যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীদের যেকোনো হামলার জন্য ইরানকে দায়ী থাকতে হবে। মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা আরও বাড়িয়ে এমন হুঁশিয়ারি দিলেন তিনি।
ট্রাম্পের এই মন্তব্যের জেরে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্যিক জাহাজ চলাচলে নতুন করে উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে।
সম্প্রতি, লোহিত সাগরে ইসরায়েলি জাহাজ ও অন্যান্য বাণিজ্যিক জাহাজে হুতি বিদ্রোহীরা একাধিকবার হামলা চালিয়েছে। গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধ এবং ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে মানবিক সহায়তা প্রবেশের ওপর অবরোধের প্রতিবাদে এই হামলা চালানো হয়।
আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, ইরান হুতিদের অস্ত্র সরবরাহ করে থাকে। হুতিরা ইরানের সমর্থনপুষ্ট একটি গোষ্ঠীর অংশ হিসেবে পরিচিত।
সোমবার ট্রাম্প তাঁর সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম ‘ট্রুথ সোশালে’ দেওয়া এক পোস্টে লেখেন, “যারা ইয়েমেনে বসবাস করে, সেই ঘৃণ্য হুতি সন্ত্রাসী ও দুর্বৃত্তদের দ্বারা সংঘটিত হওয়া শত শত হামলার মূল হোতা ইরান। হুতিদের দ্বারা ভবিষ্যতে কোনো হামলা হলে তার জবাব দেওয়া হবে কঠোরভাবে, এবং সেই জবাব এখানেই সীমাবদ্ধ থাকবে না।”
ট্রাম্পের এই হুঁশিয়ারি এমন এক সময়ে এল, যখন ইরানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক বেশ স্পর্শকাতর অবস্থায় রয়েছে। ট্রাম্প এর আগে ইরানকে পারমাণবিক কর্মসূচি বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছিলেন।
যদিও ২০১৮ সালে তিনি ইরানের সঙ্গে হওয়া জয়েন্ট কমপ্রিহেনসিভ প্ল্যান অফ অ্যাকশন (জেসিপিওএ) থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে সরিয়ে নিয়েছিলেন। এই চুক্তির মাধ্যমে ইরানের পারমাণবিক কার্যক্রম সীমিত করার বিনিময়ে দেশটির ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার কথা ছিল।
অন্যদিকে, হুতি বিদ্রোহীরা ইসরায়েলি জাহাজকে লক্ষ্য করে হামলা চালানোর হুমকি দেওয়ার পরেই, ট্রাম্প তাঁদের বিরুদ্ধে সামরিক পদক্ষেপের নির্দেশ দেন। এর ফলস্বরূপ, গত শনিবার থেকে রবিবার পর্যন্ত ইয়েমেনে ব্যাপক বোমা হামলা চালায় যুক্তরাষ্ট্র।
এতে অন্তত সাতটি প্রদেশে প্রায় ৪৭টি বিমান হামলা চালানো হয় এবং এতে প্রায় ৫৩ জন নিহত হয়েছে। হুতিদের নিয়ন্ত্রণে থাকা ইয়েমেনের রাজধানী সানাও এই হামলার শিকার হয়েছে।
ট্রাম্প তাঁর পোস্টে আরও উল্লেখ করেন, “হুতি সন্ত্রাসীদের সমর্থন অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে। আমেরিকার জনগণকে বা তাদের প্রেসিডেন্টকে, যিনি বিশাল ম্যান্ডেট পেয়েছেন, অথবা বিশ্বব্যাপী শিপিং রুটে হুমকি দেবেন না। যদি দেন, তবে সাবধান! কারণ আমেরিকা এর জন্য ইরানকে সম্পূর্ণভাবে দায়ী করবে।”
নভেম্বর ২০২৩ থেকে এ পর্যন্ত হুতি বিদ্রোহীরা প্রায় ১০০টি জাহাজে হামলা চালিয়েছে, যার মধ্যে দুটি ডুবে গেছে। ট্রাম্পের আগেও, যুক্তরাষ্ট্রের অন্য প্রেসিডেন্টরাও হুতিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছেন।
তবে ট্রাম্পের এই পদক্ষেপকে অনেকে ইরানের সঙ্গে আলোচনা শুরুর একটি কৌশল হিসেবে দেখছেন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্পের এই কঠোর পদক্ষেপ ইরানের পারমাণবিক আলোচনা টেবিলে ফেরার সম্ভাবনা বাড়াতে পারে। কারণ, হুতিদের ওপর হামলার মাধ্যমে তিনি ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনেইর দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাইছেন।
এছাড়া, আন্তর্জাতিক বাণিজ্য রুটের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হলে, বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোর অর্থনীতিতে তার নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা