বিশ্বকে বাঁচাতে পারবে না ‘গীক’রা? আসল সত্যি ফাঁস!

বর্তমান বিশ্বে প্রযুক্তি আমাদের জীবনযাত্রায় এক অপরিহার্য অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কম্পিউটার, ইন্টারনেট, স্মার্টফোন—এগুলো এখন আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ।

প্রযুক্তির উন্নতির সাথে সাথে আমরা প্রায়ই কিছু ‘জিনিয়াস’ বা ‘উচ্চ প্রযুক্তিবিদ’ (nerd) -দের কথা শুনি, যারা এই অগ্রগতির মূল চালিকাশক্তি হিসেবে পরিচিত। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন ইলন মাস্কের মতো প্রভাবশালী ব্যক্তিরা, যাদের উদ্ভাবনী ক্ষমতা এবং ব্যবসায়িক দক্ষতা প্রায়শই প্রশংসিত হয়।

কিন্তু, এই প্রযুক্তি-পেশাদারদের সম্পর্কে আমাদের ধারণা কি সবসময় সঠিক? তারা কি সত্যিই সমাজের জন্য উপকারী, নাকি তাদের সাফল্যের পেছনে লুকিয়ে আছে ভিন্ন কোনো চিত্র?

সম্প্রতি, এই বিষয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা উঠেছে। অনেকের মতে, প্রযুক্তি বিশ্বে প্রভাবশালী এই ‘নerd’ দের ক্ষমতা এবং প্রভাব বিস্তারের ধারণাটি প্রশ্নবিদ্ধ। তাদের সাফল্যের পেছনে থাকা কারণগুলো এবং সমাজের উপর এর প্রভাবগুলো নতুন করে মূল্যায়নের দাবি জানানো হচ্ছে।

প্রযুক্তির অগ্রগতির ইতিহাসে, কিছু ব্যক্তির অবদান অনস্বীকার্য। স্টিভ জবস, বিল গেটস, মার্ক জাকারবার্গের মতো ব্যক্তিত্বরা প্রযুক্তিকে মানুষের হাতের মুঠোয় এনেছেন।

তাদের তৈরি করা পণ্য ও পরিষেবাগুলো আমাদের জীবনকে সহজ করেছে, নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। তাদের উদ্ভাবনী ক্ষমতা এবং দূরদৃষ্টির কারণে তারা ‘হিরো’ -এর মর্যাদা লাভ করেছেন।

কিন্তু, এই সাফল্যের উল্টো পিঠের গল্পটাও আমাদের জানতে হবে। প্রযুক্তি-বিশ্বের এই প্রভাবশালী ব্যক্তিরা কি সবসময় সমাজের জন্য ইতিবাচক ভূমিকা রেখেছেন?

তাদের তৈরি করা প্রযুক্তি কি সত্যিই সবার জন্য উপকারী?

উদাহরণস্বরূপ, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোর কথা ভাবুন। এগুলো মানুষকে একে অপরের সঙ্গে যুক্ত করেছে, তথ্যের অবাধ প্রবাহ নিশ্চিত করেছে।

কিন্তু, এর পাশাপাশি, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো আসক্তি তৈরি করেছে, যা মানসিক স্বাস্থ্য এবং সামাজিক সম্পর্কে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। এছাড়া, অনলাইনে ভুয়া খবর এবং বিদ্বেষমূলক প্রচারণার বিস্তারও একটি উদ্বেগের বিষয়।

এছাড়াও, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই) বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার কথা ভাবুন। এআই প্রযুক্তি নিঃসন্দেহে এক বিরাট সম্ভাবনা নিয়ে এসেছে।

কিন্তু, এই প্রযুক্তির অপব্যবহারের ঝুঁকিও রয়েছে। যেমন, পরীক্ষার খাতায় নকল করার জন্য এআই-এর ব্যবহার অথবা মানুষের ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ করে তা ভুল কাজে ব্যবহারের মতো ঘটনাগুলো উদ্বেগের কারণ।

প্রযুক্তি-বিশ্বের ক্ষমতাধর ব্যক্তিরা প্রায়ই নিজেদের উদ্ভাবনী ক্ষমতার মাধ্যমে সমাজের উন্নতির কথা বলেন। কিন্তু, তাদের কাজের ফলস্বরূপ সমাজের প্রান্তিক মানুষেরা কতটা উপকৃত হচ্ছে, সেই প্রশ্নটি গুরুত্বপূর্ণ।

প্রযুক্তি কি ধনী ও ক্ষমতাধরদের আরও ধনী ও শক্তিশালী করছে, নাকি এটি সবার জন্য সুযোগ তৈরি করছে?

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রযুক্তি এবং এর প্রভাব সম্পর্কে আমাদের আরও সতর্ক হতে হবে। প্রযুক্তি-পেশাদারদের সাফল্যের ধারণাটির গভীরতা বিশ্লেষণ করা দরকার।

তাদের কাজের নৈতিক দিক, সমাজের উপর এর প্রভাব এবং ক্ষমতা কাঠামোর পরিবর্তন—এসব বিষয়ে সচেতনতা তৈরি করা প্রয়োজন।

পরিশেষে, প্রযুক্তির অগ্রগতি নিঃসন্দেহে গুরুত্বপূর্ণ। তবে, এই অগ্রগতির সাথে সাথে আমাদের সমাজে এর প্রভাবগুলোকেও বিবেচনা করতে হবে।

প্রযুক্তি যেন সমাজের সকল স্তরের মানুষের জন্য উপকারী হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।

তথ্যসূত্র: আল জাজিরা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *