হার্ভার্ডে পড়তে চান? বছরে ২২ কোটি টাকার কম আয় হলে টিউশন ফি-র চিন্তা নেই!
যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম সেরা বিদ্যাপীঠ হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় ঘোষণা করেছে, আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকে যে সব শিক্ষার্থীর পরিবারের বার্ষিক আয় ২ লক্ষ মার্কিন ডলারের (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ২২ কোটি টাকা) নিচে, তাদের আর টিউশন ফি দিতে হবে না। শুধু তাই নয়, যে সব পরিবারের বার্ষিক আয় ১ লক্ষ মার্কিন ডলারের (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ১১ কোটি টাকা) কম, তাদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে আবাসন, স্বাস্থ্য বীমা এবং বাড়ি থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে আসা-যাওয়ার খরচও বহন করা হবে।
বর্তমানে হার্ভার্ডে আন্ডারগ্র্যাজুয়েট পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি বছরে প্রায় ৫৬ হাজার মার্কিন ডলার (প্রায় ৬১ লক্ষ ৬০ হাজার টাকা)। এছাড়া, অন্যান্য খরচসহ একজন শিক্ষার্থীর শিক্ষা বাবদ মোট ব্যয় হয় প্রায় ৮৩ হাজার মার্কিন ডলার (প্রায় ৯১ লক্ষ ৩০ হাজার টাকা)।
হার্ভার্ড কর্তৃপক্ষের এই সিদ্ধান্ত নিঃসন্দেহে উচ্চশিক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হওয়া অনেক মেধাবী শিক্ষার্থীর জন্য একটি বড় সুসংবাদ। এটি মূলত ২০০৪ সাল থেকে চালু হওয়া ‘হার্ভার্ড ফাইনান্সিয়াল এইড ইনিশিয়েটিভ’-এর সম্প্রসারণ। এই প্রকল্পের আওতায় আগে থেকেই নির্দিষ্ট পরিমাণ আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হতো। সময়ের সাথে সাথে এই প্রকল্পের সুযোগ আরও বাড়ানো হয়েছে।
বর্তমানে, যে সব পরিবারের বার্ষিক আয় ৮৫ হাজার ডলারের কম, তাদের ছেলে-মেয়েরা বিনামূল্যে হার্ভার্ডে পড়ার সুযোগ পায়।
হার্ভার্ডের এই পদক্ষেপের ফলে মধ্যবিত্ত পরিবারের শিক্ষার্থীরা বিশেষভাবে উপকৃত হবেন। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের মতে, এর ফলে বিভিন্ন আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপট থেকে আসা শিক্ষার্থীদের মধ্যে পারস্পরিক যোগাযোগের সুযোগ বাড়বে, যা তাদের জ্ঞান ও অভিজ্ঞতার ভাণ্ডারকে আরও সমৃদ্ধ করবে।
হার্ভার্ডের প্রেসিডেন্ট অ্যালান এম. গারবার এক বিবৃতিতে বলেন, “শিক্ষার্থীদের জন্য হার্ভার্ডের দুয়ার আরও উন্মুক্ত করার ফলে বিভিন্ন ব্যাকগ্রাউন্ড, অভিজ্ঞতা ও দৃষ্টিভঙ্গির সংমিশ্রণ ঘটবে, যা আমাদের সকল শিক্ষার্থীর বৌদ্ধিক ও ব্যক্তিগত বিকাশে সহায়তা করবে।”
উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, শুধু হার্ভার্ডই নয়, আরও বেশ কয়েকটি স্বনামধন্য মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয় তাদের আর্থিক সহায়তা কর্মসূচি বৃদ্ধি করেছে। এর মধ্যে রয়েছে ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি (এমআইটি), ইউনিভার্সিটি অফ পেনসিলভানিয়া এবং ইউনিভার্সিটি অফ টেক্সাস।
নভেম্বরে এমআইটি ঘোষণা করে, যে সব শিক্ষার্থীর পরিবারের বার্ষিক আয় ২ লক্ষ ডলারের নিচে, তাদের টিউশন ফি মওকুফ করা হবে। আর যাদের আয় ১ লক্ষ ডলারের কম, তাদের আবাসনসহ অন্যান্য খরচও বহন করা হবে।
ইউনিভার্সিটি অফ পেনসিলভানিয়াও জানিয়েছে, তারা ২ লক্ষ ডলার পর্যন্ত আয়ের পরিবারের শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি দেবে না। ইউনিভার্সিটি অফ টেক্সাস-এর সিদ্ধান্তেও ১ লক্ষ ডলারের কম আয়ের পরিবারের শিক্ষার্থীরা বিনামূল্যে পড়াশোনার সুযোগ পাবে।
হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশাল একটি ফান্ড রয়েছে, যা এই ধরনের সহায়তা প্রদানের জন্য ব্যবহৃত হবে। বর্তমানে, বিশ্ববিদ্যালয়ের এই ‘এন্ডোমেন্ট’-এর পরিমাণ ৫৩.২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।
এই ফান্ড থেকেই শিক্ষার্থীদের টিউশন ও অন্যান্য খরচ মেটানো হবে। বর্তমানে হার্ভার্ডের প্রায় ৫৫ শতাংশ আন্ডারগ্র্যাজুয়েট শিক্ষার্থী আর্থিক সহায়তা পেয়ে থাকে।
উচ্চশিক্ষার ক্রমবর্ধমান খরচ নিয়ে বিশ্বজুড়ে উদ্বেগ বাড়ছে। যুক্তরাষ্ট্রে ১৯৮০ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে আন্ডারগ্র্যাজুয়েট ডিগ্রির খরচ ১৬৯ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে।
তথ্য অনুযায়ী, সেখানকার বেসরকারি কলেজগুলোতে বর্তমানে টিউশন ও অন্যান্য ফি বাবদ বছরে গড়ে প্রায় ৪৩ হাজার ডলার খরচ হয়।
এই খবরটি বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, যারা ভালো ফল করে বিদেশে বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রে পড়াশোনা করতে যেতে চান, তাদের জন্য এই ধরনের সুযোগ অত্যন্ত মূল্যবান।
তবে, ডলারের দামের পরিবর্তন হওয়ায় টাকার অঙ্কে খরচের পরিমাণে তারতম্য হতে পারে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন