বিশ্বের কুৎসিততম প্রাণী হিসেবে পরিচিত একটি মাছ, ব্লবফিশ, এবার নিউজিল্যান্ডের বর্ষসেরা মাছের খেতাব জিতেছে। গভীর সমুদ্রের এই অদ্ভুত দর্শন মাছটি নিউজিল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার উপকূলের কাছে বাস করে এবং এখানকার উচ্চ চাপের সঙ্গে মানিয়ে নিতে বিশেষ শারীরিক গঠন তৈরি করেছে।
ব্লবফিশের শরীরে পটকা, কংকাল, মাংসপেশি বা আঁশ নেই। বরং এটি জেলির মতো নরম টিস্যু দিয়ে গঠিত, যা জলের চেয়ে হালকা হওয়ায় সমুদ্রের গভীরে ভেসে থাকতে সাহায্য করে।
মাছটি সম্ভবত ১৩০ বছর পর্যন্ত বাঁচতে পারে এবং এরা খুব ধীর গতিতে বেড়ে ওঠে। নিউজিল্যান্ডের ‘মাউন্টেইনস টু সি কনজারভেশন ট্রাস্ট’-এর মুখপাত্র কনরাড কুর্তা জানিয়েছেন, এরা শিকারের অপেক্ষায় থাকে, যতক্ষণ না শিকারী এদের খুব কাছে আসে এবং কার্যত এদের মুখের ভেতর প্রবেশ করে।
ব্লবফিশ একনিষ্ঠ অভিভাবকও বটে। স্ত্রী ব্লবফিশ একবারে ১ লক্ষ পর্যন্ত ডিম পাড়ে এবং তাদের বাচ্চার জন্ম না হওয়া পর্যন্ত আগলে রাখে।
এক দশক আগে, নিউজিল্যান্ডের একটি গবেষণা জাহাজের কর্মীর ক্যামেরায় বিরল এই মাছের ছবি ধরা পড়ার পরই এটি পরিচিতি লাভ করে। এর অদ্ভুত চেহারা দ্রুতই ইন্টারনেট দুনিয়ায় ‘মিম’-এর বিষয় হয়ে ওঠে।
জলের চাপ কম হওয়ার কারণে, জল থেকে তোলার পর মাছটির আসল চেহারা বিকৃত হয়ে যায়। কুর্তা বলেন, “দুর্ভাগ্যবশত, যখন এটিকে জল থেকে তোলা হয়, তখন হঠাৎ চাপ কমে যাওয়ার কারণে এর আকার পরিবর্তন হয়ে যায়।”
নিউজিল্যান্ডের এই ‘বর্ষসেরা মাছ’ প্রতিযোগিতায় ব্লবফিশ ১,২৮৬ ভোট পেয়ে প্রথম স্থান অধিকার করে। দ্বিতীয় স্থানে ছিল অরেঞ্জ রাফি নামক মাছ, যা পরিবেশবাদী সংগঠন গ্রিনপিস, ফরেস্ট অ্যান্ড বার্ড এবং এনভায়রনমেন্টাল ল’ ইনিশিয়েটিভের সমর্থন লাভ করেছিল।
এনভায়রনমেন্টাল ল’ ইনিশিয়েটিভের মুখপাত্র অ্যারন প্যাকার্ড বলেন, “ব্লবফিশের জয় পুরো বাস্তুতন্ত্রের জয়, কারণ ব্লবফিশ জয়ী হওয়া মানে অরেঞ্জ রাফিরও জয়।” উল্লেখ্য, বিশ্বে আহরণ করা অরেঞ্জ রাফির প্রায় ৮০ শতাংশই নিউজিল্যান্ড থেকে আসে।
গভীর সমুদ্রের তলদেশ দিয়ে মাছ ধরার কারণে বাস্তুতন্ত্রের ক্ষতি হয় এবং মাছের প্রজাতি দুর্বল হয়ে পড়ার আশঙ্কায় পরিবেশবাদীরা এই মাছ ধরা বন্ধের জন্য নিয়মিত আহ্বান জানান।
২০২০ সালে ‘বার্ড অফ দা ইয়ার’-এর জনপ্রিয়তার দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে ‘মাউন্টেইনস টু সি কনজারভেশন ট্রাস্ট’ এই প্রতিযোগিতার সূচনা করে। অন্যান্য প্রতিযোগীদের মধ্যে ছিল – রহস্যময় লম্বা পাখাযুক্ত ঈল, বামন পাইপহর্স, সংকটাপন্ন কাদা-মাছ, হাঙ্গর এবং বিভিন্ন ধরনের রে মাছ।
কনরাড কুর্তা আরও জানান, “আমাদের এখানে বিভিন্ন প্রকারের স্থানীয় সামুদ্রিক ও স্বাদু পানির মাছ রয়েছে। এদের মধ্যে প্রায় ৮৫ শতাংশই বিপন্ন।” এই ধরনের প্রতিযোগিতা মানুষকে জলজ প্রাণীর প্রতি আগ্রহী করে তোলে এবং তাদের সংরক্ষণে উৎসাহিত করে।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান