জাপানে যাওয়ার আগে অবশ্যই এই বিষয়গুলো জেনে নিন! (ভ্রমণ গাইড)

জাপান, যেখানে পুরাতন আর নতুনের এক চমৎকার মিশ্রণ বিদ্যমান। প্রতি বছর লাখো পর্যটকের আনাগোনায় মুখরিত থাকে এই দেশ।

আধুনিক টোকিওর ঝলমলে জগৎ থেকে শুরু করে প্রাচীন রাজধানী কিয়োটোর ঐতিহাসিক স্থানগুলো, অথবা হাকোনের উষ্ণ প্রস্রবণ, ঐতিহ্যপূর্ণ রাইয়োকান (Ryokan) এবং ফুজি পর্বতের মনোমুগ্ধকর দৃশ্য – জাপানে যেনো সব ধরনের ভ্রমণকারীর জন্যেই কিছু না কিছু অপেক্ষা করে আছে।

বসন্তকালে, জাপানে গেলে চেরি ফুলের (Sakura) সৌন্দর্য্য উপভোগ করা এক অসাধারণ অভিজ্ঞতা। মার্চ মাসের শেষ থেকে এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি সময়ে, পুরো দেশ যেন গোলাপী রঙে সেজে ওঠে।

টোকিওর উয়েনো পার্কে (Ueno Park) সাকুরার নিচে বসে পিকনিকের আনন্দ উপভোগ করা যেতে পারে, অথবা মেগুরো নদীর (Meguro River) ধারে ফুলের শোভাযাত্রা দেখতে পারেন। যারা ঐতিহ্যপূর্ণ পরিবেশে “হানামি” (ফুল দেখা) উপভোগ করতে চান, তারা উত্তর দিকে আকিটা (Akita) যেতে পারেন, যেখানে কাকুনোডেট (Kakunodate)-এর পুরনো সামুরাই জেলাটি অবস্থিত।

এছাড়াও, আওমোরিতে (Aomori) গিয়ে হিরোশাকি ক্যাসেলে (Hirosaki Castle) ফুলের স্নিগ্ধতা উপভোগ করতে পারেন।

গরমকালে, জাপানে উৎসবের মরসুম শুরু হয়। জুলাই মাসের শেষের দিকে টোকিওর সুমিদা নদী ফায়ারওয়ার্কস (Sumida River Fireworks) এখানকার অন্যতম আকর্ষণ।

আগস্টের শুরুতে আওমোরিতে অনুষ্ঠিত হয় নেবুটা মাতসুরি (Nebuta Matsuri)। আর একই মাসে, টোকুশিমায় (Tokushima) হাজারো রঙিন পোশাকে সজ্জিত নৃত্যশিল্পীদের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত হয় আওয়া-ওডোরি (Awa-Odori) উৎসব।

শরৎকালে, “কোয়ো” (Koyo) বা শরৎকালীন রঙিন পাতার দৃশ্য মুগ্ধ করে তোলে। জোজাংকেই অনসেনের (Jozankei Onsen) গরম বাথ-এ বসে অথবা তোয়ামার (Toyama) কুরোবে গর্জ রেলওয়ের (Kurobe Gorge Railway) উন্মুক্ত আসনে বসে এই দৃশ্য উপভোগ করা যেতে পারে।

যারা লম্বা পথ হেঁটে এই সৌন্দর্য উপভোগ করতে চান, তারা হোক্কাইডোর (Hokkaido) ডাইসেতসুজান ন্যাশনাল পার্কে (Daisetsuzan National Park) অথবা তোতোরির (Tottori) ৫,৬০৬-ফুট উঁচু মাউন্ট ডেইসেনে (Mount Daisen) যেতে পারেন।

শীতকালে, হোক্কাইডোর সাপোরোতে (Sapporo) ফেব্রুয়ারীর শুরুতে অনুষ্ঠিত হয় স্নো ফেস্টিভ্যাল (Snow Festival)। এখানকার বিশাল বরফের মূর্তিগুলো পর্যটকদের মন জয় করে।

এরপর শহরের জনপ্রিয় মিসো রামেন (Miso Ramen) এবং স্পাইসি স্যুপ কারি (Spicy Soup Curry) দিয়ে শীত উপভোগ করা যেতে পারে। এছাড়াও, নিসেকোর (Niseko) বরফের চাদরে মোড়া ঢালগুলো স্কিইং এবং স্নোবোর্ডিং-এর জন্য সেরা স্থান।

জাপানের প্রধান শহরগুলোতে ঘুরে বেড়ানোও একটি বিশেষ অভিজ্ঞতা। পুরাতন টোকিওর ইয়ানাকা (Yanaka) এলাকায় হেঁটে অথবা মেইজি জিংু শ্রাইনে (Meiji Jingu Shrine) গিয়ে পুরানো দিনের স্মৃতিচারণ করতে পারেন।

আধুনিকতার ছোঁয়া পেতে হলে, ফ্যাশনেবল ওমোতেসান্দো (Omotesando) অথবা টিমল্যাব গ্যালারিতে (teamLab galleries) যেতে পারেন। খাদ্যরসিকদের জন্য টোকিওর সুস্বাদু সুশি, রামেন এবং কাইসেকি (Kaiseki) খাবারের স্বাদ নেওয়া আবশ্যক।

কিয়োটোতে (Kyoto) অবস্থিত সোনালী কিনকাকু-জি মন্দির (Kinkaku-ji Temple) এবং ফুশিমি ইনারি শ্রাইনের (Fushimi Inari Shrine) “টোরি গেটওয়ে”-এর পথগুলো এখানকার প্রধান আকর্ষণ।

এছাড়াও, কোলাহলমুক্ত জীবন যারা পছন্দ করেন, তারা কিয়োটোর উত্তরে অবস্থিত ইন (Ine)-এর শান্ত মাছ ধরার গ্রামগুলোতে যেতে পারেন।

যারা ট্রেকিং ভালোবাসেন, তারা মিছিনোকু কোস্টাল ট্রেইলে (Michinoku Coastal Trail) যেতে পারেন, যা ৬২১ মাইল দীর্ঘ। এই পথে পাথুরে পাহাড়, বালুকাময় সৈকত এবং সুন্দর মাছ ধরার বন্দর দেখা যায়।

এছাড়াও, হাইকুই লেখক মাৎসুও বাশোর (Matsuo Basho) পদাঙ্ক অনুসরণ করে ইয়ামাদেরা (Yamadera) পাহাড়ের উপরে অবস্থিত মন্দিরে ভ্রমণ করতে পারেন।

ঐতিহ্যপূর্ণ রাইয়োকান, গরম পানির ঝর্ণা এবং মাউন্ট ফুজি-র (Mount Fuji) মনোমুগ্ধকর দৃশ্যের জন্য হাকোনে (Hakone) টোকিও থেকে একটি জনপ্রিয় গন্তব্য।

মাগোমে (Magome) এবং সুমাগো (Tsumago)-এর মধ্যে পুরনো ইদো-যুগের (Edo-era) গ্রামগুলোতে হেঁটে যাওয়াও একটি চমৎকার অভিজ্ঞতা হতে পারে।

হিরোশিমায় (Hiroshima) গেলে, ১৯৪৫ সালের পারমাণবিক বোমা হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত “এ-বম্ব ডোম” স্মৃতিস্তম্ভ এবং মিয়াজিমা দ্বীপের (Miyajima Island) “ভাসমান” ইৎसुकুশিমা shrine (Itsukushima Shrine) পরিদর্শন করতে পারেন।

এছাড়াও, শিমিনামি কাইদো (Shimanami Kaido) সাইকেল পথে ভ্রমণ করে জাপানের মূল দ্বীপকে শিকোকু (Shikoku)-এর সাথে সংযোগকারী সেতুগুলির মনোরম দৃশ্য উপভোগ করা যেতে পারে।

ওকিনাওয়ার (Okinawa) দ্বীপগুলিতে সাদা বালুকাময় সমুদ্র সৈকত, প্রবাল প্রাচীর, ম্যানগ্রোভ বন এবং স্থানীয় রিউকিয়ান সংস্কৃতি (Ryukyuan culture) উপভোগ করতে পারেন।

এছাড়াও, কিউশুতে (Kyushu) অবস্থিত আসো-কিউজু জাতীয় উদ্যানে (Aso-Kuju National Park) হাইকিং এবং অশ্বারোহণের সুযোগ রয়েছে।

জাপানের খাবারও একটি বিশেষ আকর্ষণ। রামেন (Ramen) এখানকার একটি জনপ্রিয় খাবার।

হাকাটা রামেন (Hakata ramen) তার বিশেষ স্বাদ ও সুগন্ধের জন্য বিখ্যাত। এছাড়াও, সুশি (Sushi) প্রেমীদের জন্য বিভিন্ন ধরনের সুশি উপভোগ করার সুযোগ রয়েছে।

বাজেট-বান্ধব খাবারের জন্য কাইতেনজুশি (Kaitenzushi)-এর মতো চেইন রেস্টুরেন্টগুলোতে যেতে পারেন।

জাপানে ভ্রমণের জন্য ট্রেনের (Train) বিকল্প সবথেকে ভালো। জাপান রেলওয়ে (Japan Railways) প্রধান শহরগুলোর মধ্যে বুলেট ট্রেন (Bullet train) পরিচালনা করে এবং বিদেশীদের জন্য সাশ্রয়ী রেল পাসও সরবরাহ করে।

এছাড়াও, অভ্যন্তরীণ ভ্রমণের জন্য বিমানপথও বেছে নিতে পারেন। এছাড়াও, গ্রামাঞ্চলে ভ্রমণের জন্য গাড়ি ভাড়া করার সুযোগ রয়েছে।

ভাষা: জাপানের সরকারি ভাষা জাপানিজ। প্রধান শহর ও পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে ইংরেজিও বলা হয়।

ভিসা: বাংলাদেশিদের জন্য জাপানে যেতে ভিসার প্রয়োজন হয়। তাই, ভ্রমণের আগে অবশ্যই জাপান দূতাবাস/কনস্যুলেট-এর ওয়েবসাইটে ভিসার জন্য আবেদন করার নিয়ম জেনে নিতে হবে।

তথ্য সূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *