যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা থাকা সত্ত্বেও লেবাননের এক চিকিৎসককে সম্প্রতি দেশটিতে ফেরত পাঠানো হয়েছে। মার্কিন নিরাপত্তা বিভাগ (হোমল্যান্ড সিকিউরিটি) সোমবার জানিয়েছে, রাশিয়া আলাউয়েহ নামের ওই চিকিৎসক হেজবুল্লাহর এক নেতার প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন এবং তার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় অংশ নিয়েছিলেন বলে তিনি নিজেই স্বীকার করেছেন।
ডা. আলাউয়েহকে ফেরত পাঠানোর কারণ হিসেবে এই বিবৃতি দিয়েছে হোমল্যান্ড সিকিউরিটি। এর আগে এক ফেডারেল বিচারক শুনানি না হওয়া পর্যন্ত তাকে ফেরত না পাঠানোর নির্দেশ দিলেও কাস্টমস কর্মকর্তারা সেই খবর পাননি।
হোমল্যান্ড সিকিউরিটি তাদের বিবৃতিতে আরও জানায়, ‘ভিসা কোনো অধিকার নয়, এটি একটি বিশেষ সুযোগ। যারা আমেরিকানদের হত্যা করে এমন সন্ত্রাসীদের সমর্থন করে, তাদের ভিসা দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এটা খুবই সাধারণ একটি বিষয়।’
লেবাননের এই চিকিৎসকের ফেরত পাঠানোর ঘটনাটি নতুন নয়। এর আগে ফিলিস্তিনি অ্যাক্টিভিস্ট মাহমুদ খলিলকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে গাজা যুদ্ধ নিয়ে বিক্ষোভের নেতৃত্ব দেওয়ার কারণে এক পিএইচডি শিক্ষার্থীর ভিসা বাতিল করা হয়। এমনকি ফেডারেল আদালত অভিবাসন প্রত্যাশীদের ফেরত পাঠানোর ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করলেও ট্রাম্প প্রশাসন কয়েকশ’ অভিবাসীকে এল সালভাদরে পাঠিয়ে দেয়।
ডা. আলাউয়েহর আইনজীবী স্টেফানি মারজুক জানিয়েছেন, তিনি তার মক্কেলকে যুক্তরাষ্ট্রে ফিরিয়ে আনার জন্য লড়াই চালিয়ে যাবেন। তিনি বলেন, ‘আলাউয়েহ যেখানে কাজ করেন, সেই হাসপাতালে তার রোগীদের চিকিৎসা করা উচিত।’
আলাউয়েহর আইনজীবী হোমল্যান্ড সিকিউরিটির অভিযোগের বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
আদালতের কিছু নথি এখনো সিল করা হয়েছে। বিচার বিভাগ আলাউয়েহকে ফেরত পাঠানোর কারণ ব্যাখ্যা করে আদালতে নথি জমা দিয়েছে, তবে একজন ফেডারেল বিচারক সেই নথিগুলো সিল করে দিয়েছেন।
আদালতের নথিগুলো প্রকাশের আগে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম জানতে পারে, আলাউয়েহর ফোনে হিজবুল্লাহর নেতা হাসান নাসরুল্লাহর ছবি ছিল। এছাড়া, তার ফোনে হিজবুল্লাহর যোদ্ধা ও শহীদদের ছবিও পাওয়া গেছে বলে জানা গেছে।
আদালতের নথিতে বলা হয়েছে, ‘ডা. আলাউয়েহ জানিয়েছেন, তিনি ধর্মীয় ও আধ্যাত্মিক শিক্ষার জন্য তাকে অনুসরণ করেন, রাজনীতির জন্য নয়।’
আলাউয়েহকে যখন জিজ্ঞাসা করা হয়, কেন তিনি বোস্টনে আসার কয়েক দিন আগে ছবিগুলো মুছে ফেলেন, তখন তিনি জানান, ‘আমি কোনো ভুল করছি না, তবে লোকেদের ভুল ধারণা দেওয়ার কোনো ইচ্ছে ছিল না। রাজনীতি বা সামরিক বাহিনীর সঙ্গে আমার কোনো সম্পর্ক নেই।’
আলাউয়েহ গত ১১ মার্চ ভিসা পান এবং গত বৃহস্পতিবার বোস্টন লোগান আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছান। তার এক আত্মীয় ফেডারেল আদালতে অভিযোগ দায়ের করে জানিয়েছেন, বিমানবন্দরে অন্তত ৩৬ ঘণ্টা আটকে রাখা হয় তাকে। এরপর ব্রাউন ইউনিভার্সিটিতে মেডিসিনের সহকারী অধ্যাপক হিসেবে তার যোগ দেওয়ার কথা ছিল।
আদালতের নির্দেশের পরও আলাউয়েহকে ফেরত পাঠানো হয়, যা আইনকে ‘উপেক্ষা’ করার শামিল বলে অভিযোগ করা হয়েছে।
এদিকে, ব্রাউন ইউনিভার্সিটির একজন মুখপাত্র জানিয়েছেন, আলাউয়েহ ব্রাউন মেডিসিনের একজন কর্মচারী এবং ব্রাউনের সঙ্গে তার ক্লিনিক্যাল অ্যাপয়েন্টমেন্ট রয়েছে। ব্রাউন মেডিসিন একটি অলাভজনক চিকিৎসা কেন্দ্র, যা ব্রাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল স্কুলের সঙ্গে যুক্ত।
আলাউয়েহর সমর্থনে রোড আইল্যান্ডে একটি সমাবেশের পরিকল্পনা করা হয়েছে। সোমবার বোস্টনের ফেডারেল আদালতের বাইরে আলাউয়েহর কয়েকজন সহকর্মী তার প্রতি সমর্থন জানান।
ডা. সুসি হু বলেন, ‘তিনি রোড আইল্যান্ডে তিনজন নেফ্রোলজিস্টের মধ্যে একজন। তার অনুপস্থিতি আমাদের প্রোগ্রামের জন্য খুবই ক্ষতিকর।’
ডা. ডগলাস শেমিন জানিয়েছেন, তিনি আলাউয়েহকে ব্রাউন মেডিসিনে নিয়োগ করেছিলেন। তিনি আলাউয়েহকে একজন ‘ outstanding’ চিকিৎসক ও শিক্ষক হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
শেমিনের মতে, ব্রাউন মেডিসিনে কিডনি প্রতিস্থাপনের জন্য প্রায় ৩০০ থেকে ৪০০ রোগী অপেক্ষা করছেন। তাদের প্রত্যেককে নিয়মিত মূল্যায়ন করতে হয়, যা এখন মাত্র দুজন চিকিৎসককে করতে হচ্ছে।
অন্যদিকে, কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র মাহমুদ খলিলের আইনজীবীরা তাকে জামিনে মুক্তি দেওয়ার অথবা লুইসিয়ানা ডিটেনশন সেন্টার থেকে নিউইয়র্কে ফিরিয়ে নেওয়ার আবেদন জানিয়েছেন।
আদালতে জমা দেওয়া নথিতে আইনজীবীরা লিখেছেন, খলিলের সঙ্গে হওয়া আচরণ ‘প্রত্যেক অভিবাসীকে আতঙ্কিত করে তুলবে যে, তারা জনসাধারণের উদ্বেগের বিষয় নিয়ে কথা বললে বা মার্কিন সরকারের সমালোচনা করলে প্রতিশোধের শিকার হতে পারেন।’
তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস।