যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সাহায্যকারীদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে একটি সংগঠন। আফগানিস্তানে মার্কিন সামরিক বাহিনীর সঙ্গে কাজ করা মানুষগুলোর পাশে দাঁড়িয়েছে ‘নো ওয়ান লেফট বিহাইন্ড’ নামের একটি সংগঠন।
যারা কোনো না কোনোভাবে মার্কিন সেনাদের সাহায্য করেছিলেন, তাদের যুক্তরাষ্ট্রে পুনর্বাসনে সহায়তা করাই এই সংগঠনের প্রধান কাজ। ট্রাম্প প্রশাসনের সময় তাদের জন্য সাহায্য বন্ধ করে দেওয়া হলেও, সংগঠনটি এখন ভিসা পাওয়া আফগানদের পাশে দাঁড়াচ্ছে।
সংগঠনটির পরিচালক অ্যান্ড্রু সুলিভ্যান বলেন, “আমি যদি সেই লোকটিকে ফেরত পাঠাতাম, যে তালিবানের হামলায় আহত হয়ে হুইলচেয়ারে জীবন কাটাচ্ছে, তাহলে নিজেকে কীভাবে দেখতাম? সৌভাগ্যবশত, তাকে আমেরিকায় নিয়ে আসা গেছে।”
আফগান এবং ইরাকিদের বিশেষ অভিবাসী ভিসা (এসআইভি) প্রোগ্রামের মাধ্যমে সাহায্য করা হয়। ২০০৯ সালে মার্কিন কংগ্রেস এই প্রোগ্রাম চালু করে।
এর মাধ্যমে যারা আফগানিস্তান ও ইরাক যুদ্ধে আমেরিকাকে সাহায্য করেছেন, তাদের জীবন ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠলে যুক্তরাষ্ট্রে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হয়।
আফগান শরণার্থীদের জন্য বিশেষ এই সহায়তা বন্ধ করে দিয়েছিলেন তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি তাদের জন্য ফ্লাইট বুকিংয়ের প্রোগ্রামও স্থগিত করেন এবং যুক্তরাষ্ট্রে পুনর্বাসনে সহায়তাকারী সংস্থাগুলোর সাহায্যও বন্ধ করে দেন।
ফলে ভিসাধারী শত শত মানুষ সেখানে আটকা পড়েন। বর্তমানে, অনেক আফগান শরণার্থীর আশ্রয়স্থলগুলোতেও তাদের অবস্থা আগের চেয়ে খারাপ হয়েছে।
কয়েক বছর ধরে পাকিস্তান থেকে আফগানদের বিতাড়ন বেড়েছে। আলবেনিয়া আফগানদের জন্য একটি অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র ছিল, কিন্তু মার্চ মাসেই সেই চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়ে যাবে।
আফগানদের জন্য সবচেয়ে বড় উদ্বেগের বিষয় হলো, ট্রাম্প প্রশাসন আবারও ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা জারি করতে পারে। এমনটা হলে আফগানিস্তান থেকে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের পথ সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
যদিও এই বিষয়ে এখনো কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। এ পরিস্থিতিতে ‘নো ওয়ান লেফট বিহাইন্ড’ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে যাতে ভিসাধারীরা কোনোভাবেই বিদেশে আটকা না পড়ে।
তারা অর্থ সংগ্রহ করে টিকিট বুক করছে এবং যুক্তরাষ্ট্রে তাদের পুনর্বাসনে সহায়তা করছে। ১ ফেব্রুয়ারি থেকে ১৭ মার্চের মধ্যে তারা ৬৩৯ জন আফগানের জন্য সফলভাবে বিমানের টিকিট বুক করতে পেরেছে।
সংস্থাটি একটি ওয়েবসাইটও চালু করেছে, যেখানে ভিসাধারীরা তাদের তথ্য দিতে পারে। এর মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রে তাদের বসবাসের জায়গা খুঁজে বের করতে সুবিধা হয়।
আফগান বংশোদ্ভূত এক নারী, যিনি ‘নো ওয়ান লেফট বিহাইন্ড’-এর হয়ে কাজ করেন, তার নাম আকিলা। তিনি আলবেনিয়া ও কাতারে গিয়ে আটকে পড়া আফগানদের সাহায্য করেছেন।
আকিলা জানান, আমেরিকায় আসার পর পরিবারগুলো কী করবে, তা নিয়ে তাদের মধ্যে অনেক অনিশ্চয়তা ছিল। কারো থাকার জায়গা ছিল না, আবার কেউ বিমানবন্দরে একা ছিলেন।
আকিলা তাদের আশ্বস্ত করেছেন যে, তাদের দেখাশোনার জন্য অবশ্যই কেউ না কেউ থাকবে।
মোহাম্মদ সাবুর নামের এক ব্যক্তি ১৭ বছর ধরে আন্তর্জাতিক ও মার্কিন বাহিনীর সঙ্গে ইলেক্ট্রিশিয়ান ও এসি টেকনিশিয়ান হিসেবে কাজ করেছেন। তার সাত সন্তান রয়েছে।
তালিবান ক্ষমতা দখলের পর তিনি পরিবার নিয়ে আলবেনিয়ায় যান এবং পরে গত ১২ মার্চ ক্যালিফোর্নিয়ায় পৌঁছান।
সাবুর বলেন, ২০২১ সালের আগস্টে তালিবান ক্ষমতা দখলের পর থেকে তিনি আর আফগানিস্তানে নিরাপদ ছিলেন না। তিনি আশঙ্কা করছিলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কাজ করার কারণে তাকে হত্যা করা হতে পারে।
তিনি চান তার সন্তানেরা ভালো একটি ভবিষ্যৎ পাক। যুক্তরাষ্ট্রে আসার পর তিনি শান্তি অনুভব করছেন।
সুলিভ্যান মনে করেন, ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা জারি হলেও এসআইভি প্রোগ্রামের অধীনে থাকা আফগানদের জন্য কিছু ব্যতিক্রম রাখা উচিত। কারণ, তারা আমেরিকার সেনাদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করেছেন।
আকিলা জানান, আফগানিস্তানে মানুষের কষ্টের কথা শুনে তিনি খুব মর্মাহত হন। তবে যারা আমেরিকায় এসেছেন, তাদের ছবি দেখলে তিনি শান্তি পান।
তাদের চোখে নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখতে পান, যা তাকে আনন্দ দেয়। তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস