বিয়র্কের পরিবেশ সচেতনতা: বাস্তবের মাটিতে দাঁড়িয়ে সুরের জাদু!

আইসল্যান্ডের শিল্পী এবং পরিবেশ আন্দোলন কর্মী, বিয়র্ক, তাঁর ব্যতিক্রমী সঙ্গীত প্রতিভার মতোই পরিবেশ রক্ষার আন্দোলনেও এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশের মতো দেশগুলোতে যখন পরিবেশগত সংকট বাড়ছে, তখন বিয়র্কের এই নিবেদিত প্রাণ কার্যক্রম আমাদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

বিয়র্কের কাজের ধরন সবসময়ই কিছুটা ভিন্ন। তিনি স্বপ্ন দেখেন এবং সেই স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে চান। তাঁর পরিবেশ বিষয়ক কার্যক্রমও এর ব্যতিক্রম নয়।

তিনি এমন কিছু লক্ষ্য নির্ধারণ করেন যা অর্জন করা সম্ভব। উদাহরণস্বরূপ, তিনি তাঁর জন্মভূমি আইসল্যান্ডে বাণিজ্যিক সালমন মাছের খামারের বিরুদ্ধে লড়াই করছেন। এছাড়াও, ফ্রান্সের সংরক্ষিত জলসীমায় তলদেশীয় মাছ ধরা নিষিদ্ধ করার জন্য ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রঁর কাছে আবেদন করার জন্য তরুণ পরিবেশ কর্মীদের উৎসাহিত করছেন।

বিয়র্কের পরিবেশ সচেতনতার পেছনে রয়েছে তাঁর শৈশব এবং আইসল্যান্ডের প্রতি গভীর ভালোবাসা। তাঁর মা ছিলেন একজন দৃঢ়চেতা নারী, যিনি পরিবেশ রক্ষার জন্য বিভিন্ন আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন।

২০০২ সালে, একটি অ্যালুমিনিয়াম কারখানা ও বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের প্রতিবাদে তিনি ১৮ দিন অনশন করেছিলেন। মায়ের এই আদর্শ বিয়র্কের মনে গভীর প্রভাব ফেলেছিল।

তিনি মনে করেন, পরিবেশ রক্ষার বিষয়টি শুধু একটি আন্দোলনের অংশ নয়, বরং তাঁর শিল্পী জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ।

বিয়র্ক সবসময় চেষ্টা করেন এমন কিছু করতে যা বাস্তবসম্মত এবং যা পরিবর্তনের সুযোগ তৈরি করতে পারে। তিনি মনে করেন, প্যারিস জলবায়ু চুক্তির লক্ষ্যগুলো কঠিন হলেও, মানুষের পক্ষে চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া সম্ভব।

তিনি শুধু একটি প্রচারণার মুখ হয়ে থাকতে চান না, বরং শেষ পর্যন্ত এর সঙ্গে যুক্ত থাকতে চান।

পরিবেশ রক্ষার জন্য বিয়র্ক তাঁর সঙ্গীতকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেন। তিনি “ওরাল” শিরোনামের একটি গান তৈরি করেছেন, যেখানে স্প্যানিশ শিল্পী রোসালিয়ার কণ্ঠ দিয়েছেন।

এই গানের মাধ্যমে সংগৃহীত অর্থ সালমন মাছের খামারগুলোর বিরুদ্ধে চলমান মামলাগুলোতে সহায়তা করছে। তাঁর মতে, এটি একটি ম্যারাথন এবং তাঁরা আইনি লড়াইয়ে জয়ী হওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী।

বিয়র্কের পরিবেশ বিষয়ক কার্যক্রম শুধু আইসল্যান্ডের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। তিনি বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সম্মেলনেও তাঁর বক্তব্য তুলে ধরেন।

সম্প্রতি, প্যারিসের পম্পিদু সেন্টারে তিনি একটি পরিবেশ বিষয়ক ম্যানিফেস্টো স্থাপন করেছেন। তাঁর এই কাজে লুপ্তপ্রায় বা বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া প্রাণীদের শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে, যা প্রযুক্তির সহায়তায় তৈরি করা হয়েছে।

বিয়র্কের এই প্রচেষ্টা প্রমাণ করে যে, শিল্পী এবং সমাজের প্রত্যেক মানুষেরই পরিবেশ রক্ষার আন্দোলনে অবদান রাখা সম্ভব। তাঁর কাজের ধারা আমাদের জন্য একটি অনুপ্রেরণা হতে পারে, বিশেষ করে জলবায়ু পরিবর্তনের এই সংকটকালে।

তথ্য সূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *