পশ্চিম লন্ডনের এক ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের পর, এলাকার ক্ষত সারিয়ে তুলতে এক ব্যতিক্রমী উদ্যোগের জন্ম দিয়েছেন টায়শান হায়েডেন-স্মিথ। ২০১৭ সালের জুন মাসে ঘটে যাওয়া গ্রেনফেল টাওয়ারের অগ্নিকাণ্ডে ৭২ জন মানুষের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়, যা ছিল ব্রিটেনের ইতিহাসে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সবচেয়ে ভয়াবহ আবাসিক অগ্নিকাণ্ড।
এই ঘটনায় টায়শানের বন্ধু ও প্রতিবেশীরা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হন। ঘটনার অভিঘাতে পেশাদার ফুটবলার জীবন ত্যাগ করে তিনি ফিরে আসেন নিজের কমিউনিটিতে।
ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের দুঃখ দূর করতে এবং এলাকাটিকে পুনর্গঠিত করতে টায়শান তার মায়ের বাড়ির বাগানের অনুপ্রেরণা থেকে কাজ শুরু করেন। স্থানীয় একটি পরিত্যক্ত স্থানকে পরিষ্কার করে সেখানে ফুলের গাছ ও সবজির চারা রোপণ করেন তিনি।
এই কাজে এলাকার আরও অনেক মানুষ এগিয়ে আসেন। ওয়েস্টওয়ে নামের একটি হাইওয়ের নিচে, যেখানে একসময় মাদকাসক্ত ও আশ্রয়হীন মানুষের আনাগোনা ছিল, সেই স্থানটি “গ্রেনফেল গার্ডেন অফ পিস” নামে পরিচিতি লাভ করে।
এরপর, টায়শান ও তার বন্ধুরা মিলে আরও পাঁচটি পতিত জমিতে বাগান তৈরি করেন। বাগান করার এই ধারণা থেকে তিনি একটি অলাভজনক সংস্থা “গ্রো টু নো” প্রতিষ্ঠা করেন।
এই সংস্থার মূল উদ্দেশ্য হলো সুবিধাবঞ্চিত মানুষের জন্য সবুজ স্থান তৈরি করা এবং নতুন প্রজন্মের মধ্যে বাগান করার আগ্রহ তৈরি করা। টায়শান মনে করেন, “যদি আপনার বাগান করার সময় না থাকে? যদি আপনার সম্পদ না থাকে? তাহলে সমাজের একটি বিশাল অংশ এই সুযোগ থেকে বঞ্চিত হবে।”
“গ্রো টু নো” বিভিন্ন সময়ে সামাজিক ও ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটের ওপর ভিত্তি করে বাগান তৈরি করে থাকে। যেমন, তারা রয়্যাল হর্টিকালচারাল সোসাইটির ২০২২ সালের চেলসি ফ্লাওয়ার শো-তে উত্তর কেনসিংটনের একটি পুরনো ক্যারিবীয় রেস্টুরেন্ট “ম্যাঙ্গরোভ” এবং পুলিশের হয়রানির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানানো নয়জন কৃষ্ণাঙ্গ কর্মীর প্রতি উৎসর্গীকৃত একটি বাগান তৈরি করে।
এছাড়াও, ফ্যাশন ব্র্যান্ড গুচ্চির সঙ্গে collaboration করে তারা একটি কমিউনিটি গার্ডেন তৈরি করেছেন, যেখানে ১০,০০০ ফার্ন এবং গুল্ম রোপণ করা হয়। টায়শানের মতে, “তরুণ প্রজন্মের আগ্রহ রয়েছে এমন বিষয়গুলোর সঙ্গে আমাদের সংযোগ স্থাপন করতে হবে।
যদি নাইকি একটি প্রচারণা চালায় এবং প্রথম একশ জন যারা আসবে, তাদের ফুটবল বুট দেওয়া হয়, তাহলে আমি সবার আগে সেখানে যাব। প্রকৃতি, ফুল, বাগান ও খাদ্য নিরাপত্তার প্রতি একইভাবে আকর্ষণ তৈরি করতে হবে।”
টায়শান মনে করেন, বাগানে কাজ করার মাধ্যমে মানুষের মধ্যেকার বিভেদ দূর হয়। এই বাগানগুলো শুধু সবুজ স্থানই নয়, বরং একটি কমিউনিটি তৈরি এবং শোক কাটিয়ে ওঠারও মাধ্যম।
তথ্য সূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক