আতঙ্কের খবর! খাবার নষ্টের বিরুদ্ধে লড়ছেন এক তরুণী, যা জানা জরুরি!

বর্তমানে বিশ্বে খাদ্য অপচয় একটি গুরুতর সমস্যা, যা পরিবেশের উপর মারাত্মক প্রভাব ফেলে। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (FAO) মতে, উৎপাদিত খাদ্যের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ, যা প্রায় ১৩০ কোটি টন, প্রতি বছর নষ্ট হয়। এই বিপুল পরিমাণ খাদ্য নষ্ট হওয়ার কারণে গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গত হয়, যা জলবায়ু পরিবর্তনের অন্যতম প্রধান কারণ।

খাদ্য অপচয় শুধু পরিবেশের জন্যই ক্ষতিকর নয়, বরং এটি খাদ্য নিরাপত্তা এবং অর্থনৈতিক ক্ষেত্রেও উদ্বেগের কারণ। উন্নয়নশীল দেশগুলোতে যেখানে দারিদ্র্য একটি বড় সমস্যা, সেখানে খাদ্য অপচয় একটি বিরাট চ্যালেঞ্জ।

এই প্রেক্ষাপটে, খাদ্য অপচয় রোধে কাজ করা একজন উদ্যোক্তা হলেন লুসি বাশ (Lucie Basch)। তিনি ‘টু গুড টু গো’ (Too Good To Go) নামে একটি অ্যাপ তৈরি করেছেন, যা উদ্বৃত্ত খাবার বিক্রি করে খাদ্য অপচয় কমাতে সাহায্য করে।

বাশ যখন নেসলে (Nestlé) কোম্পানিতে কাজ করতেন, তখন তার মনে হতো এত খাবার নষ্ট হয়, অথচ কত মানুষ খাদ্য সংকটে ভোগে। তাই তিনি এই সমস্যা সমাধানে উদ্যোগী হন।

২০১৬ সালে, বাশ কোনো প্রযুক্তিগত জ্ঞান, বিপণন অভিজ্ঞতা বা পর্যাপ্ত পুঁজি ছাড়াই এই অ্যাপ তৈরির কাজ শুরু করেন। প্রথমে তিনি ডেনমার্কে যান এবং সেখানকার কয়েকজন উদ্যোক্তার সঙ্গে মিলিত হন, যাদের প্রোগ্রামিং জ্ঞান ছিল।

তাদের সহায়তায় খুব অল্প সময়েই ‘টু গুড টু গো’ অ্যাপ তৈরি হয়। এই অ্যাপের মাধ্যমে রেস্টুরেন্ট, বেকারি এবং মুদি দোকানগুলো তাদের উদ্বৃত্ত খাবার কম দামে বিক্রি করতে পারে।

বর্তমানে ‘টু গুড টু গো’ বিশ্বের বৃহত্তম খাদ্য অপচয় রোধকারী প্ল্যাটফর্ম, যা ১৯টি দেশে সক্রিয় রয়েছে। এর ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১০০ মিলিয়নের বেশি।

এই অ্যাপের মূল আকর্ষণ হলো ‘সারপ্রাইজ ব্যাগ’ (Surprise Bags)। গ্রাহকরা একটি নির্দিষ্ট মূল্যে এই ব্যাগগুলো কিনতে পারেন, যেখানে বিভিন্ন ধরনের উদ্বৃত্ত খাবার থাকে। সাধারণত খাবারের মূল দামের চেয়ে অনেক কম দামে এই ব্যাগগুলো পাওয়া যায়।

শুধু খাবার বিক্রি করাই নয়, ‘টু গুড টু গো’ এখন খাদ্য ব্যবসায়ীদের জন্য বর্জ্য ব্যবস্থাপনার পদ্ধতি তৈরি করছে এবং ভোক্তাদের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে কাজ করছে।

লুসি বাশ মনে করেন, দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার মানসিকতাই তাদের সাফল্যের মূল চাবিকাঠি ছিল। তিনি বলেন, “আমরা দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার দিকে না তাকিয়ে প্রতিদিন আগের দিনের চেয়ে বেশি খাবার বাঁচানোর চেষ্টা করেছি।”

বাংলাদেশেও খাদ্য অপচয় একটি গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অতিরিক্ত খাবার তৈরি হয়, যা পরে ফেলে দেওয়া হয়। এছাড়া, বাজারে অনেক সবজি ও ফল নষ্ট হয়, যা দরিদ্র মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা আরও কঠিন করে তোলে।

‘টু গুড টু গো’র মতো উদ্যোগ বাংলাদেশে চালু করা গেলে খাদ্য অপচয় কমানো সম্ভব হবে এবং এটি পরিবেশ ও অর্থনীতির জন্য উপকারী হবে।

তথ্য সূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *