বর্তমানে, সঞ্চয় এবং বিনিয়োগের গুরুত্ব সারা বিশ্বেই বাড়ছে, এবং আমাদের দেশেও এর চাহিদা বাড়ছে দিন দিন। উন্নত দেশগুলোতে নাগরিকদের জন্য বিভিন্ন ধরনের সুযোগ থাকে, যার মাধ্যমে তারা তাদের অর্থ নিরাপদে জমা রাখতে পারে এবং ট্যাক্স বাঁচিয়ে ভালো রিটার্নও পেতে পারে।
এই ধরনের একটি ধারণা হলো, যুক্তরাজ্যের ‘আইএসএ’ (ISA – Individual Savings Account)। যদিও এটি সরাসরি বাংলাদেশের জন্য প্রযোজ্য নয়, তবে এর ধারণা থেকে আমরা অনেক কিছু শিখতে পারি।
আসুন, ‘আইএসএ’-র ধারণা থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে সঞ্চয় এবং বিনিয়োগের কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আলোচনা করি:
১. হিসাব করুন আপনার সঞ্চয়: বছরের শুরুতে আপনার কত টাকা জমা আছে, এবং আপনি কত টাকা জমা করতে চান, তার একটি হিসাব রাখা প্রয়োজন। একটি বাজেট তৈরি করুন, যেখানে আপনার আয় ও ব্যয়ের একটি বিস্তারিত চিত্র থাকবে।
এতে আপনি বুঝতে পারবেন, প্রতি মাসে আপনি কত টাকা সঞ্চয় করতে পারবেন।
২. বিভিন্ন ধরনের সঞ্চয় স্কিম: বাংলাদেশে বিভিন্ন ধরনের সঞ্চয় স্কিম প্রচলিত আছে, যেমন – ব্যাংক-এ স্থায়ী আমানত (Fixed Deposit), সঞ্চয় ব্যাংক হিসাব, বিভিন্ন সরকারি সঞ্চয় প্রকল্প (যেমন- জাতীয় সঞ্চয়পত্র) এবং বীমা প্রকল্প ইত্যাদি।
আপনার প্রয়োজন ও ঝুঁকির নেওয়ার ক্ষমতার ওপর ভিত্তি করে, এই স্কিমগুলো থেকে নির্বাচন করতে পারেন।
৩. ঝুঁকি ও রিটার্নের সম্পর্ক: সঞ্চয় এবং বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ঝুঁকি এবং রিটার্নের বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সাধারণত, যে বিনিয়োগে ঝুঁকি বেশি, সেখানে রিটার্নের সম্ভাবনাও বেশি থাকে।
আবার, কম ঝুঁকিপূর্ণ বিনিয়োগে রিটার্ন কম হতে পারে। তাই, আপনার আর্থিক লক্ষ্য এবং ঝুঁকির ক্ষমতা বিবেচনা করে বিনিয়োগ নির্বাচন করা উচিত।
৪. ট্যাক্স সুবিধা: বিভিন্ন সঞ্চয় প্রকল্পে ট্যাক্স সুবিধা পাওয়া যায়। উদাহরণস্বরূপ, জীবন বীমা অথবা কিছু সরকারি সঞ্চয় প্রকল্পে বিনিয়োগ করলে, কর ছাড় পাওয়া যায়।
এই সুবিধাগুলো সম্পর্কে জেনে রাখা ভালো।
৫. বাজারের সেরা অফারগুলো দেখুন: বিভিন্ন ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান সময়ে সময়ে আকর্ষণীয় অফার নিয়ে আসে। যেমন, ফিক্সড ডিপোজিটের ওপর আকর্ষণীয় সুদের হার, অথবা বিশেষ স্কিমে বোনাস ইত্যাদি।
এই অফারগুলো সম্পর্কে নিয়মিত খোঁজখবর রাখা দরকার। অনলাইনে বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইট এবং সংবাদপত্রে প্রকাশিত খবর থেকে এই তথ্যগুলো পাওয়া যেতে পারে।
৬. দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা: সঞ্চয় এবং বিনিয়োগ একটি দীর্ঘমেয়াদী প্রক্রিয়া। স্বল্পমেয়াদে হয়তো তেমন লাভ নাও হতে পারে, কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে নিয়মিত বিনিয়োগ আপনাকে ভালো রিটার্ন এনে দিতে পারে।
তাই, একটি দীর্ঘমেয়াদী আর্থিক পরিকল্পনা তৈরি করা উচিত।
৭. আর্থিক পরামর্শকের সাহায্য নিন: যদি বিনিয়োগের বিষয়ে আপনার কোনো দ্বিধা থাকে, তাহলে একজন অভিজ্ঞ আর্থিক পরামর্শকের সাহায্য নিতে পারেন।
একজন ভালো পরামর্শক আপনার আর্থিক পরিস্থিতি মূল্যায়ন করে, আপনার জন্য সঠিক বিনিয়োগ পরিকল্পনা তৈরি করতে পারেন।
উপসংহারে বলা যায়, যুক্তরাজ্যের ‘আইএসএ’-র ধারণা আমাদের দেশের জন্য সরাসরি প্রযোজ্য না হলেও, এর থেকে সঞ্চয় ও বিনিয়োগের গুরুত্ব সম্পর্কে অনেক কিছু শেখার আছে।
নিয়মিত সঞ্চয় করা, বিভিন্ন স্কিমের সুবিধাগুলো জানা এবং একটি সুপরিকল্পিত আর্থিক জীবন গড়া – এই বিষয়গুলোর ওপর গুরুত্ব দিয়ে আমরা আমাদের ভবিষ্যৎ আরও সুরক্ষিত করতে পারি।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান