নারীদের খেলাধুলায় বাড়ছে আগ্রহ, বাড়ছে রাজস্ব আয়ের সম্ভাবনা।
বিশ্বজুড়ে নারীদের খেলাধুলা এখন দ্রুত গতিতে জনপ্রিয় হচ্ছে। সম্প্রতি ডিলয়েট-এর এক গবেষণা প্রতিবেদনে জানা গেছে, ২০২৫ সাল নাগাদ এই খাতে ২.৩৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার (প্রায় ২৫,৬০০ কোটি টাকা) আয়ের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। যা আগেকার পূর্বাভাসের চেয়ে অনেক বেশি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুধু বাস্কেটবল থেকেই ২০২৫ সালে ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার (প্রায় ১১,০০০ কোটি টাকা) এর বেশি রাজস্ব আসতে পারে। উল্লেখ্য, বাস্কেটবল বর্তমানে নারী ফুটবলের চেয়েও বেশি রাজস্ব আয়ের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।
ডিলয়েটের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে নারীদের খেলাধুলা থেকে সম্মিলিতভাবে ১ বিলিয়ন ডলারের বেশি আয় হয়েছে, যা ২০২৪ সালের শেষ নাগাদ বেড়ে ১.৮৮ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। এই হিসাবে, গত চার বছরে এই খাতে আয় বেড়েছে প্রায় ২৪০ শতাংশ।
তবে, একদিকে যখন নারীদের খেলাধুলায় আয়ের সম্ভাবনা বাড়ছে, তখন বিশ্ব ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থা ফিফা’র (FIFA) এক প্রতিবেদনে নারী ফুটবল ক্লাব ও লিগগুলোর আর্থিক চ্যালেঞ্জগুলো তুলে ধরা হয়েছে। ফিফার জরিপ অনুযায়ী, বিশ্বের ১০১টি অঞ্চলের ৬৬৯টি ক্লাবের নারী ফুটবল খেলোয়াড়দের গড় বেতন মাত্র ১০,৯০০ মার্কিন ডলার (প্রায় ১২ লক্ষ টাকা)।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, শীর্ষ ২৪টি অঞ্চলের লিগগুলোর গড় পরিচালন ব্যয়, গড় রাজস্ব আয়ের চেয়ে ৭১.১% বেশি। ফিফা’র তালিকায় থাকা ক্লাবগুলোর মধ্যে ৬৭ শতাংশ “টায়ার ওয়ান” ক্লাবের ক্ষতির সম্মুখীন হওয়ারও খবর পাওয়া গেছে।
ফিফার মতে, খেলাটি এখনো “স্টার্ট-আপ ব্যবসার” পর্যায়ে রয়েছে। খেলোয়াড়দের গড় বেতন কম থাকার পাশাপাশি ম্যাচ-ডে’র রাজস্বও কম, যেখানে টিকিটের গড় মূল্য ৯.৩০ মার্কিন ডলার (প্রায় ১,০০০ টাকা)।
ডিলয়েটের গবেষণা জানাচ্ছে, বিশ্বজুড়ে নারীদের খেলাধুলায় বাণিজ্যিক পৃষ্ঠপোষকতা বাড়ছে, যা নিঃসন্দেহে একটি ইতিবাচক দিক। ডিলয়েট স্পোর্টস বিজনেস গ্রুপের একজন প্রতিনিধি জেনিফার হ্যাসকেল জানিয়েছেন, “আমরা বিশ্বব্যাপী নারীদের খেলাধুলার বাজারে বিশাল প্রবৃদ্ধি দেখছি, যা প্রত্যাশা ছাড়িয়ে যাচ্ছে।”
হ্যাসকেল আরও জানান, “বাণিজ্যিকভাবে এখানে প্রচুর সুযোগ রয়েছে, কারণ আমরা জানি নারী খেলোয়াড়রা তাদের সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টে ভক্তদের সঙ্গে বেশি যুক্ত হন। খেলাধুলায় এমন অনেক ব্র্যান্ড আসছে যাদের খেলাধুলার সঙ্গে সরাসরি কোনো সম্পর্ক নেই, কিন্তু তারা নারীদের খেলাধুলার সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে চাইছে।”
ডিলয়েটের পূর্বাভাসে দেখা যাচ্ছে, বাণিজ্যিক আয় সম্প্রচার থেকে পাওয়া আয়ের চেয়ে অনেক বেশি। হ্যাসকেল এর ব্যাখ্যা করে বলেন, “আমরা দেখছি আগামী কয়েক বছরে নারীদের খেলাধুলার আয়ের প্রধান উৎস হতে যাচ্ছে বাণিজ্যিক কার্যক্রম, যা পুরুষদের খেলাধুলার থেকে ভিন্ন। কারণ পুরুষদের খেলার আয়ের বড় অংশ আসে সম্প্রচার থেকে।”
ভবিষ্যতে নারী ফুটবল আবারও বাস্কেটবলকে ছাড়িয়ে যাবে বলে মনে করেন হ্যাসকেল। এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, “নারী ফুটবলের সম্পদ অনেক বেশি এবং বিশ্বজুড়ে নারী ফুটবলের পেশাদারিত্বের যে প্রক্রিয়া চলছে, তা রাজস্ব বৃদ্ধিতে সহায়তা করবে।”
ফিফার প্রতিবেদনে নারী কোচিংয়ের ক্ষেত্রে নারী কর্মকর্তাদের সংখ্যা কম থাকার বিষয়টিও উল্লেখ করা হয়েছে। বর্তমানে, নারী ফুটবল ক্লাবগুলোতে প্রধান কোচের পদে নারীদের সংখ্যা মাত্র ২২ শতাংশ।
ফিফার প্রধান ফুটবল কর্মকর্তা জিল এলিসের মতে, “আমরা রাতারাতি এই সংখ্যা বাড়াতে না পারলেও, তথ্য বিশ্লেষণ করে বুঝতে পারছি কোথায় আমাদের বিনিয়োগ করতে হবে এবং কিভাবে নারী কোচিং উন্নয়ন প্রোগ্রাম তৈরি করে নারীদের জন্য আরও সুযোগ তৈরি করা যায়।”
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান