৃত্বে সরকারে যে পরিবর্তনগুলো আনা হচ্ছে, তা কার্যত প্রজেক্ট ২০২৫-এর লক্ষ্যগুলোর সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ।
প্রজেক্ট ২০২৫-এর মূল লক্ষ্য ছিল সরকারি কর্মীদের সংখ্যা কমানো, বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পের বাজেট হ্রাস করা এবং পরিবেশ বিষয়ক সুরক্ষা নীতিগুলো শিথিল করা। এছাড়া, সরকারের মধ্যে সংখ্যালঘুদের অধিকার ও সুযোগ সুবিধা বিষয়ক নীতি, যা ‘ডিইআই’ (Diversity, Equity, and Inclusion) নামে পরিচিত, সেগুলোর বিরোধিতা করা হয়েছে।
এই পরিকল্পনা নিয়ে ডেমোক্র্যাটদের সমালোচনার মুখে ট্রাম্প একসময় এর সঙ্গে তার কোনো সম্পর্ক নেই বলে দাবি করেছিলেন।
তবে, এখন যখন ট্রাম্প আবার ক্ষমতায় ফিরে এসেছেন, তখন দেখা যাচ্ছে, এলন মাস্কের সহযোগিতায় সরকারে কর্মী ছাঁটাই থেকে শুরু করে জলবায়ু বিষয়ক বিধি-নিষেধ তুলে নেওয়া হয়েছে। এমনকী, ‘ডিইআই’ সংক্রান্ত বিভিন্ন পদক্ষেপেও পরিবর্তন আনা হচ্ছে।
পল ডান্সের মতে, পরিস্থিতি তার কল্পনার বাইরে চলে গেছে। যদিও, তিনি মনে করেন, ভবিষ্যতে এই পথ সহজ হবে না, কারণ সরকারি কর্মকর্তাদের একটি অংশ (যাদের ‘ডিপ স্টেট’ বা গভীর রাষ্ট্র হিসেবে চিহ্নিত করা হয়) তাদের ক্ষমতা ফিরে পেতে চেষ্টা করবে।
এই ‘ডিপ স্টেট’ ধারণাটি রক্ষণশীলদের মধ্যে বেশ প্রচলিত। তাদের মতে, এটি হলো কিছু আমলা ও কর্মীর একটি স্থায়ী কাঠামো, যারা ট্রাম্পের ক্ষমতাকে খর্ব করতে চায়।
ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ সহযোগী স্টিভ ব্যানন এই ‘ডিপ স্টেট’ ষড়যন্ত্র তত্ত্বের অন্যতম প্রচারক।
প্রজেক্ট ২০২৫-এর সঙ্গে ট্রাম্পের সরাসরি সম্পর্ক না থাকার বিষয়ে ডান্স বলেন, রক্ষণশীল আন্দোলনের অংশ হিসেবেই এই পরিকল্পনা তৈরি করা হয়েছিল।
এর উদ্দেশ্য ছিল, পরবর্তী রক্ষণশীল প্রেসিডেন্ট যেন তাদের নীতিগুলো বাস্তবায়িত করতে পারেন, সে বিষয়ে দিকনির্দেশনা দেওয়া। ডান্সের মতে, ট্রাম্প এবং এলন মাস্কের সমন্বিত প্রচেষ্টার কারণেই এটি সম্ভব হচ্ছে।
মাস্ক বর্তমানে সরকারের ‘দক্ষতা বিষয়ক বিভাগের’ (Department of Government Efficiency) তত্ত্বাবধানে রয়েছেন, যা নিয়ে ইতোমধ্যে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। কারণ, অনেকে মনে করেন, এর মাধ্যমে মাস্কের ব্যবসায়িক স্বার্থ হাসিল হতে পারে।
প্রজেক্ট ২০২৫-এর একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো শিক্ষা বিষয়ক ফেডারেল দপ্তর বিলুপ্ত করার প্রস্তাব। ডান্স মনে করেন, এই ধরনের সংস্কার প্রয়োজন।
এছাড়াও, তিনি আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা ইউএসএআইডি (USAID)-এর কার্যক্রম নিয়েও প্রশ্ন তোলেন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্প প্রশাসনের এই ধরনের পদক্ষেপগুলো বিচার বিভাগ এবং বিভিন্ন মহলে প্রতিরোধের সম্মুখীন হতে পারে। কারণ, এর ফলে সরকারের ক্ষমতা প্রয়োগের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার অভাব দেখা দিতে পারে।
তথ্যসূত্র: দ্য গার্ডিয়ান।