বিষণ্ণতা থেকে মুক্তি! অনুপ্রেরণা নিয়ে আসছেন ইয়াশা শাহিদি

বর্তমান যুগে মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে আলোচনা বাড়ছে, বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে। এই পরিস্থিতিতে, অভিনেত্রী এবং প্রযোজক ইয়ারা শাহেদি তাঁর নতুন একটি পডকাস্ট নিয়ে এসেছেন, যা মানুষের মনে আশার আলো জ্বালাতে সাহায্য করবে।

‘দ্য অপটিমিস্ট প্রজেক্ট’ নামের এই পডকাস্টে শাহেদি জীবনের অর্থ খোঁজা এবং একটি সুন্দর ভবিষ্যৎ গড়ার উপায় নিয়ে কথা বলেন।

২৫ বছর বয়সী ইয়ারা শাহেদি, যিনি ‘ব্ল্যাক-ইশ’ (Black-ish) এবং ‘গ্রোন-ইশ’ (Grown-ish) এর মতো জনপ্রিয় টিভি শো-এর জন্য পরিচিত, তাঁর পডকাস্টের মাধ্যমে সমাজের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন।

আত্মহত্যার ক্রমবর্ধমান হার এবং উদ্বেগ সৃষ্টিকারী খবরের ভিড়ে, শাহেদীর এই উদ্যোগ বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। তিনি মনে করেন, এখন সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন নিজের প্রতি বিশ্বাস রাখা।

তাঁর মতে, “আমার কাছে, আশাবাদ মানে নিজের উপর বিশ্বাস। আমি বিশ্বাস করি, আমার সামনে যা আসবে, তা মোকাবেলা করার ক্ষমতা আমার আছে।”

শাহেদির বেড়ে ওঠা ছিল অনুপ্রেরণামূলক সব মানুষের মাঝে।

তাঁর বাবা আফশিন শাহেদি, একজন ইরানি অভিবাসী এবং বিখ্যাত চলচ্চিত্রগ্রাহক (এক সময় পপ তারকা প্রিন্সের ফটোগ্রাফার ছিলেন)। তাঁর কাজিন র‍্যাপার নাস (Nas)।

পরিবারের এই সদস্যরা এবং আরও অনেক গুণী মানুষের সঙ্গে আলোচনা করে তিনি সবসময় নতুন কিছু শিখতেন।

মা কেরি শাহেদির সঙ্গে মিলে শাহেদি একটি মিডিয়া কোম্পানি চালান, যার নাম সেভেন্থ সান প্রোডাকশনস (7th Sun Productions)। তাঁদের ইচ্ছা ছিল, এই আলোচনার ধারা আরও বেশি মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া।

শাহেদির মা বলেন, “আমরা ভাগ্যবান যে এমন আলোচনা করার সুযোগ পাচ্ছি। অন্যদেরও সেই সুযোগ করে দিতে চেয়েছি।”

গত বছর শুরু হওয়া ‘দ্য অপটিমিস্ট প্রজেক্ট’-এ ইতোমধ্যে ‘স্যাটারডে নাইট লাইভ’-এর ইগো নওয়োদিম, টনি পুরস্কার বিজয়ী অভিনেতা কোর্টনি বি. ভান্স এবং ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক লরি স্যান্টোসের মতো খ্যাতিমান ব্যক্তিরা অংশ নিয়েছেন।

লরি স্যান্টোসের অনলাইন কোর্স ‘দ্য সায়েন্স অফ ওয়েল-বিইং’ (The Science of Well-Being) ইয়েলের সবচেয়ে জনপ্রিয় কোর্সগুলির মধ্যে অন্যতম।

ছোটবেলায় শাহেদির পরিবারে অডিওবুক ও রেডিও শোনার চল ছিল, তাই পডকাস্টিং তাঁর কাছে খুবই স্বাভাবিক একটি মাধ্যম।

তিনি মনে করেন, পডকাস্ট একটি অংশগ্রহণমূলক মাধ্যম, যেখানে শ্রোতা এবং উপস্থাপক উভয়েরই সক্রিয় থাকতে হয়।

শাহেদি বলেন, “এখানে শ্রোতাদের কল্পনাশক্তির উপর নির্ভর করতে হয়, কারণ দৃশ্যমান কিছু থাকে না।

একজন উপস্থাপক হিসেবে, আমি এমন কিছু তৈরি করার চেষ্টা করি, যা শ্রোতাদের আকৃষ্ট করতে পারে।”

নিজের অভিনয় জীবনের মাধ্যমে শাহেদি তরুণ প্রজন্মের কাছে একজন পরিচিত মুখ।

তিনি সবসময় সামাজিক এবং রাজনৈতিক বিষয়গুলোতে কথা বলতে আগ্রহী।

বিশেষ করে তরুণদের মধ্যে ভোট দেওয়ার আগ্রহ বাড়ানো এবং বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, প্রকৌশল ও গণিত (সংক্ষেপে, এস.টি.ই.এম বা STEM) বিষয়ে ক্যারিয়ার গড়ার জন্য তিনি নিয়মিতভাবে উৎসাহিত করেন।

শাহেদি বলেন, “আমরা যখন ভবিষ্যৎ পৃথিবীর জন্য প্রয়োজনীয় কাজগুলোর কথা বলি, তখন এস.টি.ই.এম ক্ষেত্রগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

আমরা চাই, এই স্থানগুলোতে নেতৃত্ব দিক আমাদের তরুণ প্রজন্ম।”

বর্তমানে, শাহেদি শ্রোতাদের জীবনের গতি কমানোর এবং গভীর চিন্তাভাবনা করার আহ্বান জানাচ্ছেন।

তিনি মনে করেন, জীবনের গুণগত মান নিয়ে কথা বলার এখনই সময়।

তরুণ প্রজন্মের জীবনযাত্রার চাপ উল্লেখ করে তিনি বলেন, “বেঁচে থাকার জন্য যখন অনেক বেশি ভাবতে হয়, তখন জীবন কেন, কীভাবে আরও সুন্দর করা যায়, সে সম্পর্কে চিন্তা করার সময় পাওয়া যায় না।”

শাহেদি স্বীকার করেন, বর্তমান সময়ে তরুণ প্রজন্মের জন্য অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে, তবে তিনি বিশ্বাস করেন, এই প্রজন্মের মধ্যে পরিবর্তনের সম্ভাবনা অনেক বেশি।

তিনি বলেন, “তরুণরা সবসময় কঠিন পরিস্থিতিতে জেগে ওঠে এবং আমাদের গভীর উদ্বেগের কারণগুলোর সমাধানে এগিয়ে আসে।

আমাদের প্রত্যেকের কণ্ঠস্বর প্রয়োজন।”

তথ্য সূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *