শিশুদের মৃত্যু মামলায়: বিচার বন্ধের আবেদন লেটবির, চাঞ্চল্যকর তথ্য!

ব্রিটিশ সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, শিশুদের হত্যা ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হওয়া সাবেক নার্স লুসি লেটবি তার বিরুদ্ধে চলমান জন-অনুসন্ধান বন্ধের আবেদন জানিয়েছেন। লেটবির আইনজীবীরা দাবি করছেন, তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলো দুর্বল প্রমাণ করার মতো নতুন প্রমাণ তাদের হাতে এসেছে।

তারা বলছেন, এই অনুসন্ধানে বিপুল পরিমাণ অর্থ খরচ হচ্ছে, যা তার দোষী সাব্যস্ত করার রায় পুনর্বিবেচনা না হওয়া পর্যন্ত স্থগিত রাখা উচিত। জানা গেছে, লেটবি বর্তমানে ১৫টি যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ভোগ করছেন।

তিনি ইংল্যান্ডের কাউন্টেস অফ চেস্টার হাসপাতালে সাতটি শিশুকে হত্যা এবং আরও সাতটিকে হত্যার চেষ্টা করেছিলেন। লেটবি বরাবরই নিজেকে নির্দোষ দাবি করে আসছেন।

লেটবির আইনজীবীরা আদালতের কাছে পেশ করা এক চিঠিতে বলেছেন, এই জন-অনুসন্ধানটি যদি তার আপিলের ফলাফলের আগে শেষ হয়, তাহলে এর প্রতিবেদন ‘অপ্রয়োজনীয় এবং সম্ভবত নির্ভরযোগ্য হবে না’। তারা আরও উল্লেখ করেন, এখন পর্যন্ত এই অনুসন্ধানে ১০ মিলিয়ন পাউন্ডের বেশি খরচ হয়েছে, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ১৩০ কোটি টাকার সমান।

আইনজীবীরা মনে করেন, লেটবির দোষী সাব্যস্ত করার রায়টি ত্রুটিপূর্ণ প্রমাণ করার যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে। তাই, অনুসন্ধানের কাজ স্থগিত করে রায় পুনর্বিবেচনার ফলাফলের জন্য অপেক্ষা করা উচিত।

এদিকে, ব্রিটেনের স্বাস্থ্য বিষয়ক কর্তৃপক্ষ এবং হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, জন-অনুসন্ধান স্থগিত করার বিষয়টি মূলত স্বাস্থ্য সচিব এবং অনুসন্ধান প্রধানের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করে। কাউন্টেস অফ চেস্টার হাসপাতালের আইনজীবী বিচারককে অনুসন্ধান বন্ধ না করার আহ্বান জানিয়েছেন।

কারণ, এতে শিশুদের মৃত্যুর কারণ অনুসন্ধানে বিলম্ব হবে। অন্যদিকে, স্বাস্থ্য বিষয়ক পর্যবেক্ষক সংস্থা এবং নার্সিং কাউন্সিল সহ বেশ কয়েকটি সংস্থা লেটবি মামলার ব্যবস্থাপনায় তাদের দুর্বলতা স্বীকার করেছে।

তারা জানিয়েছে, ২০১৬ সালে এই ঘটনাগুলো সামনে আসার পর তাদের আরও বেশি সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত ছিল। রয়্যাল কলেজ অফ পেডিয়াট্রিক্স অ্যান্ড চাইল্ড হেলথ হাসপাতালের নির্বাহী কর্তৃপক্ষের হয়ে নবজাতক ইউনিটের পর্যালোচনাকে ‘ভুল’ হিসেবে উল্লেখ করেছে।

ব্রিটিশ স্বাস্থ্য ও সমাজসেবা বিভাগ নিহত শিশুদের পরিবারের কাছে ‘পূর্ণাঙ্গ’ ক্ষমা চেয়েছে এবং ঘটনার দায় স্বীকার করেছে। তারা জানিয়েছে, ভবিষ্যতে এমন ঘটনা এড়াতে তারা বিভিন্ন পদক্ষেপ নেবে।

লেটবির আইনজীবীরা জানান, তারা ১৬ জন বিশেষজ্ঞের একটি দল তৈরি করেছেন, যারা ৭টি দেশ থেকে তথ্য সংগ্রহ করেছেন। তাদের মূল্যায়নে উঠে এসেছে, শিশুদের মৃত্যুর পেছনে কোনো ‘ক্ষতিকর কাজের প্রমাণ’ পাওয়া যায়নি, বরং চিকিৎসার ক্ষেত্রে ‘ভুল’ ছিল।

আইনজীবীরা আরও বলছেন, বিশেষজ্ঞদের প্রতিবেদনগুলো প্রতিটি মৃত্যুর একটি ‘বিকল্প ব্যাখ্যা’ দেয় এবং সেখানে নবজাতক ইউনিটে কর্মরত ডাক্তারদের চিকিৎসার তীব্র সমালোচনা করা হয়েছে।

লেটবির আইনি দল এই নতুন প্রমাণগুলো ক্রিমিনাল কেসেস রিভিউ কমিশনকে (CCRC) জমা দেবে এবং শিগগিরই কমিশনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবে। CCRC যদি মনে করে যে দোষী সাব্যস্ত করার রায়ের পুনর্বিবেচনা হতে পারে, তাহলে তারা বিষয়টি আদালতের কাছে ফেরত পাঠাতে পারে।

লেটবির আইনজীবীরা বলছেন, তার বিরুদ্ধে রায় যদি বাতিল হয়ে যায়, তাহলে অনুসন্ধানের প্রতিবেদনটি ভুল ধারণার ওপর ভিত্তি করে তৈরি হবে। এতে অনুসন্ধানের মূল উদ্দেশ্য ব্যাহত হবে।

উল্লেখ্য, লেটবির বিরুদ্ধে মামলার পাশাপাশি, পুলিশ হাসপাতালের অন্যান্য কর্মীদের বিরুদ্ধেও শিশুদের মৃত্যুর ঘটনায় ‘গুরুতর অবহেলাজনিত নরহত্যা’র তদন্ত শুরু করেছে। কাউন্টেস অফ চেস্টার এবং লিভারপুল উইমেনস হাসপাতালের নবজাতক ইউনিটে ২০১২ থেকে ২০১৬ সালের মধ্যে শিশুদের মৃত্যু এবং অসুস্থ হয়ে পড়ার ঘটনাগুলো নিয়ে থিরওয়াল অনুসন্ধান গত সেপ্টেম্বর মাস থেকে শুরু হয়েছে।

এই অনুসন্ধান চলতি বছরের শেষ নাগাদ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। তথ্য সূত্র: ব্রিটিশ সংবাদ মাধ্যম।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *