**পেরুর এক কৃষকের জার্মান শক্তি company-র বিরুদ্ধে মামলা, জলবায়ু পরিবর্তনের দায়বদ্ধতা চেয়ে লড়াই**
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া মানুষদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দাবিতে বিশ্বজুড়ে যখন আলোচনা চলছে, ঠিক সেই সময়ে জার্মানিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ মামলার শুনানি শুরু হয়েছে। পেরুর এক কৃষক, সাউল লুসিয়ানো লিয়ুইয়া, জার্মানির অন্যতম বৃহৎ শক্তি কোম্পানি RWE-এর বিরুদ্ধে মামলা করেছেন।
তাঁর অভিযোগ, RWE-এর কার্বন নিঃসরণের ফলে বিশ্ব উষ্ণায়ন বেড়েছে এবং এর ফলস্বরূপ, তাঁর শহর হুয়ারাজের কাছে অবস্থিত হিমবাহগুলি দ্রুত গলতে শুরু করেছে। এর ফলে সৃষ্ট লেক পালকাকোচা মারাত্মক রূপ ধারণ করে সেখানকার মানুষের জীবনহানির কারণ হতে পারে।
সোমবার হাম-এর একটি রাজ্য আদালতে এই মামলার শুনানি শুরু হয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই মামলা জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য দায়ী বৃহৎ কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে ক্ষতিপূরণ আদায়ের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারে।
মামলার শুনানিতে সাউল লুসিয়ানো লিয়ুইয়া জানান, RWE-এর ব্যাপক কার্বন নিঃসরণের ফলেই বিশ্ব উষ্ণায়ন বেড়েছে। এর ফলে তাঁর শহর হুয়ারাজের উপরে থাকা হিমবাহগুলো দ্রুত গলতে শুরু করেছে।
তিনি বলেন, “পাহাড়, হিমবাহ আর হ্রদ আমাদের জল দেয়, জীবন দেয়। কিন্তু হিমবাহগুলো ধীরে ধীরে গলে যাচ্ছে।
পালকাকোচা হ্রদের পানি বেড়ে যাওয়ায় আমাদের এলাকার ৫০ হাজারের বেশি মানুষের জীবন ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে।”
অন্যদিকে, RWE-এর আইনজীবীরা এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তাঁদের দাবি, জলবায়ু পরিবর্তন একটি বৈশ্বিক সমস্যা, যা বহু কারণের ফল।
RWE-এর মতে, এই মামলার কোনো আইনগত ভিত্তি নেই এবং এর মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য এককভাবে কোনো কোম্পানিকে দায়ী করা যায় না। জলবায়ু পরিবর্তনের সমাধানে আন্তর্জাতিক নীতিমালার উপর জোর দেওয়া উচিত, আদালতের রায়ের উপর নয়।
২০২২ সালে জার্মান বিচারক এবং বিশেষজ্ঞরা পেরু সফর করেন এবং সেখানকার পরিস্থিতি খতিয়ে দেখেন। সোমবার ও বুধবারের শুনানিতে লিয়ুইয়ার বাড়ির সম্ভাব্য ক্ষতির বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের মতামত শোনা হবে।
তবে আদালত এই সপ্তাহের মধ্যেই মামলার রায় দেবে কিনা, তা এখনো নিশ্চিত নয়।
এই মামলার রায় শুধু পেরুর মানুষের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ নয়, বরং জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত বাংলাদেশের মতো দেশগুলোর জন্যও এটি তাৎপর্যপূর্ণ।
আমাদের দেশেও জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বন্যা, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি এবং বাস্তুচ্যুত হওয়ার মতো ঘটনা বাড়ছে। এই পরিস্থিতিতে, বৃহৎ কার্বন নিঃসরণকারী কোম্পানিগুলোর দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি।
এই মামলা সেই বিতর্কে নতুন মাত্রা যোগ করেছে।
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস