প্রকৃতির দিকে তাকিয়ে নতুন আইডিয়া, চমকে দিলেন শু ইয়াং!

প্রকৃতির জগৎ থেকে অনুপ্রেরণা নিয়ে প্রকৌশলবিদ্যার জটিল সমস্যার সমাধানে কাজ করছেন অধ্যাপক শু ইয়াং। পেনসিলভানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের এই রসায়ন ও বায়োমলিকিউলার প্রকৌশলী বায়োমিমিক্রি নামক এক পদ্ধতির মাধ্যমে প্রকৃতির গঠন ও বৈশিষ্ট্যকে কাজে লাগিয়ে টেকসই সমাধান খুঁজে বের করছেন।

বায়োমিমিক্রি হলো প্রকৃতির কৌশল অনুকরণ করে নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবন করা।

অধ্যাপক ইয়াং-এর কাজের ক্ষেত্র বেশ বিস্তৃত। একবার তিনি এমন একটি ‘বিল্ডিং এনভেলপ’ তৈরি করতে চেয়েছিলেন যা সূর্যের আলো প্রতিফলিত করতে পারবে এবং বৃষ্টির পানি সংগ্রহ করে ভবনকে ঠান্ডা রাখতে সহায়তা করবে।

এর জন্য তিনি টর্নেডোর ঘূর্ণন থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে ছিদ্রযুক্ত জানালা তৈরির কৌশল বের করেন। আফ্রিকার হাতির চামড়ার খাঁজকাটা ও শুকনো ত্বক থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে তিনি এমন এক ধরনের প্লাস্টার তৈরি করেছেন যা তীব্র গরমের সময় ভবনকে শীতল রাখতে পারবে।

এছাড়াও, শামুকের শরীর নিঃসৃত আঠার গঠন থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে তিনি এমন একটি আঠালো পদার্থ তৈরি করেছেন যা দেয়ালের তাকে মজবুতভাবে আটকে রাখতে সক্ষম, আবার প্রয়োজন অনুযায়ী সহজেই তুলে ফেলাও যাবে।

ছোটবেলায় চীনের দারিদ্র্যের মধ্যে বেড়ে ওঠা শু ইয়াং প্রকৃতির কাছাকাছি আসার সুযোগ পেয়েছেন বেশি। তার বাবা ছিলেন ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক এবং মা ছিলেন শরীরচর্চা শিক্ষক।

প্রকৃতি থেকে পাওয়া ধারণাগুলোর প্রয়োগ ঘটিয়ে অধ্যাপক ইয়াং বর্তমানে বিভিন্ন সমস্যার সমাধানে কাজ করছেন।

অধ্যাপক ইয়াং মনে করেন, উদ্ভাবনী ধারণার ক্ষেত্রে দলবদ্ধভাবে কাজ করাটা খুব জরুরি। তাই তিনি জীববিজ্ঞানী, পদার্থবিদ, এবং টেক্সটাইল প্রকৌশলীদের সঙ্গে কাজ করেন।

পেনসিলভানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ এক্ষেত্রে তাকে সাহায্য করে। কারণ, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগ—চিকিৎসা বিজ্ঞান, চারুকলা, ডিজাইন স্কুল— হাঁটা দূরত্বের মধ্যে অবস্থিত।

জ্যামিতি ভালোবাসেন এমন একজন সহকর্মীর কাছ থেকে তিনি গাণিতিক তত্ত্ব এবং বাস্তব পরীক্ষার মধ্যে সম্পর্ক স্থাপন করতে শিখেছেন।

স্থপতিদের সঙ্গে কাজ করে তিনি বিল্ডিং নির্মাণের জন্য কম খরচে জ্যামিতিক আকার তৈরি করেছেন। এছাড়াও, সার্জনদের সঙ্গে পরামর্শ করে স্তন প্রতিস্থাপনের জন্য ছোট আকারের একটি আবরণ তৈরি করেছেন।

বর্তমানে তিনি শিশুদের স্নায়ু শল্যবিদদের সঙ্গে কাজ করছেন, সেলাই বা সুপারগ্লুর বিকল্প হিসেবে তার তৈরি আঠালো পদার্থটি ব্যবহারের জন্য।

সম্প্রতি, যুক্তরাষ্ট্রের জ্বালানি বিভাগের সহযোগিতায় অধ্যাপক ইয়াং থ্রিডি প্রিন্টেড কংক্রিট তৈরি করেছেন। এই প্রযুক্তি কংক্রিট ও সিমেন্ট তৈরির পরিবেশগত প্রভাব উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস করে।

এই কংক্রিট তৈরির জন্য তিনি মৌচাকের মতো একটি কাঠামো ব্যবহার করেন, যা কার্বন ডাই অক্সাইড শোষণ করতে সক্ষম।

তথ্য সূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *