যুক্তরাষ্ট্রের শাসনতন্ত্রীয় সংকট: একটি পর্যালোচনা
সংবিধান একটি দেশের মূল ভিত্তি, যা সরকারের ক্ষমতাকে সংজ্ঞায়িত করে এবং নাগরিকদের অধিকার নিশ্চিত করে। এই সংবিধান লঙ্ঘিত হলে বা এর কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন উঠলে, তাকে শাসনতান্ত্রিক সংকট হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
সম্প্রতি, যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কিছু পদক্ষেপ এই সংকট তৈরি করেছে কিনা, তা নিয়ে বিতর্ক চলছে।
সংজ্ঞা এবং প্রেক্ষাপট
সংজ্ঞা অনুসারে, শাসনতান্ত্রিক সংকট বলতে বোঝায় যখন সরকারের তিনটি প্রধান বিভাগ—আইনসভা, শাসন বিভাগ ও বিচার বিভাগের মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য নষ্ট হয়। এই বিভাগগুলোর একে অপরের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকতে হয় এবং একে অপরের ক্ষমতাকে সীমিত করতে হয়।
কিন্তু যখন একটি বিভাগ অন্য বিভাগের সিদ্ধান্তকে অগ্রাহ্য করে, তখনই সংকট দেখা দেয়।
ট্রাম্প প্রশাসনের বিতর্কিত পদক্ষেপ
ডোনাল্ড ট্রাম্পের সময়ে বেশ কিছু ঘটনা ঘটেছে যা শাসনতান্ত্রিক সংকটের ইঙ্গিত দেয়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো—ফেডারেল বিচারকের একটি আদেশকে উপেক্ষা করে ভেনেজুয়েলার কিছু নাগরিককে বিতাড়িত করার ঘটনা।
বিচারক বিতাড়ন বন্ধ করতে বললেও, ট্রাম্প প্রশাসন তা আমলে নেয়নি। এছাড়া, ২০১৬ সালের নির্বাচনে পরাজয়ের পরও ক্ষমতা ধরে রাখার চেষ্টা এবং বিভিন্ন সময়ে বিচার বিভাগীয় তদন্তে অসহযোগিতা ছিল গুরুতর অভিযোগ।
বিশেষজ্ঞদের মতামত
এই পরিস্থিতিকে কেউ কেউ ‘সাংবিধানিক সংকট’ বলছেন, আবার কারো মতে, এটি ‘সংবিধানের প্রতি অবজ্ঞা’র শামিল। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আদালতের নির্দেশ অমান্য করা হলে তা গুরুতর সমস্যা তৈরি করে।
তবে, অনেকের মতে, সরকারের বিভিন্ন বিভাগের মধ্যে মতবিরোধ থাকতেই পারে, কিন্তু তাই বলে এখনই সংকট বলা যাবে না।
যুক্তরাষ্ট্রের আইন অনুযায়ী, সরকারের কোনো সিদ্ধান্তের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করলে, আপিল করার সুযোগ রয়েছে। কিন্তু আদালতকে অগ্রাহ্য করা বা তার নির্দেশ না মানা গুরুতর বিষয়।
গুরুত্বপূর্ণ বিষয়
এই সংকটকালে কংগ্রেসের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যদি ট্রাম্প প্রশাসন আদালতের সিদ্ধান্তকে উপেক্ষা করে, তবে আইনপ্রণেতাদের, বিশেষ করে রিপাবলিকান দলের সদস্যদের, এগিয়ে এসে আইনের শাসন সমুন্নত রাখতে হবে।
কয়েকজন সিনেটর এরই মধ্যে জানিয়েছেন, তাঁরা আদালতের প্রতি সমর্থন জানাবেন।
সারসংক্ষেপ
যুক্তরাষ্ট্রে শাসনতান্ত্রিক সংকট একটি জটিল বিষয়। এখানে সরকারের বিভিন্ন বিভাগের মধ্যে ক্ষমতার বিভাজন এবং একে অপরের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ বজায় রাখা জরুরি। ট্রাম্প প্রশাসনের কিছু পদক্ষেপ এই বিষয়টিকে নতুন করে আলোচনায় এনেছে।
ভবিষ্যতে, আদালতের সিদ্ধান্তকে সম্মান জানানো এবং আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে কংগ্রেসের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ হবে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন