ক্যালিফোর্নিয়ার হিন্দু মন্দিরে ঘৃণ্য হামলা! আতঙ্কিত ভারতীয়-আমেরিকানরা

ক্যালিফোর্নিয়ার একটি হিন্দু মন্দিরে ভাঙচুর, ভারত-বিরোধী স্লোগান: উদ্বেগে প্রবাসী ভারতীয় সম্প্রদায়।

যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের একটি সুপরিচিত হিন্দু মন্দিরে ভারত-বিরোধী এবং হিন্দু-বিরোধী লেখালেখির ঘটনায় সেখানকার ভারতীয় বংশোদ্ভূতদের মধ্যে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। স্থানীয় সময় গত ৮ মার্চ, ক্যালিফোর্নিয়ার চিনো হিলসে অবস্থিত বাপস শ্রী স্বামীনারায়ণ মন্দির-এ এই ঘটনা ঘটে।

মন্দিরের দেয়ালে “হিন্দুস্তান মুর্দাবাদ” লেখা ছিল, যার অর্থ “হিন্দুদের ধ্বংস হোক” অথবা “ভারতের পতন হোক”। মন্দিরের স্বেচ্ছাসেবক মেহুল প্যাটেল জানান, মন্দিরের সাইনবোর্ডেও এই ধরনের বিদ্বেষপূর্ণ মন্তব্য লেখা ছিল। এছাড়া, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে উদ্দেশ্য করে কুরুচিপূর্ণ কিছু বাক্য বাইরের একটি ইটের দেয়ালে এবং পাশের ফুটপাতেও লেখা হয়।

সান বার্নার্দিনো শেরিফের কর্মকর্তারা এই ঘটনাকে বিদ্বেষপূর্ণ অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত করে তদন্ত শুরু করেছেন। তবে, এখন পর্যন্ত কোনো সন্দেহভাজনকে শনাক্ত করা যায়নি।

মেহুল প্যাটেল জানিয়েছেন, এই ঘটনার পর স্থানীয় ভারতীয় সম্প্রদায়ের মধ্যে ভীতি ছড়িয়ে পড়েছে। এমনকি, ঘটনার প্রতিক্রিয়া ভারতেও পৌঁছেছে, যেখানে প্রধান গণমাধ্যমগুলো এই খবর প্রকাশ করেছে। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে এবং স্থানীয় কর্তৃপক্ষের কাছে দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।

মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল বলেন, “আমরা এই ধরনের ঘৃণ্য কাজের তীব্র নিন্দা জানাই। আমরা স্থানীয় আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে এই ঘটনার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য এবং উপাসনালয়গুলোর পর্যাপ্ত নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য আহ্বান জানাচ্ছি।”

প্যাটেল আরও জানান, সাধারণত প্রতিদিন প্রায় ১০০০ ভক্ত এই মন্দিরে আসেন। উৎসবের দিনগুলোতে এই সংখ্যা কয়েক হাজারে পৌঁছায়। তিনি বলেন, “আমাদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা রয়েছে, তবে এমন ঘটনার পর নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে, বিশেষ করে শিশুদের নিয়ে দুশ্চিন্তা হয়।”

মন্দিরটি ক্যালিফোর্নিয়ার সবচেয়ে বড় হিন্দু মন্দিরগুলির মধ্যে একটি। এটি প্রায় ২০ একর জমির উপর অবস্থিত, যার স্থাপত্যশৈলীতে গোলাপি বেলেপাথর এবং সাদা ইতালীয় মার্বেলের ব্যবহার রয়েছে। উল্লেখ্য, ২০১৯ সালে নিউ জার্সির রববিন্সভিলে এই সংস্থার তত্ত্বাবধানে ভারতের বাইরের সবচেয়ে বড় হিন্দু মন্দির নির্মিত হয়েছিল।

স্বামীনারায়ণ সম্প্রদায়, যা হিন্দুধর্মের একটি শাখা, বিশ্বজুড়ে ১,৩০০টির বেশি মন্দির এবং ৫,০০০টির বেশি কেন্দ্র পরিচালনা করে থাকে।

বস্তুত, এই প্রথম নয় যে বাপস (Bochasanwasi Shri Akshar Purushottam Swaminarayan Sanstha) নামক এই সংগঠনের মন্দির ভাঙচুরের শিকার হলো। এর আগে, গত বছরের সেপ্টেম্বরে নিউইয়র্কের মেলভিলে এবং একই বছরের ডিসেম্বরে ক্যালিফোর্নিয়ার নেওয়ার্কের মন্দিরেও একই ধরনের ঘটনা ঘটেছিল।

ক্যালিফোর্নিয়ার হেইওয়ার্ডে অবস্থিত দেবী দুর্গার মন্দিরেও ভাঙচুর চালানো হয়েছিল, যেখানে মোদিকে “সন্ত্রাসবাদী” আখ্যা দিয়ে এবং “খালিস্তান জিন্দাবাদ” লেখা হয়।

“খালিস্তান” হলো শিখ বিচ্ছিন্নতাবাদীদের একটি আন্দোলনের নাম, যারা ভারতের পাঞ্জাবে একটি আলাদা রাষ্ট্র গঠনের স্বপ্ন দেখে। ১৯৮৪ সালে ভারতের সরকার এই আন্দোলনকে দমন করে এবং এটিকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে ঘোষণা করে।

বর্তমানে, প্রবাসী শিখ সম্প্রদায়ের কিছু সদস্য যুক্তরাষ্ট্রে একটি অ-বাধ্যতামূলক গণভোটের আয়োজন করছে, যেখানে স্বাধীন খালিস্তান গঠনের বিষয়ে ভোট গ্রহণ করা হবে। লস অ্যাঞ্জেলেসে আগামী ২৩ মার্চ এই ভোট অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।

২০২৩ সালের গ্রীষ্মে, কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর অভিযোগের পর ভারত ও কানাডার মধ্যে উত্তেজনা বাড়ে। ট্রুডো অভিযোগ করেন, শিখ নেতা হারদীপ সিং নিজ্জারের হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে ভারত সরকারের হাত ছিল। একই বছর, যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগ জানায় যে, একজন ভারতীয় সরকারি কর্মকর্তা নিউইয়র্কে শিখ বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা গুরপতওয়ান্ত সিং পান্নুনকে হত্যার ষড়যন্ত্র করেছিলেন।

ক্যালিফোর্নিয়ার ইয়োলো কাউন্টিতে নিজ্জারের সহযোগী সাতিন্দর পাল সিং রাজুর ওপর হামলার ঘটনায় এফবিআই তদন্ত শুরু করেছে।

গত বছর, উত্তর ক্যালিফোর্নিয়ার মন্দিরগুলোতে ভাঙচুরের ঘটনার নিন্দা জানিয়েছিল স্থানীয় শিখ সংগঠনগুলো। খালিস্তানের প্রশ্নে প্রবাসী শিখ এবং ভারতের মধ্যে বিভেদ রয়েছে।

লস অ্যাঞ্জেলেসে খালিস্তান গণভোটের তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস (Associated Press)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *