ভেনেজুয়েলার ত্রেন দে আরagua: যুক্তরাষ্ট্রে ত্রাস, ট্রাম্পের কঠোর পদক্ষেপ!

যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন বিতর্ক: ভেনেজুয়েলার ত্রেন দে আরাগুয়া গ্যাং এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু।

যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন নীতি নিয়ে যখন রাজনৈতিক চাপানউতোর চলছে, তখন ভেনেজুয়েলার একটি কুখ্যাত গ্যাং, ‘ত্রেন দে আরাগুয়া’ (Tren de Aragua)-কে ঘিরে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে। প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই গ্যাংটিকে দেশের জন্য হুমকি হিসেবে চিহ্নিত করেছেন এবং এর বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলছেন। কেউ কেউ এই গ্যাংটিকে একটি নির্মম আন্তর্জাতিক অপরাধী সংগঠন হিসেবে দেখছেন, আবার কারো মতে এটি অভিবাসনবিরোধী প্রচারণার একটি অংশ।

ত্রেন দে আরাগুয়া গ্যাং-এর কার্যকলাপ মূলত ভেনেজুয়েলার কারাগারে শুরু হয়েছিল। এক দশকেরও বেশি সময় আগে, দেশটির আরাগুয়া রাজ্যের একটি কুখ্যাত কারাগারে এই গ্যাং-এর জন্ম হয়, যেখানে কঠোর অপরাধীরা তাদের কার্যক্রম চালাত। এরপর ভেনেজুয়েলার অর্থনৈতিক সংকট এবং রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে যখন প্রায় ৮০ লক্ষ মানুষ দেশ ছেড়ে অন্য দেশে পাড়ি জমাতে শুরু করে, তখন এই গ্যাং-এর প্রভাবও বিস্তার লাভ করে। তারা প্রতিবেশী দেশগুলোতে, বিশেষ করে পেরু ও কলম্বিয়ায় তাদের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড বৃদ্ধি করে।

যুক্তরাষ্ট্রেও এই গ্যাং-এর কার্যক্রম বিস্তৃত হয়েছে, যা উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। গ্যাংটি মাদক পাচার, নারী পাচার, এবং সহিংসতার সঙ্গে জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে। এমনকি, তারা অভিবাসী ভেনেজুয়েলীয়দেরও শোষণ করছে। সম্প্রতি, ট্রাম্পের সরকার গ্যাংটির সঙ্গে জড়িত সন্দেহে কয়েকশ অভিবাসীকে তাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠিয়েছে।

এই গ্যাং-এর কার্যকলাপ নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক অঙ্গনে বিতর্ক চলছে। গত গ্রীষ্মে ডেনভারের একটি অ্যাপার্টমেন্টে সশস্ত্র লোকজনের অনুপ্রবেশের একটি ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ার পর ট্রাম্প এই গ্যাং-এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার অঙ্গীকার করেন। তিনি অভিযোগ করেন, গ্যাংটি শহরটি দখল করতে চাইছে। যদিও স্থানীয় কর্তৃপক্ষ প্রথমে উদ্বেগকে গুরুত্ব দেয়নি, পরে তারা গ্যাং সদস্যদের সঙ্গে জড়িত সন্দেহে কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করে।

ট্রাম্পের প্রশাসন ত্রেন দে আরাগুয়াকে একটি “বিদেশী সন্ত্রাসী সংগঠন” হিসেবে চিহ্নিত করার পদক্ষেপ নিয়েছে। এর পাশাপাশি, বাইডেন প্রশাসন গ্যাং-এর শীর্ষ নেতাদের গ্রেপ্তারের জন্য ১ কোটি ২০ লক্ষ ডলার পুরস্কার ঘোষণা করেছে। ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশে গ্যাংটির বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে যে, তারা মাদুরো সরকারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রেখে অভিবাসন প্রবাহকে কাজে লাগাচ্ছে এবং যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরে মাদক সরবরাহ করছে।

এই গ্যাং-এর বিস্তার এবং এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়ে ভেনেজুয়েলার কর্মকর্তারা ভিন্নমত পোষণ করেন। তারা যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং তাদের দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার চেষ্টা হিসেবে দেখছেন। তাদের মতে, যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা ভেনেজুয়েলার অভিবাসীদের হেয় করার চেষ্টা করছেন।

যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন নীতি এবং ত্রেন দে আরাগুয়া গ্যাং-এর কার্যকলাপ নিয়ে বিতর্ক এখনো চলছে। তবে, এটি স্পষ্ট যে, এই গ্যাং এখন উভয় দেশের রাজনৈতিক আলোচনায় একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে উঠেছে।

তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *