যুক্তরাজ্যের একটি বৃহৎ পানি সরবরাহকারী কোম্পানি, ‘থেমস ওয়াটার’-এর আর্থিক সংকট এবং অব্যবস্থাপনার চিত্র নিয়ে সম্প্রতি আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। বিবিসির একটি তথ্যচিত্রের মাধ্যমে এই সংকটের গভীরতা সম্পর্কে জানা গেছে, যা বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ কিছু শিক্ষা বহন করে।
তথ্যচিত্রটি থেকে জানা যায়, কোম্পানিটি বর্তমানে ১৫ বিলিয়ন পাউন্ড (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ২ লাখ কোটি টাকার বেশি) ঋণে জর্জরিত। একদিকে যেমন তাদের বার্ষিক মুনাফা ১৪০ মিলিয়ন পাউন্ড (প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা), অন্যদিকে পানির প্ল্যান্টগুলোতে ত্রুটি দেখা দেওয়ায় নদীর পানিতে বর্জ্য মিশে পরিবেশ দূষিত হচ্ছে।
কোম্পানিটি তাদের গ্রাহকদের বিল ৫৩ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে, যা নিয়ন্ত্রক সংস্থা ‘অফওয়াট’-এর অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে।
বিশ্লেষকদের মতে, থেমস ওয়াটারের এই সংকটের মূল কারণ হল দীর্ঘদিনের অব্যবস্থাপনা। ২০০৬ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে কোম্পানিটি প্রায় ২৭০ কোটি পাউন্ড (প্রায় ৩৬ হাজার কোটি টাকা) লভ্যাংশ হিসেবে বিতরণ করেছে, যার ফলে তাদের ঋণের বোঝা আরও বাড়ে।
এছাড়া, অবকাঠামোর দুর্বলতা এবং কর্মীদের অভাবও এই সংকটের কারণ।
তথ্যচিত্রে উঠে আসা কর্মীদের ভাষ্য অনুযায়ী, তারা সীমিত জনবল ও সুযোগ-সুবিধা নিয়ে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। পুরনো কর্মীরা দীর্ঘদিন ধরে এই সমস্যার সঙ্গে লড়ছেন, কিন্তু কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে পর্যাপ্ত সহযোগিতা পাচ্ছেন না।
এই সংকট থেকে উত্তরণের জন্য কোম্পানির নতুন কিছু কর্মকর্তা চেষ্টা চালাচ্ছেন। তাদের মধ্যে রয়েছেন ওয়েস্টওয়াটার ও বায়ো রিসোর্সেস ডিরেক্টর টেসা ফায়ার্স এবং চিফ অপারেটিং অফিসার এস্থার শার্পলস।
তারা সমস্যাগুলো সমাধানে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ এবং এর জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে প্রস্তুত। তবে তাদের পর্যাপ্ত সমর্থন ও অর্থের অভাব রয়েছে।
থেমস ওয়াটারের এই সংকট বাংলাদেশের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টান্ত। আমাদের দেশেও পানি সরবরাহ ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনার দুর্বলতা রয়েছে। এখানেও পুরনো অবকাঠামো এবং অপর্যাপ্ত ব্যবস্থাপনার কারণে প্রায়ই বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়।
তাই, থেমস ওয়াটারের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে আমাদের দেশেও পানি সরবরাহ ব্যবস্থাপনায় আরও বেশি মনোযোগ দেওয়া প্রয়োজন। এছাড়া, পরিবেশ সুরক্ষায় কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া এবং জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা জরুরি।
তথ্যসূত্র: বিবিসি