প্লাস্টিক আবর্জনা থেকে স্কুল তৈরি! কিভাবে সম্ভব?

প্লাস্টিক বর্জ্য থেকে স্কুলঘর তৈরির এক অভিনব ধারণা নিয়ে কাজ করছে কলম্বিয়ার একটি কোম্পানি। ‘কনসেপটোস প্লাস্টিকোস’ নামের এই প্রতিষ্ঠানটি বর্জ্য প্লাস্টিক পুনর্ব্যবহার করে তৈরি করছে ইটের মতো ব্লক, যা দিয়ে তৈরি হচ্ছে ভূমিকম্প প্রতিরোধী ও টেকসই স্কুল ভবন।

কোম্পানিটির প্রতিষ্ঠাতা অস্কার আন্দ্রেস মেনদেজ ও ইসাবেল ক্রিস্টিনা গামেজ-এর মতে, তাদের এই উদ্ভাবন একদিকে যেমন পরিবেশ সুরক্ষায় সহায়ক, তেমনই উন্নয়নশীল দেশগুলোতে স্কুল ও আবাসনের সংকট সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। তারা প্লাস্টিকের ব্যাগ, খাবারের প্যাকেট, শ্যাম্পুর বোতলসহ বিভিন্ন ধরনের বর্জ্য থেকে প্রায় ৯৫ শতাংশ প্লাস্টিক ব্যবহার করে এই ব্লকগুলো তৈরি করেন।

এরপর এই ব্লকগুলো জোড়া দিয়ে খুব সহজেই তৈরি করা যায় স্কুল, ঘর বা অন্য কোনো কাঠামো।

২০১০ সালে বোগোটাতে কোম্পানিটি চালু হওয়ার পর থেকে তারা তাদের প্রযুক্তিকে আরও উন্নত করেছে। তাদের তৈরি একটি আদর্শ দুই কক্ষের ঘর, যেখানে একটি বাথরুম, বসার ঘর, খাবার ঘর ও রান্নাঘর থাকে, তা তৈরি করতে প্রায় ৬ টন প্লাস্টিক পুনর্ব্যবহার করা যায়।

এতে খরচ হয় বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৪ থেকে ৭ লাখ টাকার মতো এবং এটি তৈরি করতে সময় লাগে মাত্র পাঁচ দিন।

শুধু তাই নয়, মেনদেজ জানান, তাদের তৈরি কাঠামো ভূমিকম্প ও অগ্নিরোধী এবং এর রক্ষণাবেক্ষণও সহজ। প্রতিটি ভবন অন্তত ২০০ বছর পর্যন্ত টিকে থাকতে পারে।

তাদের এই প্রকল্পের মূল লক্ষ্য হলো পরিবেশ রক্ষা করা এবং মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন করা।

শুরুতে, কনসেপটোস প্লাস্টিকোস কলম্বিয়ার বিভিন্ন বেসরকারি কোম্পানি ও একটি এনজিও’র সঙ্গে মিলে প্রায় ৫০টি স্কুল ও ঘর তৈরি করেছে। এরপর, ২০১৭ সালে আইভরি কোস্টে ইউনিসেফের প্রতিনিধি ডক্টর আবুবাকার কাম্পো তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন।

আইভরি কোস্টের পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থায় প্লাস্টিক জমে থাকার কারণে সেখানে ম্যালেরিয়া ও অন্যান্য রোগ ছড়ানোর আশঙ্কা দেখা দেয়। তাছাড়া, দেশটির অনেক গ্রামে মাটির তৈরি স্কুলগুলো বর্ষাকালে ক্ষতিগ্রস্ত হতো।

তাই, কাম্পো মেনদেজ ও গমেজকে দেশটির বৃহত্তম শহর আবিজানে আমন্ত্রণ জানান। সেখানে নারীদের কাছ থেকে সামান্য পারিশ্রমিকের বিনিময়ে ডাস্টবিন থেকে প্লাস্টিক কুড়ানোর দৃশ্য দেখে তারা অনুপ্রাণিত হন।

মেনদেজের মনে হয়েছিল, তাদের কাছে সমাধান আছে। শুধু ইট তৈরির প্রযুক্তিই নয়, একটি অর্থনৈতিক ব্যবস্থা তৈরিরও সম্ভাবনা রয়েছে, যা মানুষকে স্বাবলম্বী করতে পারে।

ইউনিসেফের সঙ্গে তাদের ৩ মিলিয়ন ডলারের একটি চুক্তি হয়, যার মাধ্যমে আবিজানে একটি নতুন কারখানা স্থাপন করা হয় এবং স্থানীয় নারীদের প্লাস্টিক সংগ্রহের জন্য কর্মী হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়।

এ পর্যন্ত, ৪,০০০ টনের বেশি প্লাস্টিক পুনর্ব্যবহার করে তারা ৫৫০টির বেশি শ্রেণীকক্ষ তৈরি করেছে। এই কাজে প্রচলিত পদ্ধতির চেয়ে প্রায় ৪০ শতাংশ কম খরচ হয়েছে।

এর ফলে একদিকে যেমন পরিবেশ দূষণ কমেছে, তেমনি উন্নতমানের স্কুল ভবন তৈরির মাধ্যমে শিক্ষার মানও বেড়েছে এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে।

বর্তমানে, মেনদেজ ও গমেজ ইথিওপিয়ায় একই ধরনের স্কুল তৈরির একটি প্রকল্পের বিষয়ে আলোচনা করছেন। এছাড়াও, তারা দক্ষিণ সুদানের শরণার্থী শিবিরগুলোতে শৌচাগার নির্মাণের পরিকল্পনা করছেন।

প্রযুক্তির প্রসারের জন্য, তারা তাদের নির্মাণ পদ্ধতির একটি ছোট সংস্করণ তৈরি করেছেন, যা একটি ৪০ ফুটের কন্টেইনারে পরিবহন করা সম্ভব।

কাম্পোর মতে, তাদের এই ধারণা শুধু সুন্দরই নয়, বরং অত্যন্ত উজ্জ্বলও।

তথ্য সূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *